ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মঙ্গলবার ভোর আনুমানিক ৩টার দিকে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিস) ইউনিটের একটি বিশেষ দল মিরপুর সাড়ে ১১ এলাকা থেকে মাজেদকে গ্রেপ্তার করে।
দুপুরে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তোলা হলে বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এই দণ্ডিত আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সে সময় এজলাসে উপস্থিত আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আদালতে মাজেদের পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবী ও পাজামা। তার ওপরে বুলেট প্রুফ ভেস্ট ও মাথায় হেলমেট ছিল। কঠগড়ায় তার মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া বোঝা যায়নি।
আদালতে কোনো আইনজীবী মাজেদের পক্ষে দাঁড়াননি বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-কমিশনার জাফর হোসেন।
তিনি বলেন, আদালতের আদেশের পরপরই মাজেদকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এর আগে সকালে আবদুল মাজেদকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
মাজেদ ভারতে পালিয়ে আছেন বলে এর আগে বিভিন্ন সময়ে খবর এসেছে সংবাদ মাধ্যমে। তাকে সেখান থেকে পাঠানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা তাকে বাংলাদেশেই পেয়েছি। হয়ত করোনার ভয়ে চলে এসেছে।”
বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনি আবদুল মাজেদ গ্রেপ্তার
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে একদল সেনা সদস্য। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান কেবল বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে ফাঁসির রায় মাথায় নিয়ে পলাতক আবদুল মাজেদকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার কারাগারে পাঠানো হয়।
এরপর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিচারের পথ খোলে; মামলার পর বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর ফের শ্লথ হয়ে যায় মামলার গতি।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দণ্ডিত পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয় সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি)।
উপরে বাঁ থেকে ঘড়ির কাটার দিকে: খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, মোসলেহউদ্দিন খান, আব্দুল মাজেদ ও এম রাশেদ চৌধুরী।
কিন্তু ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া ছয় আসামি বিদেশে পলাতক থাকেন। তাদের বিষয়ে ইন্টারপোল থেকে রেড নোটিস জারি করে প্রতি পাঁচ বছর পরপর নবায়ন করা হচ্ছিল।
এরা হলেন- খন্দকার আবদুর রশিদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান। তাদের
মধ্যে মাজেদকে মঙ্গলবার কারাগারে পাঠানো গেল।
কে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বাটামারা গ্রামের আলী মিয়া চৌধুরীর ছেলে আবদুল মাজেদ ১৯৭৫ সালে ছিলেন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন। মামলার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন মাজেদ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৮০ সালের ২৬ মার্চ আবদুল মাজেদকে বিআইডব্লিউটিসিতে চাকরি দেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নিয়ে উপসচিবের মর্যাদায় তিনি বিআইডব্লিউটিসিতে যোগ দেন। পরে তাকে সচিব পদেও পদোন্নতি দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হলে আত্মগোপনে চলে যান মাজেদ। মাজেদের স্ত্রী সালেহা বেগম, চার মেয়ে ও এক ছেলে ঢাকা সেনানিবাসের এক নম্বর রোডের একটি বাসায় বসবাস করছেন। |
বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরীর কানাডায় অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার কথা সরকার আগেই জানিয়েছিল। তাদের ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করতে সরকারের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার তরফ থেকে সাড়া মেলেনি।
বাকিদের মধ্যে মাজেদ ভারতে এবং মোসলেম উদ্দিন পাকিস্তানে আছেন বলে তথ্য ছিল ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) কাছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলে ভারত বলেছিল, মাজেদ তাদের দেশে নেই। আর পাকিস্তান কোনো জবাব দেয়নি।
রশিদ ও ডালিমের অবস্থানের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য এখনও মেলেনি বলে এনসিবি’র দায়িত্বে থাকা সহকারী মহা পরিদর্শক মহিউল ইসলাম গতবছর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন আদালত প্রতিবেদক প্রকাশ বিশ্বাস]