দেশের সকল মানুষের আর্থ-সামাজিক তথ্য
সংগ্রহে সারাদেশে আগামী ১৫ থেকে ২১ জুন সাতদিন একযোগে জনশুমারি ও গৃহ গণনা করবে বাংলাদেশ
পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
গণমাধ্যমের কাছে দেশের ইতিহাসের ষষ্ঠতম
এই জনশুমারির বিস্তারিত তুলে ধরতে বুধবার রাজধানীর শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে
একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী
এম এ মান্নান বলেন, “গত বছর এ প্রকল্পটি অনুমোদন পেলেও বাস্তবায়নে যেতে
কিছুটা দেরি হল। কিন্তু কিছুটা দেরি হলেও এবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে হওয়ায় আমরা নিখুঁত
ও বিশুদ্ধ তথ্য পাব।”
তিনি বলেন, “সরকার জনগণের অর্থ ব্যয় করে কোনো তথ্য গোপন করতে এই শুমারি করছে না।
বরং সকল তথ্যই সবার জন্য উম্মুক্ত থাকবে।”
যাদের তথ্য এবং যাদের জন্য তথ্য সংগ্রহ
করা হচ্ছে তারা যেন এসব তথ্য পড়তে এবং বুঝতে পারেন সেজন্য সকল তথ্য বাংলায় করার আহবান
জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
জনশুমারি ও গৃহগণনার উদ্দেশ্য বর্ণনা
করে কর্মশালায় প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন জানান, এর আগে প্রতি ১০ বছর পরপর আদম শুমারি নামে দেশের
জনসংখ্যার শুমারি করা হতো।
“এবারেরর জনশুমারির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে
ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক পর্যায়ে ব্যক্তি ও গৃহের তথ্য নিয়ে সারাদেশে কোন জেলায় কত মানুষ
ও তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা কী তা বিশ্লেষণ করা হবে।
“এরপর সরকার ওই তথ্য নিয়ে দেশের বৈষম্য নিরুপণের উদ্যোগ
গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এ জন্য সকল ধরনের খানাভিত্তিক আর্থ-সামজিক জরিপের জন্য
নমুনা ফ্রেম প্রস্তুত করা হবে।”
এবারের জনশুমারিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি
জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ভিত্তিক ডিজিটাল ম্যাপ ব্যবহার করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে
তথ্য সংগ্রহ ও বিন্যাস করা হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
“তাই এবারের জনশুমারির তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো
সুযোগ থাকবে না,”- বলেন দিলদার হোসেন।
তিনি জানান, জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর
মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল গৃহ, সাধারণ, প্রাতিষ্ঠানিক ও বস্তি খানা, ভাসমান জনগোষ্ঠী,
খানায় বসবাসরত সকল সদস্যের তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় গৃহের সংখ্যা ও ধরন,
বাসস্থানের মালিকানা, খাবার পানির প্রধান উৎস, টয়লেটের সুবিধা, বিদ্যুৎ সুবিধা, রান্নার
জ্বালানির প্রধান উৎস এসব তথ্যও সংগ্রহ করা হবে।
ফাইল ছবি
জনমিতির পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক তথ্য
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, বৈদেশিক রেমিট্যান্স, খানা সদস্যদের বয়স, লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা,
ধর্ম, প্রতিবন্ধিতা, শিক্ষা, কর্ম, প্রশিক্ষণ, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার, ব্যাংক,
মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, জাতীয়তা, নিজ জেলা ইত্যাদি বিভিন্ন
বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এ প্রকল্পের
পরিচালক জানান, জরিপের তথ্য নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণের
জন্য তথ্য সরবরাহ করা হবে।
মাঠপর্যায়ে মূল শুমারির তথ্য সংগ্রহে
সাময়িকভাবে নিযুক্ত থাকবে প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার কর্মী। স্থানীয় শিক্ষিত যুবক ও নারীরা
নিযুক্ত হয়ে নির্ধারিত গণনা এলাকার তথ্য ট্যাবের মাধ্যমে সংগ্রহ করবে।
দেশে প্রথমবারের মতো এই ডিজিটাল শুমারিতে
তথ্য সংগ্রহের জন্য ৩ লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব ব্যবহার করা হবে।
দিলদার হোসেন জানান, এরপর মাঠ পর্যায়ের
তথ্য সংগ্রহে ব্যবহৃত ট্যাবগুলো মোবাইল ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ব্যবহার করে
কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
এছাড়া মাঠ পর্যায় থেকে সংগৃহীত তথ্য
সংরক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড
(বিডিসিসিএল) এর ফোর টায়ার সিকিউরিটি সমৃদ্ধ ডেটা-সেন্টার ব্যবহার করা হবে।
মাঠ পর্যায় থেকে বিডিসিসিএল হয়ে বিবিএস
সার্ভারে আসার পূর্ব পর্যন্ত সংগ্রহ করা তথ্য-উপাত্ত গোপন অবস্থায় থাকবে; যার মাধ্যমে
ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করা হবে বলে জানান তিনি।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ফলে
তথ্য প্রক্রিয়াকরণ খুব সহজ এবং স্বল্পতম সময়ে শুমারির রিপোর্ট প্রকাশ সম্ভব হবে বলেও
কর্মশালায় আশা প্রকাশ করেন প্রকল্প পরিচালক।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের
সচিব ড. শাহনাজ আরেফিনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী
শামসুল আলম। এছাড়া বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এতে উপস্থিত ছিলেন।