বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠকের
পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা
বিষয়ক অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ।
এক প্রশ্নের জবাবে এদিন সকালে হিন্দু সম্প্রদায়ের এলাকা পরিদর্শনের
অভিজ্ঞতা তুলে ধরে রাশাদ হুসেইন বলেন, “তাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, সামগ্রিকভাবে হিন্দু ও মুসলিমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস
করছে।
“এমন অবস্থায় বাইরের কিছু লোক থাকে, যারা বিরোধ তৈরি করতে চায়।”
তিনি বলেন, “যারা বিভেদ তৈরির চেষ্টা চালায়, এ ধরনের বিভক্তি তৈরি করে তাদেরকে আমরা মেনে
নিতে পারি না এবং আমাদেরকে অবশ্যই একসাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে হবে।”
‘বাইরের বিভেদ সৃষ্টিকারী’ কাদের বলা হচ্ছে, এমন প্রশ্নে রাশাদ বলেন, “বড় সংখ্যার মানুষ শান্তিতে বসবাস করে এবং এমন কাজে
কারা জড়িত, সেই প্রশ্ন আমি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তের জন্য রাখছি।
“তবে, যারা মানুষকে একীভূত রাখার কাজ করে তাদেরকে অবশ্যই উৎসাহিত করতে হবে আমাদের
এবং যারা বিভক্তি ও সংঘাতে জড়াতে চায়, তাদেরকে নিন্দা জানাতে হবে।”
গত বছর দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লার মন্দিরে হামলার বিষয়ে এক প্রশ্নে
সফররত এই কূটনীতিক বলেন, “এটাতে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন এবং সরকারের দিক থেকে শক্ত বক্তব্যের ফলে আমরা বেশ
অনুপ্রাণিত।”
সফরের বড় অংশজুড়ে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা
তুলে ধরে তিনি বলেন, “গণহত্যার শিকার ও অচিন্ত্যনীয় দুর্ভোগ পেরিয়ে আসা এই মানুষদের অবস্থা বোঝার
চেষ্টা করেছি আমরা।
“ফেরত যাওয়ার আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও বাংলাদেশের স্বার্থে তাদের বসবাসের
সুন্দর পরিবেশ, তাদের আশা তৈরি, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি
এবং অর্থনৈতিক সুযোগের সৃষ্টি করতে হবে।”
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “তিনি বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির
প্রশংসা করেছেন এবং এটা যে চ্যালেঞ্জিং একটা এলিমেন্ট, পৃথিবীর সব দেশের জন্য, সেটা
আমরা খুব খোলামেলাভাবে আলাপ করেছি।
“দুর্ভাগ্যজনকভাবে, উপমহাদেশে রিলিজিয়াস সেনসিটিভিটিটা অন্য রকম ডাইমেনশন নিয়ে
ফেলে মাঝেমাঝে এবং এটাকে রাজনৈতির হাতিয়ার হিসাবেও ব্যবহার করা হয়।”
কুমিল্লায় মন্দিরে হামলা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন,
“আমাদের বর্তমান যে চ্যালেঞ্জ, কুমিল্লায়
যে ঘটনাটি ঘটেছে এবং তার পরপর আমরা যে ব্যবস্থা নিয়েছি, তিনি সাধুবাদ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরা হয় জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন “এই ঘটনাগুলো কেন ঘটেছে, সেটা বলতে
গিয়ে আমি বলেছি যে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থান একটা সময় বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল।
“যেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এটাকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা
করেছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সফল হয়েছে। এটা ধারাবাহিকভাবে চলবে।”
এসময়
রোহিঙ্গাদের জীবিকা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের
আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূতের সঙ্গে আলোচনার বিস্তারিত তুলে ধরেন
শাহরিয়ার আলম।
তিনি বলেন, “একটা জীবিকার ব্যবস্থা
যেটা, ভাসানচরে তাদের কাজ, তাদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ- এই বিষয়গুলিতে বাংলাদেশকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছেন।
“আমরা বলেছি, এটা আমাদের সক্রিয় বিবেচনায় আছে, আমরা ক্রমান্বয়ে সেটা করেছি কিছুটা।”
চারদিনের সফরে রোববার ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা
বিষয়ক বিশেষ দূত রাশাদ হুসেইন। দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অ্যান্টনি ব্লিংকেনেরও প্রধান উপদেষ্টা তিনি।