মঙ্গলবারের রক্তক্ষয়ী সংঘাত পেরিয়ে বুধবার সকালে ঢাকা কলেজের সামনের কয়েকটি বিপণি বিতানে সাদা পতাকা উড়িয়ে দোকান খোলা শুরু হয়েছিল। মিরপুর সড়কেও গাড়ি চলাচল করছিল।
তবে বিকালে ঢাকা কলেজের সামনে অন্তত এক ডজন হাতবোমার বিস্ফোরণের পর দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। সড়কে গাড়ি চলাচলও বন্ধ থাকে ঘণ্টাখানেক। পথচারীরা সরে পড়ে নতুন করে সংঘর্ষ বাঁধার শঙ্কায়।
বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে ও বাইরে পরপর ১০-১২টি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। দুটি বিস্ফোরণ ঘটে কলেজের সামনে সড়কের উপর।
এই বিস্ফোরণ কারা ঘটিয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বিস্ফোরণের সময় ঢাকা কলেজের ফটকের সামনে জড়ো হয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের হাততালি দিতে দেখা গেছে।
প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে ছিল সেখানে। পুলিশের একটি দল কলেজের দক্ষিণ পাশে চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের দক্ষিণ পূর্ব কোণে সামনে অবস্থান নিয়ে ছিল। একটি এপিসিও ছিল তাদের সঙ্গে। তার বিপরীতে গাউছিয়া মার্কেটের সামনেও ছিল এক দল পুলিশ। বিভিন্ন বিপণি বিতানের কিছু দোকানিও সেদিকে ছিল।
ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশে কর্তব্যরত পুলিশ পরিদর্শক গিয়াস উদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ পেয়েছি। যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।”
ওই এলাকায় আবার যেন সংঘর্ষ বাঁধতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বিস্ফোরণের পর সাড়ে ৫টার দিকে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের ভেতরে নিয়ে যান ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদ ও সেভেন কলেজ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার৷
চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণের শব্দ পেয়ে তিনি বেরিয়ে আসেন। তবে কারা বোমাগুলো ফাটিয়েছে, তা তিনি জানেন না।
“আমি ভেতরে বিস্ফোরণে শব্দ পেয়ে বেরিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের ভেতরে নিয়ে যাই।”
শিক্ষার্থীরা ভেতরে ঢুকে যাওয়ার পর সড়কে গাড়ি চলাচল পুনরায় শুরু হতে থাকে; যদিও কম গাড়িই দেখা যাচ্ছিল।
এই সঙ্কটের অবসানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে জানান ড. কুদ্দুস। তবে আলোচনার আগে দোকান খোলায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ইফতারে বসব। এভাবে আলোচনা না করে মার্কেট খোলে দেওয়ার ঘোষণা উচিত হয়নি। সব কিছু গুছিয়ে এনেছি, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।”
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সঙ্কটের সমাধানের আগে দোকান খুললে আবার বিক্ষোভে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল।
ব্যস্ত নিউ মার্কেট এলাকায় দিনভর সংঘাত, কার কী দায়?
সাদা পতাকা তুললেন নিউ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীরা
খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট, সুষ্ঠু তদন্ত দাবি ব্যবসায়ীদের
ঢাকা কলেজের সামনে হাতবোমা ফাটার পর ফের বন্ধ দোকান-সড়ক
গত সোমবার রাতে নিউ মার্কেটের একটি খাবার দোকানে ঢাকা কলেজের কয়েক শিক্ষার্থী মারধরের শিকার হওয়া থেকে এই ঘটনার সূত্রপাত।
এরপর মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে এক দফা সংঘর্ষ হয় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও দোকানকর্মীদের মধ্যে। মঙ্গলবার দিনভর ব্যাপক সংঘর্ষ চলে। তাতে এক পথচারী নিহত এবং অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়।
এই সংঘাতের কারণে ঈদের আগে বেচা-কেনার ভরা মৌসুমে ওই এলাকার ছোট-বড় মিলিয়ে ৭৫টির মতো বিপণি বিতানের ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে।
দুপুরে নিউ মার্কেট দোকান সমিতির কার্যালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, “আমরা ঘটে যাওয়া সুষ্ঠু তদন্ত চাই এবং দোষীদের শাস্তি চাই।… অনেক ক্ষতি হয়েছে, এখন থেকেই আমরা দোকানপাট খুলে দিতে চাই।”
ওই সংবাদ সম্মেলনের পর নিউ মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট ও চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট না খুললেও গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন, ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেটের কিছু দোকান খুলতে শুরু করে।
এর মধ্যে ঢাকা কলেজের বিপরীতে ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেটের উপরে তিনটি সাদা পতাকা, নূর ম্যানশনের ছাদে দুটি, নিউ মার্কেটের বিপরীতে গাউছিয়া মার্কেটের ছাদে একটি, ইসমাইল ম্যানশনের ছাদে দুটি সাদা পতাকা উড়তে দেখা যায়।
ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেটের ‘নীলিমা শাড়ি’ দোকানের এক কর্মচারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক ক্ষতি হয়েছে গত দুই দিনে, আর ক্ষতি চাই না। তাই শান্তির প্রতীক হিসেবে ছাদে পতাকা ওড়ানো হয়েছে।”
নূর ম্যানশনের ‘সালোয়ার কামিজ’ দোকানের মালিক শহিদুল বলেন, “দুই বছর করোনাভাইরাসের কারণে কাবু হয়ে গেছি, আর এই ঈদেই যা একটু ব্যবসা হয়। অন্য সময় কোনোরকম চলি- সমান সমান, লাভ হয় না।”