ক্যাটাগরি

প্রতিবেদন মুছতে চাপ: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গ যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে

২০২১ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মূল্যায়ন তুলে ধরতে গিয়ে ‘মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা’ অংশে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে হয়রানির বিষয়টিও বলা হয়। 

মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, “দেশের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ক্ষমতাসীন দলের একজন সাবেক এমপির তরফ থেকে রাজনৈতিক চাপের মুখোমুখি হয়, দাবি করা হয়, তার এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা নিয়ে পুরনো প্রতিবেদন সরিয়ে ফেলতে হবে।

“সেই সাবেক এমপি তার বন্ধুর মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মানহানির মামলা করার চেষ্টা করেছিলেন সংবাদমাধ্যমটির চারজন জ্যেষ্ঠ সম্পাদকের বিরুদ্ধে, কিন্তু বরিশালের একটি আদালত তা খারিজ করে দেয়।”

যেসব প্রতিবেদন তুলে ফেলার জন্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে চাপ দেওয়া হয়েছে, সেসব প্রকাশিত হয়েছিল ব্যবসায়ী ও সাবেক এমপি ডা. এইচ বি এম ইকবাল এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে হওয়া বিভিন্ন মামলায় আদালতের আদেশ নিয়ে।

এর মধ্যে ২০১০ সালে একটি হত্যা মামলা থেকে ডা. ইকবালের খালাসের রায় নিয়ে যেমন প্রতিবেদন আছে, তেমনি দুদকের মামলায় ২০১৭ সালে তার স্ত্রী সন্তানদের হাই কোর্টে আপিল করার অনুমতি পাওয়ার খবরও আছে।

সেসব মামলা থেকে তারা অব্যাহতিও পেয়েছেন। পুরনো সেসব প্রতিবেদন মুছতে ২০২১ সালের শুরুতে হঠাৎ করেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নানাভাবে চাপ দেওয়া শুরু হয়।

এইচ বি এম ইকবাল: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের বিরুদ্ধে খুলনার মামলাও খারিজ
 

এইচ বি এম ইকবাল: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন বরগুনাতেও খারিজ
 

এইচ বি এম ইকবাল: বরিশালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন খারিজ
 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদন মুছতে চাপের পর এবার মামলার আবেদন

এইচ বি এম ইকবাল: এক যুগ আগের রায়ের খবর নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে উকিল নোটিস

প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবালের ‘বন্ধু’ হিসাবে পরিচয় দিয়ে কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল নামে বরিশালের এক ব্যক্তি ওই বছর জানুয়ারির শেষ দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের চার জ্যেষ্ঠ সম্পাদকের নামে উকিল নোটিস পাঠান। ইকবাল ও তার পরিবারের মামলা নিয়ে পুরনো প্রতিবেদনের তারিখ উল্লেখ করে সেগুলো মুছে ফেলার দাবি তোলা হয় নোটিসে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব কোনো অনুসন্ধান সেসব প্রতিবেদনে ছিল না; সম্পূর্ণভাবে মামলার কার্যক্রম ও আদালতের আদেশই সেখানে বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ফলে সেসব প্রতিবেদন সরিয়ে নেওয়ার কোনো যুক্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম দেখেনি।

নোটিস পাওয়ার পর ২ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সাংবাদিকতার নিয়ম অনুযায়ী নোটিসদাতা আইনজীবী এবং ডা. এইচ বি এম ইকবালের সঙ্গে সে সময় কথাও বলা হয়।

পর বিভিন্ন জেলা থেকে নতুন নতুন উকিল নোটিস আসা শুরু হয়। দুই ডজন জেলা থেকে তিন ডজনের বেশি নোটিস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ঠিকানায় পৌঁছায়।

ভিন্ন ভিন্ন নামে পাঠানো হলেও সবগুলো নোটিসের ভাষা, বক্তব্য ও দাবি ছিল একই রকম। এর মধ্যে কয়েকটি নোটিসে ‘বিরূপ পরিণতির জন্য’ প্রস্তুত থাকার হুমকিও দেয়া হয়।

উকিল নোটিস পাওয়ার পর তার জবাব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। এর মধ্যেই প্রথমে বরিশালে, তারপর বরগুনা এবং খুলনায় মামলার আবেদন হয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, হেড অব ইংলিশ নিউজ অরুণ দেবনাথ, বার্তা সম্পাদক জাহিদুল কবির এবং বার্তা সম্পাদক মুনীরুল ইসলামকে বিবাদী করা হয় ওই আর্জিতে।

অভিযোগ ‘গ্রহণযোগ্য না হওয়ায়’ ২০২১ সালের ৩ মার্চ বরগুনার মামলাটি এবং ১৪ মার্চ বরিশালের মামলাটি খারিজের আদেশ দেয় স্থানীয় দুটি আদালত।

আর খুলনার মামলাটি আদালতে নির্দেশে তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন প্রতিবেদনে জানায়, মানহানির যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার ‘কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ তদন্তে পাওয়া যায়নি’। আদালত তখন সে মামলাও খারিজের আদেশ দেয়।

পেশাগত দায়িত্ব পালনে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের এই চাপের বিষয়গুলো সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরতে ২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি একটি সংবাদ সম্মেলন করেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

এ ধরনের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করার প্রত্যয় জানিয়ে সেদিন তিনি বলেন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ‘আইনি পথেই লড়বে’।

 

‘না জানিয়েই’ নাম দিয়েছে, বললেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের বিরুদ্ধে মামলার ‘সাক্ষী’

প্রতিবেদন মুছতে চাপ: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে সেই উকিল নোটিস কে পাঠাল?

সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চেষ্টা: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের বিবৃতি
 

চাপে নত হব না: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান সম্পাদক