এবারের পরীক্ষা প্রক্রিয়া ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে’
পরিচালনা করা হবে জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির
হোসেন বলেছেন, এ নিয়োগে অনিয়মের
কোনো ‘সুযোগ এবার নেই’।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ
সম্মেলনে এ পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি জানান,
প্রথম ধাপে শুক্রবার
২২ জেলায় ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ জন চাকরিপ্রত্যাশী এ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেবে।
নিয়োগ বিধি অনুসরণ করে ‘স্বচ্ছতা
ও নিরপেক্ষতার’ সাথে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রার্থীদের রোল নম্বর,
আসন বিন্যাস, প্রশ্নপত্র প্রেরণ ও মুদ্রণ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফলাফল প্রস্তুতসহ যাবতীয়
কাজ সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো ধরণের অবৈধ হস্তক্ষেপের
সুযোগ নেই।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কেউ অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেয়ার
প্রলোভন দেখালে তাকে পাশের থানায় সোপর্দ করুন। অথবা থানা বা গোয়েন্দা সংস্থাকে অবহিত
করার অনুরোধ করছি।”
মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন
শিক্ষক নিয়োগে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সেজন্য শিক্ষক নিয়োগে
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। অন্যথায় মানসম্মত শিক্ষক পাওয়া যাবে
না এবং তাদের হাতে গড়ে উঠা প্রজন্মের কাছ থেকে কাঙ্খিত সেবা পাওয়া যাবে না।”
সহকারী শিক্ষকের ৩২ হাজার ৫৭৭টি শূন্যপদে
নিয়োগের জন্য সরকার ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু মহামারীর
কারণে তখন আর পরীক্ষা নেওয়া যায়নি।
ইতোমধ্যে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষক
অবসরে গেছেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষক ঘাটতি
হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যহত হচ্ছে।
“এ সমস্যার নিরসর করতে পূর্বের
বিজ্ঞপ্তির পরের শূন্যপদ মিলিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ নিয়োগ পরীক্ষা আগামী ২২ এপ্রিল থেকে তিন ধাপে, তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া, ৬১ জেলায়
শুরু হতে যাচ্ছে।”
তিন ধাপের এই পরীক্ষার প্রথম ধাপে
শুক্রবার (২২ এপ্রিল) ১৪ জেলার সব পরীক্ষার্থী এবং ৮ জেলায় আংশিক পরীক্ষা হবে।
দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা হবে আগামী ২০
মে। এ ধাপে ৮ জেলার সব পরীক্ষার্থী এবং ২২ জেলার আংশিক পরীক্ষা হবে।
তৃতীয় ও শেষ ধাপের পরীক্ষার তারিখ
এখনো নির্ধারিত হয়নি। ওই ধাপে পরীক্ষা হবে ৩১ জেলায়। এর মধ্যে ১৭ জেলার সব
পরীক্ষার্থী এবং ১৪টিতে আংশিক পরীক্ষা হবে।
লিখিত পরীক্ষায় উৎরানোর পর মৌখিক
পরীক্ষার মাধ্যমে জুলাইয়ের মধ্যে নতুন শিক্ষকরা নিয়োগ পাবেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী
বলেন, বর্তমানে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এতে
অনুমোদিত শিক্ষক পদ রয়েছে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৭০১টি।
তিন ধাপে মোট এক হাজার ৮১১টি কেন্দ্রে
পরীক্ষা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “সুশৃঙ্খলভাবে পরীক্ষা পরিচালনার জন্যই ৩ ধাপে
আয়োজন করা হয়েছে।”
২০১৯ সালের নিয়োগবিধি অনুযায়ী শিক্ষক
নিয়োগে ৬০ শতাংশ থাকবে নারী কোটা, ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা এবং ২০ শতাংশ পুরুষ কোটা
(সাধারণ কোটা)।
আর সব কোটাতে বিজ্ঞান বিভাগের ২০
শতাংশ কোটা আছে। অর্থাৎ প্রত্যেক কোটা থেকে যারা নির্বাচিত হবেন, তাদেরকে বিজ্ঞান
বিভাগ থেকে আসতে হবে।
কোটার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে প্রাথমিক ও
গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, “এটি ২০১৯
সালের নিয়োগবিধি। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক নিয়োগ অন্য চাকরির মত নয়। এটি ট্র্যাডিশনালি
হয়ে আসছে। সরকার যদি বিবেচনা করে, সরকার ইতোমধ্যে অন্যান্য চাকরির ক্ষেত্রে বিবেচনা
করেছে।
“আমরা নিয়োগবিধি করার সময় জনপ্রশাসন
মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়েছিলাম, অন্য কোটা বাদ দেওয়ার সময় আবার মতামত নিয়েছিলাম,
তারা বলেছে যে নিয়োগবিধি অনুযায়ী করবেন। তবে সরকার যে কোটাগুলো তুলে দিয়েছে,
সেগুলো এখানে প্রযোজ্য হবে না।”
নিয়োগবিধি পরিবর্তন বা সংষ্কারের
উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, “আইন তো যুগের প্রয়োজনে
পরিবর্তনযোগ্য। সরকারের যদি পলিসি সিদ্ধান্ত হয় সেক্ষেত্রে সেটি ভবিষ্যতের
বিষয়।”