ক্যাটাগরি

প্রতি জেলায় সিনেপ্লেক্স, উপজেলায় কালচারাল কমপ্লেক্স চান প্রধানমন্ত্রী

এই লক্ষ্যে সরকারের
এক হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের কথা তুলে ধরে প্রতিটি উপজেলায় ‘কালচারাল কমপ্লেক্স’
গড়ে তোলার লক্ষ্যের কথা বলেছেন তিনি।

বুধবার
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আট জেলায় নবনির্মিত শিল্পকলা একাডেমি ভবনের উদ্বোধন
করে এ বিষয়ে কথা বলেন সরকারপ্রধান।

মানুষের
বিনোদনের ‘একটি অবলম্বন প্রয়োজন’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, নতুন প্রযুক্তির আগমনেও অনেক
জায়গায় সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। তাই সেগুলো নতুন করে গড়ে তোলা প্রয়োজন।

“আমি মনে করি, আমাদের
প্রতিটি জেলায় এবং উপজেলায় আবার সিনেমা হলগুলো তৈরি করা উচিত।

“এবং সিনেমা হলের সাথে
শুধু সিনেমা হল না, সেই সাথে সিনেপ্লেক্স, অর্থাৎ সিনেমা হলের সাথে শপিংমলসহ সবকিছুই
করতে পারেন। পুরনো সিনেমা হলগুলো ভেঙে নতুনভাবে আবার তৈরি করে সেখানে মানুষের বিনোদনের
ব্যবস্থা করতে পারেন।”

সেজন্য বিশেষ বরাদ্দের
কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, পুরনোটি ভেঙে নতুন হল তৈরি করতে, কিংবা একেবারে নতুন করে বানাতে
চাইলে, দুই ক্ষেত্রেই টাকা দেওয়া হবে।

“আমাদের শিল্পের
বিকাশটা চতুর্মুখী হোক, সেটা চাই। চলচ্চিত্র শিল্পকে আরও উন্নতভাবে বাঁচিয়ে রাখা হোক।”

আর সব উপজেলায় কালচারাল
কমপ্লেক্স করার পরিকল্পনা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, “আমাদের লক্ষ্যটা হচ্ছে আমাদের
প্রতিটি উপজেলায় অর্থাৎ ৪৯৩টি উপজেলায়ই আমরা আমাদের কালচারাল কমপ্লেক্স গড়ে তুলব। প্রত্যেকটা
উপজেলা থেকেই যাতে আমাদের ছেলে মেয়েরা মেধা বিকাশের সুযোগ পায়। সেই ব্যবস্থাটাও আমরা
নিতে চাচ্ছি।”

পহেলা বৈশাখের আগের
দিন এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে ধর্মের সঙ্গে সংস্কৃতির ‘সংঘাত সৃষ্টি করতে
চায়’।

“এটা মোটেই সঠিক না।
… আমরা এটাই বলি, ধর্ম যার যার, উৎসব সকলের। কাজেই উৎসব
সকলে আমরা এক হয়ে পালন করব।”

পহেলা বৈশাখ পালন করতে
গিয়ে এক সময় বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে পহেলা বৈশাখ
আমরা উদযাপন করি। এই একটা উৎসবে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাঙালি এক হয়ে আমরা উদযাপন
করি।”

যাত্রাগান, কবিগানের
মত লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ এবং চর্চায় বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ারও তাগিদ দেন সরকারপ্রধান।

‘প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সংস্কৃতি চর্চায়’ জোর প্রধানমন্ত্রীর
 

সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী
 

“আমাদের লক্ষ্য রাখতে
হবে, আমাদের বিভিন্ন এলাকায়, বিভিন্ন জেলায়, এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি রয়েছে।
সেখানকার গান, যাত্রাগান, কবিগান, শিল্প, সাহিত্য বিভিন্ন কিছু আছে, যা বিকশিত হতে
পারে। এই যে লোকজ সংগীত ও লোকজ সাহিত্য, এগুলো যেন আরো বিকশিত হয়, সেদিকেও বিশেষভাবে
দৃষ্টি দেওয়া দরকার।”

সংস্কৃতি চর্চাকে এগিয়ে
নিতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে
ক্ষমতায় আসার পর থেকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিদের গুরুত্ব বাড়াতে এবং আরও কর্মসংস্থান
তৈরিতে রেডিও, টেলিভিশনকে বেসরকারিখাতে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

দেশের যে কোনো সংকট
এবং অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য কবি, শিল্পী, সাহিত্যিকদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতাকে হত্যার
২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই যে দেশে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের
স্লোগান ‘জয় বাংলা’ ফিরে এসেছিল, সে কথাও মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।

“যে ৭ মার্চের
ভাষণ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, আজকে তা বিশ্বে প্রামান্য ঐতিহ্য দলিলে স্থান পেয়েছে।”

বাংলাদেশের মানুষ ‘সাধারণভাবেই
খুব সংস্কৃতিমনা’ মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, “আমাদের নৌকার মাঝিও নৌকা চালাতে
চালাতে গান ধরে। এক সময় তো গরুর গাড়িই চলতো… ‘ওকি  গাড়িয়াল ভাই’ এই গান এখনো মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।”

হাল আমলে আধুনিক প্রযুক্তিতে
‘সে সব হারিয়ে যেতে বসলেও’ শিল্পীর তুলিতে সেসব এখনো উজ্জীবিত হয়ে আছে বলে মন্তব্য
করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,
“আমাদের এই সংস্কৃতি চর্চাগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। ঐতিহ্য আমরা যেমন ভুলবো না, আবার
যুগের সাথে তাল মিলিয়েও চলতে হবে।”

আধুনিক যুগের সংস্কৃতিও
যাতে দেশের ছেলেমেয়েরা রপ্ত করতে এবং চর্চা করতে পারে, সেদিকেও দেখতে বলেন শেখ হাসিনা।

“আমি মনে করি
যে আমাদের ঐতিহ্যের সাথে আধুনিক প্রযুক্তি এবং আধুনিক জ্ঞানও অর্জন করা একান্তভাবে
দরকার। একটা থেকে আরেকটা বাদ দেওয়া যাবে না। একটাকে এক সাথে করে আমাদের সামনের দিকে
এগিয়ে যেতে হবে।

“প্রযুক্তির যুগে আমাদের
এগিয়ে যেতে হবে। সেই কথাটা সব সময় মনে রাখতে হবে।” 

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র
নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের নিজস্ব সংস্কৃতি যাতে বিকশিত হয়, সেদিকে দৃষ্টি রেখে প্রতিটি এলাকায়
তাদের সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

“আবহমান কাল ধরে
যেগুলো চলে আসছে, সেগুলো যাতে বিকশিত হতে পারে, বিশেষভাবে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।
এগুলো আমাদের ঐতিহ্য, এগুলো আমরা ভুলব না। কিন্তু সামনের দিকেও আমরা এগিয়ে যাবো…।”

করোনাভাইরাস মহামারী
নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও ‘একেবারে শেষ হয়ে যায়নি’ মন্তব্য করে সবাইকে সতর্ক হয়ে চলার পরামর্শ
দেন সরকারপ্রধান।

অন্যদের মধ্যে সংস্কৃতি
প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী অনুষ্ঠানে
বক্তব্য রাখেন।