বুধবার রায় ঘোষণার কিছুক্ষণ আগে খবর সংগ্রহের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় এজলাস কক্ষে ঢুকতে চাওয়া নিয়ে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
দুপুর পৌণে ১২টারর দিকে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুন মামলার চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
ঢাকা ট্রিবিউনের আদালত প্রতিবেদক সানাউল ইসলাম টিপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রায়ের আগে আদালত কক্ষে ঢুকতে চেয়েছিলেন ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক এমরুল হাসান বাপ্পী।
“তিনি রায়ের সংবাদ সংগ্রহের জন্য ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশের দুই পরিদর্শক আছাদ ও মশিউর রহমান তাকে বাধা দিয়ে এজলাস কক্ষের সামনে থেকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে প্রায় ১৫ ফুট দূরে নিয়ে যান।
“আছাদ চারবার এবং মশিউর একবার বাপ্পীকে আঘাত করেন। এ সময় তার কব্জি, আঙুল ও বুকে খামচি লাগে।”
টিপু জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের এজলাসে ঢুকতে দিতে না করেছেন জানিয়ে বাপ্পীকে ‘হেনস্তা’ করেন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
ওই ঘটনার একই বর্ণনা দিয়ে দৈনিক ভোরের আকাশ পত্রিকার আদালত প্রতিবেদক সাব্বির আহমেদ সজীব বলেন, “এ সময় বাপ্পীকে পুলিশরা অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।”
তিনি বলেন, “যদিও ভেতরে থাকা সাংবাদিকদের বিচারক নিজেই থাকার অনুমতি দিয়েছেন এবং গণমাধ্যমের অনেক কর্মী রায়ের সময় এজলাসের ভেতরেই হাজির ছিলেন।”
দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক এমরুল হাসান বাপ্পী
বিষয়টি নিয়ে ঢাকার মহানগরের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আব্দুল্লাহ আবুসহ কর্মরত সাংবাদিকরা এডিসি হাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে চান। তবে প্রথমে তিনি বিষয়টিকে ‘গুরুত্ব দিতে চাননি’ বলে জানান সজীব।
পরে সব গণমাধ্যমের কর্মীরা সেখানে জড়ো হলে পিপি আব্দুল্লাহ আবুর উপস্থিতিতে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ‘ক্ষমা চান’ পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার।
হাফিজুর রহমান বলেন, “যেহেতু ডিউটিরত অফিসাররা আমার কথা বলে হেনস্তা করেছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে তাই আমি নিজেই তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের প্রধান এবং ডিএমপির উপকমিশনার জাফর হোসেন ঘটনা সম্পর্কে অবগত নন বলে জানান।
টেলিফোনে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি বিষয়টি জানি না, যদি এরকম হয়ে থাকে তবে বিষয়টি ভালো না। আমি খোঁজ নিচ্ছি।”
পরে আবারও যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “বাপ্পী সাহেবের কাছে তো বিষয়টি নিয়ে আমাদের পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মাফ চেয়ে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করেছেন। যেখানে মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু সাহেবও উপস্থিত ছিলেন।”
সাংবাদিকরা বাপ্পীকে ‘হেনস্তা করা’ দুই পুলিশ পরিদর্শকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তাদের আর পাওয়া যায়নি।
দুই পুলিশ সদস্যকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করার অনুরোধ জানালে এডিসি হাফিজুর রহমান বলেন, “যেহেতু ওই দুই কর্মকর্তা আমার আদেশের প্রেক্ষিতে কাজ করেছেন বলে দাবি করেছেন, তাই আমিই তাদের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করলাম। তাদের তো হাজিরের আর প্রয়োজন নাই।”