ক্যাটাগরি

মুক্তিযুদ্ধে কূটনীতিকদের ‘অবদান’ স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখতে চাই: মোমেন

সোমবার ঢাকার ফরেইন সার্ভিস একাডেমিতে ‘ফরেইন সার্ভিস দিবস’ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “এই কাজটা আমরা খুব শিগগির করব।”

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের আগে যে সব কূটনীতিক মুজিবনগর সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন, তাদের স্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে একটি উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

“প্রত্যেকের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করে রাখা আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একান্ত প্রয়োজন,”- বলেন এ কে আব্দুল মোমেন।

২০১২ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশি কূটনীতিকদের সাহসী ও গৌরবময় অবদানের স্মরণে ১৮ এপ্রিল ফরেন সার্ভিস দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

১৯৭১ সালের এই দিনে কলকাতায় তৎকালীন ডেপুটি হাই কমিশনের ৬৫ জন বাংলাদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসকর্মী পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনের কার্যভার গ্রহণ করেন।

সেদিন পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রথম দূতাবাস প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবেই মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ফ্রন্টের যাত্রা শুরু হয়।

পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশে পাকিস্তান মিশনের অনেক বাঙালি কর্মকর্তা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। কেউ কেউ মুজিবনগর সরকারের কাজে যুক্ত হন, অন্যরা বিদেশের মাটিতে জনমত গড়ে তোলেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহাকুমার বৈদ্যনাথতলার আম বাগানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে।

মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য জনগণের নির্বাচিত সংসদের নেতৃত্বের সরকার পুরো বিশ্বের সামনে সেদিন আত্মপ্রকাশ করে। ১০ এপ্রিল গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয় সেদিন।

অনুষ্ঠানে সিঙ্গাপুর থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এই দিনটি ছিল আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরব ও সম্মানের।”

কূটনীতিকদের তৎপরতা বিশ্বজনমত গঠনে বড় ভূমিকা রেখেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা সেসব কূটনীতিকদের বড় আয়োজনের মাধ্যমে স্মরণ করার পাশাপাশি তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখতে চাই।”

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তরুণ বাঙালি কর্মকর্তাদের প্রলোভন দেখিয়েও পাকিস্তানের পক্ষে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এমন এক পরিস্থিতিতে তারা কিভাবে দৃঢ় ছিলেন সেটাই আমাকে ভাবিয়ে তোলে।”

স্বাধীনতা যুদ্ধে কূটনীতিকদের তৎপরতার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “তাদের মহান ভূমিকার জন্যই আজ আমরা কূটনৈতিক রেডিমেড প্ল্যাটফর্ম পেয়েছি। তাই আমরা তাদের অবদানকে স্মরণে রাখতে চাই।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমাদের স্বাধীনতাটা ছিল একটি জনযুদ্ধ। সেদিন আমাদের তিনজন রাষ্ট্রদূত পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে তাদের বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন।”

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিদ্রোহ করার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। নিউ ইয়র্কে পাকিস্তান কনস্যুলেটে কর্মরত থাকাবস্থায় ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল তিনি মুজিবনগর সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন।