কোহলি, স্টিভেন স্মিথ, কেন উইলিয়ামসন ও জো রুট-সমসাময়িক এই চারজনকে একসঙ্গে ক্রিকেট দুনিয়ায় বলা হয় ‘বিগ ফোর’ কিংবা ‘ফ্যাবুলাস ফোর’ বা সংক্ষেপে ‘ফ্যাব ফোর।’ বিশ্ব ক্রিকেটে ব্যাট হাতে বছরের পর বছর দাপট দেখিয়ে চলেছেন তারা। গত কিছুদিন ধরে অবশ্য এখানে যুক্ত করা হয়েছে বাবর আজমকে। তাদেরকে একসঙ্গে বলা হচ্ছে ‘বিগ ফাইভ।’
টেস্ট ক্রিকেটে বরাবরই দারুণ ব্যাটিং শৈলী দেখানো কোহলি যদিও সেঞ্চুরি-খরায় ভুগছেন দুই বছরের বেশি সময় ধরে। সবশেষ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ২০১৯ সালের নভেম্বরে, কলকাতায় বাংলাদেশের বিপক্ষে। এরপর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো সংস্করণেই আর তিন অঙ্ক ছুঁতে পারেননি তিনি।
সবশেষ প্রকাশিত আইসিসি টেস্ট ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ে কোহলি নেমে গেছেন দশম স্থানে। এখন পর্যন্ত এই সংস্করণে তার সেঞ্চুরি ২৭টি, ফিফটি ২৮টি। ৪৯.৯৫ গড়ে রান ৮ হাজারের ওপরে।
লম্বা সময় ধরে সেঞ্চুরি দেখা না পেলেও কোহলির সামর্থ্য নিয়ে কোনো সংশয় নেই ওয়াটসনের। তার চোখে সাবেক ভারত অধিনায়ক ‘অতিমানব।’
ওয়াটসনের সেরার তালিকায় জায়গা হয়নি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর ব্যাটসম্যান মার্নাস লাবুশেনের। কারণ, মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়েছে অন্তত ৪০ টেস্ট খেলা ব্যাটসম্যানদের। লাবুশেন এখন পর্যন্ত খেলেছেন ২৬ টেস্ট। ৫৪.৩১ গড়ে রান করেছেন ২ হাজার ৩৯০।
আইসিসির ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ‘আইসিসি রিভিউ’ এর সবশেষ পর্বে সঞ্চালক ইসা গুহর সঙ্গে আলাপচারিতায় কোহলিকে সবার ওপরে রাখার ব্যাখ্যাও দেন ওয়াটসন।
“টেস্ট ম্যাচে আমি সব সময় বিরাট কোহলির নাম বলব।”
শেন ওয়াটসন
“সে যা করতে পারে তা প্রায় অতিমানবীয়, কারণ যখনই সে খেলতে নামে, তার মধ্যে লড়াকু ভাবটা থাকে।”
ওয়াটসন দুইয়ে রেখেছেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবরকে। গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে উন্নতি করা ক্রিকেটারদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় বাবরকে। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে পাঁচ নম্বরে থাকা বাবর সম্প্রতি ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ছিলেন দারুণ ছন্দে। তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ক্যারিয়ার সেরা ১৯৬ রানের ইনিংস খেলাসহ রান করেন মোট ৩৯০।
ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং সামর্থ্যে মুগ্ধ ওয়াটসন।
“যেভাবে সে তার খেলাটিকে কার্যকরভাবে টেস্ট ক্রিকেটের উপযোগী করে তুলেছে, তা দেখাটা চমৎকার। বাবর আজম সম্ভবত এই মুহূর্তে দুই নম্বরে থাকবে।”
ওয়াটসনের তালিকায় তিনে থাকা স্মিথও টেস্টে সেঞ্চুরি খরায় ভুগছেন। ২০১৯ অ্যাশেজের পর তিনি অঙ্ক ছুঁয়ে পেরেছেন কেবল একবার, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সিডনিতে ভারতের বিপক্ষে। ওয়াটসন মনে করেন, বোলারদের ওপর আগের মতো চাপ সৃষ্টি করতে পারছেন না র্যাঙ্কিংয়ে দুইয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান।
“মনে হচ্ছে স্মিথ আসলেই একটু বেশি সময়ের জন্য ফর্মে নেই। তার সেরা সময়ে বোলারদের ওপর যতটা চাপ তৈরি করতে পারত, তা এখন পারছে না। আমার কাছে, স্টিভ তালিকায় কিছুটা নিচে নেমে গেছে।”
চোটের কারণে গত ১২ মাসে মাত্র দুটি টেস্ট খেলতে পেরেছেন উইলিয়ামসন। এই সংস্করণে ২৪টি সেঞ্চুরি করা নিউ জিল্যান্ড অধিনায়কের সব কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্যই তাকে ওয়াটসনের তালিকায় স্থান করে দিয়েছে চারে।
“কেন ভেতরে ও বাইরে থেকে নিজের খেলাটা খুব ভালো বোঝে এবং যে কোনো কন্ডিশনে বোলারদের কীভাবে চাপে ফেলতে হয়, তা জানে।”
ওয়াটসনের তালিকায় পঞ্চম স্থানে আছেন রুট। টেস্ট ক্রিকেটে গত বছরটা ইংলিশ অধিনায়কের কাটে দুর্দান্ত। ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এক বছরে করেন ১ হাজার ৭০০ রান।
ওয়াটসনের কাছে রুটের ভালো লাগার দিকটি হলো, তিন অঙ্কের ছোঁয়া না পেলেও ইংল্যান্ড অধিনায়ক ৭০-৮০ রানের ইনিংস দিয়েও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।
“জো রুট সম্প্রতি সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছে, কিন্তু স্টিভ স্মিথের মতো সেও এমন কিছু সময় কাটিয়েছে, যেখানে আগের মতো বড় স্কোরের দেখা পায়নি।”
“বিশ্ব মানের ব্যাটাররা যেভাবে একটা ধারার মধ্য দিয়ে যায়, যখন তারা বড় শতক হাঁকানোর জায়গায় ৭০-৮০ রান করেও ম্যাচে প্রভাব রাখতে পারে, সেটা অবিশ্বাস্য।”