তার যোগদান উপলক্ষে মঙ্গলবার বিদ্যালয় মাঠে সম্প্রীতি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এখানে হৃদয় মণ্ডলকে ফুল দিয়ে সম্মান জানানো হয়।
বিজ্ঞানের ক্লাসে আলোচনার ঘটনায় ১৯ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত পান তিনি। এরপর আরও নয় দিন অপেক্ষার পর মঙ্গলবার তিনি কর্মস্থলে যোগদান করেন। পরে তিনি রুটিন অনুযায়ী দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞানের ক্লাস নেন।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল বলেন, “আমি আজ খুব খুশি। আমি আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠানে আবার ফিরে আসতে পেরেছি। ক্লাস করতে পারছি। এটি পরম পাওয়া। আমার খুব শান্তি লাগছে। আমি সব ভুলে গেছে। আবার সব নতুন করে আগের মতো সবার সাথে সস্প্রীতি রেখে শুরু করেছি।”
ছাত্রদের প্রতি তার কোনো কষ্ট বা ক্ষোভ নেই উল্লেখ করে বলেন, “ওদের আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যারা ব্যবহার করেছে, যারা এই ঘটনার পেছনের মাথা তাদের তো শস্তি হওয়া দরকার।”
সমাবেশে বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলমগীর হোসেন, প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ, মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবও বক্তব্য রাখেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, “শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল আজকে ক্লাসে গেছেন। এতে আমি খুব খুশি। একটি কুচক্রী মহল এই শিক্ষককে যেভাবে হেনস্তা করতে চেয়েছিল তাতে তারা সফল হয়নি – এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আজকে যেভাবে তাকে গ্রহণ করেছে এটাই তার প্রমাণ। আমি এক মাস তিন দিন দেশের বাইরে ছিলাম। আমি থাকলে হয়তো এ ঘটনা ঘটত না। আমার খুব খারাপ লেগেছে আমার অনুপস্থিতির সময়ে এই ঘটনা ঘটেছে।”
বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমার বিদ্যালয়ে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল হৃদয় মণ্ডল যোগদান করায় সেই শূন্যতা পূরণ হয়েছে। শিক্ষার্থীরাও খুশি হয়েছে। স্কুলের হাতেগোনা কয়েক শিক্ষার্থীর জন্য আমার স্কুলের সুনামও নষ্ট হয়েছিল; আজকে সমাবেশে আমরা দেখেছি আপামর ছাত্রছাত্রী শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটি, আশপাশের লোকজন সবাই এসেছে। তাদের ভুলটা তারা বুঝতে পেরেছে। আমরা আমাদের হারানো ঐতিহ্য যাতে আবার ফিরিয়ে নিতে পারি সেজন্য সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা কাজ করব।”
মুন্সীগঞ্জ পৌর মেয়র মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব বলেন, “আজকে সকল শিক্ষক শিক্ষার্থীদের যে মিলনমেলা সেটা অত্র এলাকার এবং স্কুলের দুষ্টদের দমন করতে অবশ্যই সাহায্য করবে। ছাত্র ও শিক্ষকদের এই ঘটনায় যে জড়তা সৃষ্টি হয়েছিল সেটা কাটানোর জন্য আজকের এই মিলনমেলায় আমরাও একত্রিত হয়েছি।”
তিনি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্দেশে তিনি শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের কোয়ার্টার এবং এর আশপাশে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন।
চলতি বছরের ২০ মার্চ
হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল বিজ্ঞান ক্লাস নেওয়ার সময় তার কথা অডিও রেকর্ড করে কয়েকজন
শিক্ষার্থী। পরে রেকর্ডটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
২২ মার্চ একদল
শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করে; তাদের সঙ্গে কিছু বহিরাগতও যুক্ত হয়। পরে
পুলিশ গিয়ে হৃদয় মণ্ডলকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। ওই রাতেই ধর্মীয় অনুভূতিতে
আঘাত ও ধর্মী বিশ্বাসকে অপমানিত করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ২৯৫/২৯৫ক ধারায় মুন্সীগঞ্জ
থানায় বিদ্যালয়টির অফিস সহকারী (ইলেক্ট্রিশিয়ান) মো. আসাদ মামলা করেন এবং হৃদয়
মন্ডলকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এ ঘটনায় সারা দেশে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ১৯ দিন কারাভোগের পর ১০ এপ্রিল তিনি জামিনে ছাড়া পান।
হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল প্রায় ২১ বছর ধরে বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও গণিত পড়াচ্ছেন।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বুধবার
শিক্ষা অধিদপ্তরের গঠিত এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি বুধবার প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানিয়েছে।
তদন্ত কমিটির একমাত্র সদস্য সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল হাই তালুকদার বলেন, পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল। তবে আগামীকাল বুধবার শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর রিপোর্ট পেশ করা হবে।
তদন্তের রিপোর্ট সম্পর্কে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। তবে সংশ্লিষ্ট সকলের সাক্ষ্য গ্রহণ করে প্রকৃত ঘটনাই তদন্ত রিপোর্টে তুলে ধরার চেষ্টা করেন বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন
বিদ্যালয়ে তদন্ত কমিটির সামনে হৃদয় মণ্ডল
হৃদয় মণ্ডল তদন্ত কমিটির সামনে যাচ্ছেন বুধবার
মামলার পেছনে টিউশনের রেষারেষি? হৃদয় মণ্ডলের তেমনই ইংগিত
পুরো পরিবারের নিরাপত্তা চান হৃদয় মণ্ডলের স্ত্রী
১৯ দিন পর জামিন পেলেন শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল
‘ফাঁসানো হয়েছে’, অভিযোগ হৃদয় মণ্ডলের পরিবারের