ক্যাটাগরি

নাটোরে ‘স্কুল কমিটির সভাপতির ভয়ে’ এলাকা ছাড়া প্রধান শিক্ষক

শুক্রবার বিকালে নলডাঙ্গা উপজেলার খোলাবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালাহ্ উদ্দিন রাজশাহীর উদ্দেশে নাটোর ছাড়েন।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি পূর্ণাঙ্গা না করায় তাকে ‘মারধরের’ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলেও তা রেকর্ড করা হয়নি। উল্টো মীমাংসার জন্য চাপ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন সালাহ্ উদ্দিন।

তবে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল আওয়াল প্রধান শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

নলডাঙ্গা থানা ও খোলাবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের থেকে জানা যায়, প্রায় দুই মাস আগে আব্দুল আওয়ালকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি।

প্রধান শিক্ষক সালাহ্ উদ্দিনের অভিযোগ, গত বুধবার দুপুরে আব্দুল আওয়াল ও তার অনুসারীরা বিদ্যালয়ে গিয়ে তাকে [প্রধান শিক্ষক] পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে বিলম্বের কারণ জানতে চান। এ নিয়ে উভয়পক্ষের তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে তাকে [প্রধান শিক্ষক] মারধর করেন তারা।

হামলাকারীদের হাত থেকে বাঁচাতে অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে সেখোনে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের দুই ভাই আব্দুল মতিন ও ফয়জুল ইসলামও আহত হন বলে তিনি জানান।

সালাহ্ উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় তিনি বৃহস্পতিবার সভাপতি, তার ভাই প্রভাষক আয়নাল হক, তাদের অনুসারী আব্দুল হাই, আলমগীর হোসেন ও মো. সেন্টুর নাম উল্লেখসহ আরও কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে নলডাঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দেন।

তিনি বলেন, শুক্রবার সকালে নলডাঙ্গা থানা ভবনে তাকে [প্রধান শিক্ষক] ও সভাপতিসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ডাকা হয়। সেখানে দীর্ঘ আলোচনা হলেও বিষয়টি মীমাংসা হয়নি। উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা হয়।

এরপরই নাটোর ছেড়ে রাজশাহীতে চলে যান এবং সেখানে আত্মগোপন করেন বলে জানান শিক্ষক সালাহ্ উদ্দিন।

সালাহ্ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, জীবনের নিরাপত্তা না থাকায় তিনি শুক্রবার বিকালে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।

তিনি বলেন, ওসি সাহেব মামলা রেকর্ড করার কথা বলে তাকে থানায় ডাকেন। তিনি একা সেখানে উপস্থিত হয়; অন্যদিকে প্রতিপক্ষের শতাধিক অনুসারী সেখানে জড়ো হন।

“ওসি সাহেব মামলা রেকর্ড না করে মীমাংসা করে নিতে বলেন। আমি শিক্ষক সমিতির নেতাদের সাথে কথা না বলে মীমাংসা না করার কথা জানাই। তখন প্রতিপক্ষরা আমাকে ভয়ভীতি দেখায়। নিরাপত্তাহীনতায় তখন আমি থানা থেকে বের হয়ে আসি।”

তবে সভাপতি আব্দুল আওয়াল প্রধান শিক্ষককে মারপিট করা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, “প্রধান শিক্ষক ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন সৃষ্টি করছেন। এ ব্যাপারে বুধবার কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আলোচনার জন্য আমি তার কাছে যাই। কিন্তু তিনি ভালো আচরণ করেননি; বরং মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন।”

নলডাঙ্গা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রধান শিক্ষকের লিখিত অভিযোগ পেয়ে প্রাথমিক তদন্ত করা হয়েছে। তাতে মারপিটের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই অভিযোগটি এখনো মামলা হিসাবে নেওয়া হয়নি।”

থানায় ডেকে মীমাংসা করতে বাধ্য করানোর চেষ্টা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি কাউকে মীমাংসার জন্য ডাকিনি। তাই মীমাংসার জন্য জোর করার প্রশ্নই ওঠে না।”

অভিযোগকারীকে থানায় ডেকেছিলেন কেন জানতে চাইলে বলেন, “ঘটনাটি শোনার জন্য ডেকেছিলাম।”

তাহলে প্রতিপক্ষরা শতাধিক লোক নিয়ে থানার গোল ঘরে কেন জড়ো হলেন জানতে চাইলে বলেন, “তাদের আসার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।”