মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে চট্টগ্রামের খাল খননের একটি প্রকল্প অনুমোদনের সময় তিনি এ বিষয়ে নির্দেশনাও দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
প্রধানমন্ত্রী করপোরেশনগুলোর মেয়রদের ঢাকার দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেদের আয় বাড়িয়ে নিজেদের পায়ের ওপর দাঁড়ানোর চেষ্টা করার তাগিদ দেন।
এসময় তিনি চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর উদাহরণ দেন।
আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন মেয়র থাকাকালীন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে আর্থিক ঘাটতি ছিল না, তার আমলে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল ছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী এসময় সাবেক এ মেয়রকে বিশেষভাবে স্মরণ করেন বলে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেকের এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন।
আলোচনা শেষে বৈঠকে চট্টগ্রামের ‘বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া হতে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন’ শীর্ষক ১৩৬২ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
এদিন বৈঠকে মোট ৪ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা ব্যয়ের ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
একনেক বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “বৈঠকে চট্টগ্রামের বহদ্দার হাট থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত খাল খননের একটি প্রকল্প ছিল। প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে আর্থিক ঘাটতি ছিল না। চমৎকার ছিল। কোনো ঘাটতি ছিল না।
“নতুন মেয়র মহোদয়কে বলবেন, আমরা আশা করব যে তার (মহিউদ্দিন চৌধুরী) মত শক্তিশালী ভূমিকা নিয়ে কাজ করবেন। আপনাদের চিন্তা করতে হবে, সে যেভাবে ফাইন্যান্সিয়ালি নিজেকে সাউন্ড করেছিল, আপনারাও করবেন। সরকার থেকে বেশি চাইবেন না।”
মান্নান বলেন, বৈঠকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে দীর্ঘ দিন ধরে কিছু লোক দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তাদেরকে আইন কানুনের আওতায় এনে সুযোগ দিয়ে রেগুরালাইজ(নিয়মিত) করার একটা ব্যবস্থা করতে হবে”।
বৈঠকে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ১২২ কোটি টাকার একটি প্রকল্পও পাস হয়। এ করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু সভায় উপস্থিত ছিলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী এই মেয়রকেও একই রকম নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
মান্নান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আয় বাড়িয়ে নিজেদের পায়ের ওপর দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। ঢাকার দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। এখন আপাতত প্রকল্প দেওয়া হলেও অবকাঠামোগতভাবে এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।”
প্রকল্প সংশোধনের কারণ খোঁজার নির্দেশ
এদিকে এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়া এবং বার বার প্রকল্প সংশোধনের কারণ চিহ্নিত করার নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি জনগণ ভালো চোখে দেখছে না বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী।”
এসময় মন্ত্রী বলেন, বাস্তবায়নে দুর্বলতার কারণে প্রকল্প সময়মত শেষ করা যায় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফলতির কারণেও যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় না।
এছাড়া আরও বেশ কিছু কারণে প্রকল্প সংশোধন করতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রকল্পের ব্যয় অনেক সময় হালনাগাদ করতে হয়। এটা নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন। আবার বিশ্বে পণ্যের দাম বাড়লে আমাদের প্রকল্পে তার প্রভাব পড়ে। রডের দাম বাড়লে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী কোভিডের প্রভাবেও বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়েছে।”
এডিপি বাস্তবায়ন
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ৯ মাসের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৪৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।
তিনি জানান, চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে প্রায় ৯৮ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৪৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
গত অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়নের এ হার ছিল ৪১ দশমিক ৯২ শতাংশ; টাকার অঙ্কে ৮৭ হাজার ৭৩৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা।