ক্যাটাগরি

খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট, সুষ্ঠু তদন্ত দাবি ব্যবসায়ীদের

বুধবার দুপুরে নিউ মার্কেট দোকান সমিতির কার্যালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, “আমরা ঘটে যাওয়া সুষ্ঠু তদন্ত
চাই এবং দোষীদের শাস্তি চাই।… অনেক ক্ষতি হয়েছে, এখন থেকেই আমরা
দোকানপাট খুলে দিতে চাই।”

ওই সংবাদ সম্মেলনের পর বিকাল ৩টা থেকে গাউছিয়া, বলাকা ভবন, চাঁদনী চকের
কিছু কিছু দোকান খুলতে শুরু করে। তবে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নিউ মার্কেটের কোনো দোকান তখনও
খোলেনি।

সোমবার
রাতে দুই দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে ঢাকা কলেজ ও নিউ মার্কেটের
দোকান মালিক ও কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার সারাদিন
সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হন, তাদের একজন হাসপাতালে মারা যান।

মঙ্গলবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ
রাখা হয় জানিয়ে নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন
সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই এলাকার সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা সত্ত্বেও একদল উচ্ছৃঙ্খল
জনতার দিনব্যাপী ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার মধ্য দিয়ে বেসরকারি খাতে কর্মরত একজন কর্মী
নিহত হন।

“এ ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাংবাদিক ও সংবাদ
কর্মীগণ। এ জন্য গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।”

এ ঘটনার শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রত্যাশা করে শাহীন বলেন, “আগামী কয়েক দিনের
মধ্যে ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং অত্র এলাকার ব্যবসায়ীসহ আলোচনার মাধ্যমে একটি কোর কমিটি
গঠনের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করব, যাতে করে যে কোনো ঘটনা আলোচনার ভিত্তিতে সুষ্ঠূ সমাধান
করতে পারি।

“এই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার
নিরপেক্ষ তদন্তের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”

ঢাকা কলেজকে একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্ণনা করে তিনি
বলেন, ” দেশের মেধাবী ছাত্ররাই এখানে লেখাপড়া করে। আমরা লক্ষ্য করছি, তুচ্ছ ঘটনাকে
কেন্দ্র করে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে।

“আপনারা জানেন, করোনাকালীন সময়ে বিগত দুই বছর যাবত ব্যবসায়ীরা চরমভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত, তাই আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াবার প্রাণপন চেষ্টা
করছে।”

ছাত্রদের নিয়ে কোনো ধরনের উসকানিমূলক কথা না বলার জন্য নিউ মার্কেট এলাকার
দোকান মালিক ও কর্মচারীদের প্রতি অনুরোধ জানান শাহীন।

তিনি বলেন, “পাশাপাশি ছাত্র-শিক্ষক ভাইদেরকেও সহনশীল আচরণ করার জন্য অনুরোধ
করছি।”

নিহত ও আহতদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দোকান মালিক সমিতির
এই নেতা বলেন, “সামাজিকভাবে যতটুকু দায়িত্ব নেওয়ার, ততটুকু নেব।”

খাবারের দুই দোকান ‘ক্যাপিটাল হোস্টেল’ ও ‘ওয়েলকাম’ দোকানের দুই কর্মচারীর
ঝগড়া থেকে এই ঘটনার সূত্রপাত্র বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

তবে মঙ্গলবার যারা মারামারি করেছেন, তারা ব্যবসায়ী নন দাবি করে সংবাদ
সম্মেলনে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল হেলাল উদ্দিন বলেন, “আমি নিশ্চিত
এখানে তৃতীয় পক্ষ কাজ করেছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে বের হয়ে আসবে- এরা কারা।”

‘সুরাহা না করে’ মার্কেট খুললে ফের বিক্ষোভ, হুঁশিয়ারি ঢাকা কলেজের ছাত্রদের

‘সুরাহা না করে’ মার্কেট খুললে ফের বিক্ষোভ, হুঁশিয়ারি ঢাকা কলেজের ছাত্রদের

 

সংঘর্ষের
কারণে সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত যানবাহন চলাচল সোমবার মধ্যরাত
থেকে বন্ধ ছিল। বুধবার সকালে গুরুত্বপূর্ণ ওই পথে আবার যান চলাচল শুরু হয়। সকালে
ঢাকা কলেজ গেইটে ছাত্রদের দেখা না গেলেও ক্যাম্পাসের পরিবেশ ছিল থমথমে।

দুপুরে
শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দেন, দোকান মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার
‘সমাধান করার আগে’ নিউ মার্কেটের দোকান খোলা হলে আবার তারা বিক্ষোভে নামবেন।

তাদের দাবি, ছাত্রদের উপর হামলা,
কলেজের প্রশাসনিক ভবনে গুলি, কাঁদুনে গ্যাস ছোড়াসহ গত দুই দিনের পরিস্থিতির জন্য
দায়ীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নিউ মার্কেট খোলা যাবে না।

ঢাকা
কলেজের শিক্ষকরা বুধবার সকাল থেকে বৈঠক করলেও সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা সেখান থেকে
আসেনি। 

দুপুরে
বৈঠক শেষে ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এটিএম মাইনুল হাসান বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা পরিকল্পনা করছি কীভাবে ছাত্রদের শান্ত রাখা যায়।
ছাত্ররা যাতে আর কোনো ঝামেলায় না জড়ায় সেই বিষয়টিতে যার যার অবস্থান থেকে শিক্ষকরা
নজরে রাখবে। তা ছাড়া ছাত্রদের সঙ্গেও আমরা কথা বলব।”

ব্যবসায়ীদের সংবাদ সম্মেলনের আগে পুলিশের নিউ মার্কেট জোনের এডিসি শাহেন
শাহ বলেন, “বর্তমানে এ এলাকার পরিস্থিতি শান্ত-স্বাভাবিক রয়েছে। ছাত্ররা আমাদের আহ্বানে
সাড়া দিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে গেছে, পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও শান্ত থাকতে বলেছি। পরিস্থিতি
শান্ত রাখতে যা যা করণীয়, পুলিশ সব করেছে।

“এতে ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সবাই আমাদের সহযোগিতা করেছেন।”

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ধীরে ধীরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে শুরু
করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কিছুক্ষণের মধ্যে সব দোকানপাট খুলে স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে
আমরা মনে করি।”

তবে ব্যবসায়ীদের মার্কেট খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত পুলিশের তরফ থেকে
দেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “স্ব স্ব মার্কেটের মালিক সমিতির নির্দেশনা অনুযায়ী
ব্যবসায়ীরা মার্কেট খুলছে।”

‘সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে’ নিউ মার্কেটে সংঘাত শুরুর ভিন্ন কারণ

ব্যস্ত নিউ মার্কেট এলাকায় দিনভর সংঘাত, কার কী দায়?