এম খায়রুজ্জামান। ছবি: ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে
দুদকের উপ-পরিচালক আনায়ারুল হক বাদী হয়ে বুধবার কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করেন বলে সংস্থাটির উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
খায়েরুজ্জামানের বিরুদ্ধে এজাহারে বলা হয়, “তিনি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাই কমিশনার হিসেবে ২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কর্মরত থাকাকালে অসৎ উদ্দেশে, সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও অপরাধমূলক অসদাচারণ ও প্রতারণার মাধ্যমে সরকারের এক কোটি ৫৮ লাখ ২৭ হাজার ৯১৩ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।”
দীর্ঘদিন ধরে আড়ালে থাকা জেল হত্যা মামলার সন্দেহভাজন খায়রুজ্জামানকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ার আমপাং, সেলাঙ্গর এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করেছিল সে দেশের পুলিশ।
পরদিন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জাইনুদিনের বরাতে দেশটির ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টার জানান, একটি অভিযোগ থাকায় খাইরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে ‘তার দেশের একটি অনুরোধ রয়েছে’।
এরপর বাংলাদেশে প্রত্যার্পণের আলোচনার মধ্যে মালয়েশিয়ার আদালতের এক আদেশে তাকে মুক্তি দেয় দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ।
সাবেক এই কূটনৈতিকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি ২০১০ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মনোয়ারুল ইসলাম ও পরিচালক মো. খাইরুল আলমের সমন্বয়ে এক কমিটির বিভাগীয় তদন্তে প্রমাণ পাওয়া যায় বলে দুদকের মামলায় উল্লেখ করা হয়।
ওই তদন্ত প্রতিবেদন কথা উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, খায়রুজ্জামান প্রাপ্যতা না থাকা সত্ত্বেও শিক্ষা ভাতা বাবদ আট লাখ ৯৭ হাজার ৪০৮ টাকা, ভ্রমণ না করে চারটি ভাউচারের মাধ্যমে অগ্রিম হিসাবে ১০ লাখ ৯৩ হাজার ১৩৫ টাকা, চিলড্রেন এয়ার প্যাসেজ বাবদ দুই লাখ ৮৪ হাজার ১৪৫ টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।
অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে এসি মেরামত, স্ত্রীর ভ্রমণ ব্যয়, ড্রাইভারকে অধিকাল ভাতা, মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহার, চিকিৎসা ভাতা, বাড়ি ভাড়া, বিনোদন, টেলিফোন ও ফ্যাক্স, বৈদেশিক ভাতা, গিফট ও এন্টারটেইনমেন্টসহ বিভিন্ন খাতে মোট এক কোটি ৫৮ লাখ ২৭ হাজার ৯১৩ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে মামলায় বলা হয়।
মামলায় তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৯২০ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার তদন্তে অর্থ আত্মসাতের সাথে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা আমলে আনা হবে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এক যুগের বেশি সময় ধরে শরণার্থী হিসেবে মালয়েশিয়ায় বসবাস করে আসা অবসরপ্রাপ্ত মেজর খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে ১৯৭৫ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
চার দলীয় জোট সরকারের সময় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পাওয়া সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাকে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হাই কমিশনার করে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাকে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য দেশে ফিরতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিপদ বুঝে তিনি কুয়ালালামপুর থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড নিয়ে সেখানেই থেকে যান।
খায়রুজ্জামানের স্ত্রী রিটা রহমান ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে রংপুরের একটি আসনে দশম সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
পুরনো খবর
খায়রুজ্জামানকে নিয়ে আইনি লড়াই মালয়েশিয়া সরকারই করবে: শাহরিয়ার
খায়রুজ্জামানের প্রত্যর্পণে মালয়েশিয়ার আদালতের স্থগিতাদেশ
মালয়েশিয়া থেকে খায়রুজ্জামানের প্রত্যর্পণ ঠেকাতে তৎপর স্ত্রী
মালয়েশিয়ায় খায়রুজ্জামান গ্রেপ্তার ‘বাংলাদেশের অনুরোধেই’
খায়রুজ্জামান: জেল হত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত হবে কিনা, ভাববে সরকার
আওয়ামী লীগ বাদে সব সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন খায়রুজ্জামান