বৃহস্পতিবার রাতে নিহত
মহিউদ্দিন সরকার নাঈমের (২৮) মা নাজমা বেগম বাদী হয়ে বুড়িচং থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন।
মামলায় তিন জনের নাম
উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ থেকে ছয় জনকে আসামি করা হয়েছে বলে বুড়িচং থানার ওসি
মো. আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন।
বুধবার রাত ১০টার দিকে
বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের হায়দ্রাবাদনগরে ওই সাংবাদিককে এলোপাতাড়ি গুলি করে
হত্যা করা হয়।
নিহত মহিউদ্দিন সরকার
নাঈম (২৮) পাশের ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের অলুয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত
পুলিশ সদস্য মোশারফ হোসেন সরকারের ছেলে। তিনি আগে আনন্দ টেলিভিশনের ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা
প্রতিনিধি ছিলেন। এছাড়া দৈনিক কুমিল্লার ডাক নামে স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে স্টাফ রিপোর্টার
পদে কর্মরত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার রাতে বুড়িচং
থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় মো. রাজু নামের এক ব্যক্তিকে প্রধান আসামি করা হয়েছে,
যাকে ব্রাহ্মণপাড়া ও বুড়িচংয়ের ভারত সীমান্তের শীর্ষ মাদক ও চোরাকারবারি বলে
পুলিশের ভাষ্য।
রাজু জেলার আদর্শ সদর
উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের সাদেক মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অস্ত্র, মাদক,
চোরাচালানের মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার
হলেও খুনের ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা য়ায়নি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজন
ও সহকর্মীরা। তাদের দাবি, মাদক বিরোধী অবস্থানের কারণে সাংবাদিক মহিউদ্দিনকে পরিকল্পিতভাবে
খুন করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বুড়িচং
থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “আমরা ঘটনার পর থেকেই আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান
চালিয়ে যাচ্ছি। মাদক কারবারি রাজুসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের
করেছেন নিহতের মা। তবে তদন্তের স্বার্থে আমরা এখন বাকি আসামিদের নাম প্রকাশ করছি না।
আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজুসহ সকল আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।”
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক
তদন্তে জানা গেছে ‘মাদক ব্যবসায়ীর’ গুলিতে সাংবাদিক মহিউদ্দিন মারা গেছেন। সুরতহালে
দেখা গেছে তার শরীরে মোট ছয়টি গুলি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে মরদেহের ময়নাতদন্ত
সম্পন্ন হয়েছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরে এদিন দুপুরে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে
পাঠানো হয়।
এদিকে, ঘটনার পর থেকেই
নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের কান্না থামছে না। তার
সহকর্মীদের মধ্যেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
বৃহস্পতিবার বিকাল
সাড়ে ৫টায় গ্রামের বাড়িতে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন
করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,
নিহত মহিউদ্দিন দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে বড় ছিলেন। ছোট ভাই হৃদয় সরকার সৌদি আরবে
থাকেন। একমাত্র বোন শারমিন আক্তার কুমিল্লা নগরীতে স্বামীর বাড়িতে থাকেন।
তাদের বাবা মোশাররফ
হোসেন বাংলাদেশ পুলিশে দীর্ঘদিন [৩৪ বছর] চাকরি শেষে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি অবসরে যান। তিনি
পুলিশের এএসআই ছিলেন।
মহিউদ্দিনের বাবা মোশাররফ
হোসেন সরকার বলেন, “আমি সব সময় ছেলেকে ন্যায়ের পথে থাকার কথা বলেছি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে
থাকতে বলেছি। আমার ছেলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিদের
গুলিতে মারা গেছে। আমি ছেলের খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
নিহতের মা নাজমা বেগম
বলেন, “মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিরা আমার ছেলেছে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে। আমি ছেলে
সব সময় মাদকের বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার ছিল। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।”
মহিউদ্দিনের দীর্ঘদিনের
বন্ধু স্থানীয় সাংবাদিক মাহফুজ বাবু বলেন, “মহিউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করছেন।
সব সময় মাদক ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করেছেন। এসব কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা
তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। তা থেকে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছি।”
বুড়িচং প্রেসক্লাবের
সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক জহিরুল হক বাবু বলেন, “শীর্ষ এক মাদক কারবারির নেতৃত্বে মহিউদ্দিনকে
হত্যা করা হয়েছে। হত্যার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখনও খুনিরা অধরাই রয়ে গেছে। খুনিদের দ্রুত
গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে শুক্রবার সকালে কুমিল্লা নগরী, বুড়িচংসহ জেলার বিভিন্ন
স্থানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। আমরা দ্রুত খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবি
জানাই।”
নিহতের পরিবারের সদস্য
ও স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত মহিউদ্দিন পুলিশ, র্যাব ও মাদকদ্রব
নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে তথ্য দিয়ে মাদকদ্রব্য জব্দ করতে সহায়তা করতেন। মাদক ব্যবসা নিয়ে
তিনি ফেসবুকে লেখালেখিসহ গণমাধ্যকে প্রতিবেদন করায় মাদক ব্যবসায়ীরা মহিউদ্দিনের ওপর
ক্ষিপ্ত ছিলেন। এ কারণেই মাদক ব্যবসায়ীরা বুধবার রাতে ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় গুলি করে
হিউদ্দিনকে হত্যা করেছে।