ক্যাটাগরি

কয়লার মজুদে ঘাটতি, ভারতে দফায় দফায় লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা

ভারতের পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর প্রায় ৭৫% কয়লার উপর নির্ভরশীল। আধুনিক জীবনযাত্রায় মানুষ যন্ত্রের উপর নির্ভরশীল হচ্ছে। ফলে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। ভারতেও বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর সেটা অন্তত ৩৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়বে- এমনটিই বলছেন কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা।

এশিয়ার তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ভারত। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে গত প্রায় দুই বছরের অচলাবস্থা কাটিয়ে দেশটির অর্থনীতি সবে পুরোদমে সচল হতে চলেছে। এখন যদি লোডশেডিং বাড়ে তবে স্বাভাবিকভাবেই তা শিল্প কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, চাহিদার শতাংশ হিসেবে গত সপ্তাহে ভারতে বিদ্যুৎ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৪ শতাংশের বেশি। গত অক্টোবরের তুলনায় যা ১ শতাংশের বেশি ঘাটতি। সর্বশেষ গত অক্টোবরেই কয়লার মারাত্মক সংকটে পড়েছিল ভারত।

ভারতের দক্ষিণের রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশ; সেখানে কিয়া মটোরস এর গাড়ি তৈরির কারখানা বা ফাইজারের মত ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানির কারখানাসহ আরও অনেক শিল্পকারখানা রয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই প্রদেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ ঘাটতি ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। ফলে পুরো রাজ্যে ব্যাপক আকারে লোডশেডিং দেখা দিয়েছে।

১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া নতুন অর্থ বছরে ভারতে কয়লা নির্ভর পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোতে গড়ে ৯ দিনের কয়লা মুজদ আছে। ২০১৪ সালের পর এটাই সবচেয়ে কম মজুদের ঘটনা। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোতে গড়ে অন্তত ২৪ দিনের কয়লা মজুদ রাখতে হয়।

ভারতের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রাজিভ আগারওয়াল বলেন, ‘‘কোল ইন্ডিয়া এবং কয়লা মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোকে কয়লার মজুদ বাড়াতে বলা হয়েছিল। সমস্যা হচ্ছে, তারপরও  তাদের মজুদ কমই আছে।”

এদিকে, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অন্ধ্র প্রদেশে শিল্পকারখানায় উৎপাদন অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। শুধু অন্ধ্র প্রদেশ নয় বরং গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের মত রাজ্য, যেখানে অসংখ্য ভারি শিল্পকারখানা রয়েছে সেখানেও লোডশেডিং বেড়ে গেছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ঝাড়খণ্ড ও বিহার এবং উত্তরের উত্তরাখণ্ড ও হরিয়ানা রাজ্যেও বিদ্যুৎ ঘটাতির পরিমাণ ৩ শতাংশের উপরে।

ফিচ রেটিংস এর পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার এক নোটে বলা হয়, ‘‘কয়লার প্রাপ্যতা সীমিত হওয়ায় বর্ধিত চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো অসম্ভব।”

তবে শুধু কয়লার প্রাপ্যতা কম হওয়াটাই সংকট সৃষ্টির একমাত্র কারণ নয়। খনি থেকে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোতে কয়লা পৌঁছে দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ট্রেন না থাকার কারণেও সরবরাহ সংকট বাড়ছে।

দ্রুতগতিতে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা:

বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ার পাশাপাশি ভারতে বিদ্যুতের চাহিদা প্রতিনিয়ত লাফিয়ে বাড়ছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে। এপ্রিল এবং মে মাসে ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলোতে তীব্র তাপদাহ দেখা দেয়।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশটির উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে এপ্রিলে প্রতিনিয়ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড ভাঙতে দেখা যেতে ‍পারে।

‘দ্য ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার ‍অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’ এর মহাপরিচালক হ্যারি ধাউল বলেন, ‘‘আবহাওয়ার নজিরবিহীন পরিবর্তনের কারণে মধ্যরাতে বিদ্যুতের চাহিদা সব থেকে বেশি বেড়ে যায়। কারণ, ওই সময়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার মারাত্মক হারে বেড়ে যায়।”

রয়টার্স জানায়, ভারতের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় আশা করছে, আগামী ২০২৩ সালের মার্চ নাগাদ দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়বে। কিন্তু বিদ্যুতের চাহিদা তার থেকেও দ্রুত গতিতে বাড়ছে। যা গত অন্তত ৩৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হবে।

বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ায় উৎপাদনও বাড়াতে হয়েছে। এ কারণে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোত কয়লার চাহিদা বেড়েছে। ফলে, ভারত সরকার বাধ্য হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে না এমন খাতে কয়লা সরবরাহ কমিয়ে দিতে।

অথচ, ভারতের সবচেয়ে বেশি কয়লা উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড এ বছর কয়লা উৎপাদনে রেকর্ড করেছে।