বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনে বিএনপির
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
প্রকাশিত মানবাধিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজা
দেওয়া হয়েছে।
“আইন-আদালত সরকারের কবজায়।
দেশের নিরাপত্তা বাহিনী গুম, খুন ও বিচারবর্হিভূত হত্যায় জড়িত। বিরোধী দল নিধনে তারা
নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। বাকস্বাধীনতা সঙ্কুচিত করে ফেলা হয়েছে।”
বিপুল অর্থ খরচ করেও সরকার
নিজেদের ‘অপকর্ম আড়াল করতে পারেনি’ মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “আমরা বলতে চাই, এই রিপোর্টে
বাংলাদেশে আওয়ামী সরকারের অপকর্ম প্রকাশ পেয়েছে। গুম, খুন, অপহরণ করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে
গণতন্ত্রকামী জনগণের পেছনে লেলিয়ে দিয়ে কিংবা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করে দেশের জনগণের
কাছে তাদের অপকর্ম আড়াল করতে চাইলেও যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশিত বাংলাদেশের মানবাধিকার রিপোর্টে
দেখা যায়, কোনো অপকর্মই সরকার আড়াল করতে পারেনি।
“হাজার হাজার ডলার খরচ করে
লবিস্ট নিয়োগ করেও তাদের (সরকার) মরণঘাতী দুঃশাসনের বিভীষিকা আড়াল করা যায়নি।”
রিজভী বলেন, “বাস্তবতা হচ্ছে
যে, দেশে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের কবর রচনা করতেই নিশিরাতের সরকার দেশের আইন-আদালতকে
যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করে মাদার অফ ডেমোক্রেসি চার বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা
জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে।”
প্রতিবেদনে বিএনপি চেয়ারপারসন
খালেদা জিয়াকে ‘রাজনৈতিক বন্দি’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বেগম খালেদা
জিয়া সরকারের প্রতিহিংসার শিকার। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে
প্রণোদিত এবং তাকে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে
অপপ্রচার সম্পর্কে গণতান্ত্রিক বিশ্ব বিভ্রান্ত নয়।
“অর্থাৎ এই সরকার যে দুর্বিনীত
দুঃশাসন চালাচ্ছে, যে অনাচার চালাচ্ছে, সেটিকে যতই ঢেকে রাখার চেষ্টা করুক আজকে সেগুলো
উন্মেচিত হচ্ছে বিশ্ববাসীর কাছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে। সেগুলোর কোনোটাই লুকিয়ে
রাখতে পারছেন না সরকার।”
মেগা প্রকল্প প্রসঙ্গে
রিজভী বলেন, “টলমলায়মান গদি
যে কোনো সময়ে তাসের ঘরের মত পড়ে যেতে পারার সম্ভাবনায় আওয়ামী সরকার এখন বিকারগ্রস্ত
হয়ে পড়েছে। গতকালও প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে বলেছেন, মেগাপ্রকল্প নিয়ে বিভ্রান্তি
ছড়ানো হচ্ছে।
“কিন্তু বাস্তবতা হল বিভ্রান্তি
নয়, অভিনব নজিরবিহীন দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত মেগাপ্রকল্প নিয়ে সত্য কথাই আজ দেশে-বিদেশে
মানুষরা বলাবলি করছে। এই মেগা প্রকল্পের নামে লাখ লাখ কোটি ডলার যে লুটপাট হচ্ছে, তা
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কার মতই ধাপে ধাপে দেউলিয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।”
নরসিংদীর পলাশের ঘোড়াশালে
পৌর বিএনপির ইফতার পার্টির স্থান ‘ক্ষমতাসীন দলের দখল করে নেওয়া’, স্থানীয় নেতা ফরহাদ
হোসেনকে গ্রেপ্তার এবং ঘোড়াশালের রাস্তা অবরোধ করে রাখার ঘটনার নিন্দা জানান রিজভী।
একইসঙ্গে ছাত্রদলের ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহসভাপতি মনিরুজ্জামান মনির মাতব্বরকে গ্রেপ্তারের নিন্দা
জানিয়ে তার মুক্তির দাবি জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, আবদুস
সালাম আজাদ, আসাদুল করিম শাহিন, মুনির হোসেন, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, আবদুস সাত্তার
পাটোয়ারী, শ্রমিকদলের আনোয়ার হোসেইন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ডা. জাহিদুল কবির উপস্থিত ছিলেন।