ক্যাটাগরি

ঘোষণা ছাড়াই ট্রেন ধর্মঘটে ছয় ঘণ্টার দুর্ভোগ

পেনশন থেকে মাইলেজ ভাতা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির ডাকে ট্রেন ধর্মঘটের কারণে বুধবার সকাল ৬টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে কোনো স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন ছাড়েনি।

ফলে গন্তব্যে যেতে আসতে চট্টগ্রামের আমেনা বেগমের মত দেশের বিভিন্ন রেল স্টেশনের যাত্রীর বিপাকে পড়েন।

আমেনা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সকাল ৯টায় বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনে তার কিশোরগঞ্জ যাওয়ার কথা। মেয়ে জামাই সকাল সকাল তাকে স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে যান।

“সকাল ৮টা থেকে স্টেশনে বসে আছি। চট্টগ্রামে আমি কিছু চিনি না। তাই বাসায় ফিরতে পারছি না। মেয়ের জামাই আসবে বলেছে নিতে। সে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করব।”

সকালে চট্টগ্রাম স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, প্ল্যাটফর্মের লাইনগুলোতে খালি ট্রেন অলস দাঁড়িয়ে আছে। যাত্রীরা অপেক্ষায় রয়েছেন, যদি ধর্মঘট ওঠে- এই আশায়। 

চট্টগ্রাম থেকে সকাল ৭টায় ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেস, সকাল ১০টায় চট্টলা এক্সপ্রেস, ৮টা ৪৫ মিনিটে সিলেটগামী পাহাড়িকার ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল।

এ ছাড়া সকাল ৯টায় ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস, সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে চাঁদপুরগামী মেইল ট্রেন সাগরিকা এবং ৯টায় ঢাকাগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনও স্টেশন ছেড়ে যায়নি।

ঢাকায় রেল মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলনকারীরা বেলা ১২টার পর ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেন ছাড়ার বিষয়ে কোনো ঘোষণা না পাওয়ায় যাত্রীদের অপেক্ষায় থাকতে হয়।


রেলমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে ৬ ঘণ্টা পর ট্রেন ধর্মঘট প্রত্যাহার
 


কর্মীরা ধর্মঘটে, সারা দেশে ট্রেন বন্ধ
 

পূর্ব রেলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ইতি ধর জানান, যারা এখন যেতে চান না, তাদের টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

তবে এভাবে যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সুবর্ণ এক্সপ্রেসের যাত্রী আব্দুর রহমান বলেন, “আগে ঘোষণা দিলে তো বাসে করে চলে যেতাম।”

নির্ধারিত সময়ে ট্রেন ছাড়লে দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল রহমানের। ওই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও তার ট্রেন ছাড়েনি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ইলিয়াছ পারভেজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদের ছুটির আগে ক্লাস না থাকায় ময়মনসিংহে বাড়ি ফেরার জন্য বিজয় এক্সপ্রেসের টিকিট কেটেছিলাম। সেজন্য সকালে হল থেকে স্টেশনে আসি। কিন্তু এখানে এসে দেখি ট্রেন ছাড়বে না।”  

বিশ্ববিদ্যালয়ের জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রেদোয়ানা আফরীন মিমও বাড়ি যেতে স্টেশনে এসে ঝামেলায় পড়েন।

“ঈদের ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলাম। তাই বিজয় এক্সপ্রেসের টিকিট কেটেছি। কিন্তু স্টেশন এসে দেখি ট্রেন ছাড়ছে না “

ঘোষণা ছাড়াই ধর্মঘটের ডাক দিয়ে জনভোগান্তি তৈরি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থী।

“রোজার দিনে বাসে করে ক্যাম্পাস থেকে শহরে আসা অনেক কষ্টের। আগে থেকে ঘোষণা দিলে আসতাম না। এখন যে ফিরে যাব সেটাও পারছি না। শাটল ট্রেনও চলছে না। কিশোরগঞ্জের কোনো বাসও ছাড়ে না সকালে। এখন হলে ফিরব নাকি বাড়ি যাওয়ার জন্য ট্রেনের অপেক্ষায় থাকব জানি না।”

ধর্মঘট কাদের এবং কেন?

লোকো মাস্টার বা ট্রেন চালক, সহকারী চালক, ট্রেনের গার্ড ও টিকিট পরিদর্শকদের (টিটি) মত যে কর্মীরা নিয়মিত ট্রেন চলাচলের সঙ্গে যুক্ত, তাদের বলা হয় রানিং স্টাফ । বাংলাদেশ রেলওয়েতে রানিং স্টাফের ১৭৪২টি পদ থাকলেও বর্তমানে ১০১৩ জন কর্মরত।

এ ধরনের কর্মীরা দিনে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বা ১০০ মাইলের বেশি ট্রেন চালালে এক দিনের বেতনের সমান অর্থ রানিং ভাতা বা মাইলেজ হিসেবে পান। আর অবসরে গেলে সেই ভাতার ৭৫ শতাংশ যোগ করে তাদের পেনশন হিসাব করা হত আগে। বছরখানেক আগে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে মাইলেজ ও ৭৫ শতাংশের সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের আন্দোলন শুরু হয়।

রেলের রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ আন্দোলনে নামলে মাইলেজ পুর্বহাল হয়। পেনশন সুবিধা ‘পরে দেখা হবে’ বলে সে সময় আশ্বাস দিয়েছিল রেল কর্তৃপক্ষ। তা পূরণ না হওয়ায় সারাদেশে কর্মবিরতির ডাক দেয় এ সংগঠন।