বুধবার
কারওয়ান বাজারে প্রধান কার্যালয়ে নির্মাণ ব্যবসায়ী এবং রড ব্যবসায়ীদের একটি
প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রাথমিক আলাপের পর অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম
সফিকুজ্জামান এ কথা বলেন।
সম্প্রতি
নির্মাণ কাজের অন্যতম প্রধান এ উপকরণটির দাম টন প্রতি ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে
৯০ থেকে ৯২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত তিন মাস ধরে দাম বাড়ার এক পর্যায়ে
ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর লাফিয়ে বেড়ে যায়।
এই
পরিস্থিতিতে ঢাকার ইংলিশ রোডসহ একাধিক রডের বাজারে অভিযান চালানোর পর বাংলাদেশ
অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইংলিশ রোড আয়রন অ্যান্ড স্টিল
মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠকে বসে ভোক্তা অধিকার।
সেই
বৈঠকেই তুলে ধরা হয় সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে রডের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে নানা ধরনের
কারসাজির তথ্য।
শুরুতেই
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, “খুচরা
পর্যায়ে প্রতি টন রডে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি নিতে দেখা যাচ্ছে।
“গত তিন মাসে বিভিন্ন স্তরে রডের দাম অন্তত ৩০ হাজার টাকা
বেড়েছে। আবার ভালো মানের রডের দামে খারাপ মানের রড বিক্রি করা হচ্ছে অথবা রডের মান
নিয়ে কারসাজি করা হচ্ছে।”
একই
সঙ্গে সিমেন্ট, বালুসহ সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রির দামই বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি
জানান, এই ধরনের প্রবণতা দেশের উন্নয়নের ধারাকে প্রভাবিত করবে।
“রড ব্যবসায়ীরা ইউক্রেইন যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে দাম বাড়ার কথা
বলছেন। যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে এর প্রভাব হয়তো পড়েছে। কিন্তু তাই বলে এত অল্প
সময়ের ব্যবধানে দেশের বাজারে রডের দাম এতটা বেড়ে যাওয়া যৌক্তিক হয়নি।
“অযৌক্তিকভাবেই অতিরিক্ত মূল্য নেওয়া হচ্ছে বিধায় আমরা যৌক্তিক
মূল্য নির্ধারনের উপায় বের করতে এধরনের বৈঠক শুরু করেছি। এরপরে রড উৎপাদানকারী
প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা হবে।”
তবে
রডের বাজার নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে দুটি সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন ভোক্তা অধিকারের
মহাপরিচালক।
“প্রাথমিক ঘোষণা হচ্ছে খুচরা বা পাইকারি সব পর্যায়ে ক্রয় মূল্য
ও বিক্রয়মূল্যের তালিকা ঝুলিয়ে রাখতে হবে। রড বা অন্যান্য পণ্য বিপণনে পাকা রশিদ
বা প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা দিয়ে ছাপানো রশিদ ব্যবহার করতে হবে।”
দেশে
৮০ শতাংশ রডই তৈরি হয় আমদানি করা টুকরা লোহা বা স্ক্র্যাপসহ অন্যান্য কাঁচামাল
থেকে। ২০ শতাংশের জোগান আসে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প থেকে বেরিয়ে আসা স্ক্র্যাপ থেকে।
অর্থাৎ এ খাতের পুরোটাই আমাদানি নির্ভর।
রডের
বাজারের বিভিন্ন স্তরের উল্লেখ করে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত ঘোষণা
করে তিনি বলেন, “উৎপাদন থেকে বিপণন
পর্যন্ত কোন স্তরে কত টাকা লাভ বা মুনাফা করা যাবে তা ঠিক করে দেবে সরকার।
“সেজন্য ধারাবাহিকভাবে মিল মালিকদের সঙ্গে বসতে হবে। বুয়েটের একজন
প্রতিনিধিকে রাখা হবে।”
মূল্য
ঘোষণায় কারসাজি
বৈঠকে
ইংলিশ রোড আয়রন অ্যান্ড স্টিল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইমরান
হোসেন অনেকটা কমিশন এজেন্টের মতো রড এবং স্টিল স্ট্রাকচার বিক্রি করেন বলে জানান।
তিনি
বলেন, “টনপ্রতি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা লাভ করে থাকি আমরা। প্রায় সবগুলো
মিলই রডের যেই দামটা এসও’র মধ্যে উল্লেখ করে, প্রকৃত
দাম অনেক সময় সেটা থাকে না।”
বিষয়টি
ব্যাখ্যা করে ইমরান বলেন, “মিলগুলো কাঁচামাল
আমদানির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটা মূল্য ঘোষণা করে থাকে। তারা সামগ্রিক বিক্রির
ওপর ভ্যাট দেয় না। ভ্যাট দেয় আমদানি মূল্য ও ঘোষিত মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে।
“এ কারণে ভ্যাটের হিসাব জমা দেওয়ার সময় তারা একটা মূল্য ঘোষণা
করে, যাতে আমদানি করা কাঁচামাল ও পরিশোধনজনিত মূল্যসংযোজন যুক্ত থাকে। কিন্তু
প্রকৃত মূল্য তারা বাজার থেকে আরও অনেক বেশি রাখে।”
বাজারে
‘রিয়েল টাইম প্রাইস’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ছয়মাস
আগের ৬৩ টাকা দিয়ে কোনো এসও বিক্রি হলেও ছয়মাস পর বাজার যদি বেড়ে প্রতিকেজি ৯০
টাকা হয়ে যায় তাহলে এসও’র দামও ৯০ টাকা হয়ে
যাবে।
“কিন্তু সেখানে লেখা থাকবে ঠিক ৬৩ টাকা। এই বিষয়টাই হচ্ছে ঘোষিত
মূল্য বনাম রিয়েল টাইম প্রাইস।”
এই
পার্থক্য তুলে ধরে ইংলিশ রোডের এই ব্যবসায়ী বলেন, “ভোক্তা
অধিকার দেখতেছে যে, কেনা মূল্য ৬৩ টাকা আর আমি বিক্রি করতেছি ৯২ টাকায়। এর পেছনে
বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যার মধ্যে একটি হচ্ছে রিয়েল টাইম প্রাইস।”
বৈঠক
শেষে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহামপরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, “আমরা
এসব অনিয়মগুলো আগেই সন্দেহ করেছিলাম। এখন কিছুটা খোলাসা হয়েছে। মূলত রডের বাজারে
মেনিপুলেশন হচ্ছে।
“ইংলিশ রোডের ব্যবসায়ীদের আজাকের বক্তব্য অনুযায়ী মিল মালিকরা
ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার জন্য দাম কমিয়ে দেখান। আমরা দালিলিক প্রমাণ হাতে পাওয়ার পর এটা
নিয়ে মন্তব্য করব।
“এসও প্রথার মধ্যে অনেক অনিয়ম রয়েছে। এতদিন আমরা এগুলো শুনি
নাই। তেলের মতো এখানেও এসও হস্তান্তর হচ্ছে। আমরা তেলের এসও হস্তান্তরের প্রক্রিয়া
বন্ধ করেছি।”
বাংলাদেশ
অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিজের সহ-সভাপতি বিমল রায় বলেন, তারা যেসব
সরকারি কাজ করে থাকেন সেগুলো রডের দাম বাড়লে আর সমন্বয় করা হয় না।
তিনি
বলেন, “সরকার বর্ধিত মূল্য সমন্বয়ের উদ্যোগ নিতে পারে। রড
কোম্পানিগুলো নিজেদের মতো করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এখানে একটি রেগুলেটরি বডির
নজরদারি থাকা উচিত।
বৈঠকে
জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন বিক্রেতা নিজেকে বিএসআরএম কোম্পানির ডিলার পরিচয় দিয়ে
বলেন, “কোম্পানিটি এসও’র মধ্যে পণ্যের পরিমাণ
উল্লেখ করলেও সেখানে ইউনিট মূল্য উল্লেখ করে না।”
শুধু
বিএসআরএম নয় অন্যান্য কোম্পানিও এই দর উল্লেখ করে না বলে জানান তিনি।