স্যালাইন ছাড়া অন্যান্য ওষুধ হাসপাতালের
বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে বলে রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য,
রোগীর জন্য স্থানের অভাব থাকলেও ওষুধ আর চিকিৎসকের কোনো সমস্যা নেই।
চিকিৎসকের ভাষ্য, বাইরের খোলা খাবার খাওয়ার
কারণে ডায়রিয়ার বিস্তার হচ্ছে। এজন্য তারা পরিচ্ছন্নতা মেনে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার
পরামর্শ দেন।
সরেজমিনে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে দেখা যায়,
হাসপাতালের মেঝে ও বাইরে আঙিনায় গাছের নিচে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা। গাছের ডালে
ঝুলছে স্যালাইনের ব্যাগ। কেউবা হাতে নিয়ে স্যালাইনের ব্যাগ উঁচুতে ধরে রাখছেন। সেখানে
এসেই চিকিৎসক ও সেবিকারা রোগীর সেবা দিচ্ছেন।
পৌর শহরের ধুঞ্চি এলাকা থেকে মোছা. বেগম
আক্তার বুধবার সকালে ছোট বোনকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন।
জায়গা না পেয়েই ড্রেনের পাশেই চিকিৎসা নিচ্ছেন এক রোগী
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন,
গত দুই দিন ধরে তার বোনের ডায়রিয়া। ফার্মেসি থেকে ওষুধ, স্যালাইনে চিকিৎসা দেওয়ার পরও
কোনো পরিবর্তন হয়নি। রাত থেকে ডায়রিয়া বেশি হলে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
“কিন্তু হাসপাতালে বেড নেই, মেঝেতেও জায়গা
নেই; তাই মাদুর বিছিয়ে গাছের নিচেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে যে স্যালাইন
দিয়েছে সেটা ঝুলানোর জায়গা না থাকায় গাছের ডালে বেঁধে দিয়েছে।”
শহরের হরিসভা এলাকার মিম আক্তার বলেন, “গতকাল
(মঙ্গলবার) থেকে পেটে ব্যাথা, বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হওয়ায় হাসপাতালে আসি; কিন্তু
কোনো শয্যা পাইনি। সঙ্গে মাদুরও আনি নাই যে একটু শুয়ে থাকব। ফলে দাঁড়িয়ে থেকেই স্যালাইন
নিতে হচ্ছে। খুবই ভোগান্তি হচ্ছে আমাদের। রোগীদের বেডের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের
নজর দেওয়া উচিৎ।”
মো. শরিফ নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, “এখানে
কোনো চিকিৎসা নেই। বেড নেই, ফ্লোরে জায়গা নেই। গাছতলায় অনেক রোগী মাদুর পেতে আছে। যাদের
মাদুর নেই তারা দাঁড়িয়ে আছে। জায়গা না পেয়ে আমার রোগীকে নিয়ে ড্রেনের পাশে রেখেছি।
ড্রেন থেকে দুর্গন্ধ আসছে। এতে রোগী সুস্থ না হয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
“এটা কোনো চিকিৎসা সেবা হলো? ডাক্তার নেই,
ওষুধ নেই। একমাত্র স্যালাইন ছাড়া সব ওষুধ বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে।”
এ বিষয়ে কথা হয় সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের
জ্যেষ্ঠ সেবিকা আইনুর নাহারের সঙ্গে।
পর্যাপ্ত বেড না থাকায় বাইরেই চলছে চিকিৎসা সেবা
তিনি বলেন, “গত ১২ ঘণ্টায় ১০০ জন রোগী হাসপাতালে
ভর্তি হয়েছেন। আরও দেড় শতাধিক রোগী ভর্তি ছিলেন। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা
করা হচ্ছে। রোগীর চাপে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।”
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ মোহাম্মদ
আব্দুল হান্নান বলেন, প্রতিদিনই ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পাতলা পায়খানা ও বমি হওয়া
রোগী বেশি আসছে। রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসাপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার ও ওষুধ রয়েছে।
জায়গা না থাকায় অনেক রোগী হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছে। এক সঙ্গে রোগীর চাপ
বেড়ে যাওয়ায় সবাইকে বেড দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ডায়রিয়ার কারণ উদ্ঘাটনের
জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছিল। টিমের অনুসন্ধানে বাইরের খোলা
খাবার থেকেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন,
“ডায়রিয়ার প্রকোপ কমাতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। খাওয়ার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে
নিতে হবে এবং বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।