বৃহস্পতিবার গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার সংবাদ সম্মেলনে জানান, বুধবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এরা হলেন- হেনরি ওসিতা ওকেচুকু, চিসম ইমানুয়েল ওবাইজুলু, ওকাকে পিটার, ওবিনা সান্ডে, ওনেকা এমবা, চিছম অ্যান্থনি ইকুয়েনযে, ওকেয়া আজুবিকে, অনুয়ারাহ ওযুয়েমেনা ডানিয়েল, অনুরুকা জিনিকা ফ্রান্সিস, লুকে, ডোমাডু চিনেডো।
গ্রেপ্তার অপরজন বাংলাদেশি চাঁদনী আক্তার নিজেকে কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে ‘ভুয়া পরিচয়’ দিতেন বলে জানান তিনি।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, হেনরি ওসিতা ওকেচুকু এবং চিসম ইমানুয়েল প্রতারক চক্রটির প্রধান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এই দুইজনই মূলত বাংলাদেশি সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাতকৃত টাকা গ্রহণ করে তা সবার কাছে বণ্টনের দায়িত্ব পালন করেন।
“অন্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের ইউরোপ-আমেরিকার নাগরিক হিসেবে ভুয়া পরিচয়ে আইডি খুলে বাংলাদেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলত।”
তাদের প্রতারণার কৌশল বর্ণনা করে হাফিজ আক্তার বলেন, “এই চক্রটি একটি বক্সে কয়েকটি বৈধ ডলার প্রকাশ্যে রেখে এবং সিলভার কাপড়ে মোড়ানো কয়েকটি বান্ডেল (যেখানে কোনো ডলার নেই, বিভিন্ন দ্রব্য থাকে) দেখিয়ে একটা অংক উল্লেখ করে সমপরিমাণ টাকা রাখা হলে তা ডলারে পরিণত হবে বলে প্রলোভন দেখাত।”
তিনি বলেন, “এ প্রলোভনে পড়ে অনেকেই টাকা খুইয়েছেন।”
গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে একটি ‘ডলার ট্রিক’ মেশিন, প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা ১৭টি মোবাইল ফোন, দুটি ল্যাপটপ, রাসায়নিকের বোতল, বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টের কপি উদ্ধার করা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি নানা উপায়ে প্রতারণা করে আসছিল জানিয়ে হাফিজ আকতার বলেন, “বন্ধু হিসেবে সখ্যতা তৈরি করে উপহার পাঠানোর নামে কিংবা বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়েও তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন।”
প্রতারণায় চাঁদনী আক্তার ছাড়াও আরও কয়েকজন বাংলাদেশি জড়িত রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
“কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে চাঁদনী ওই চক্রটির সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে প্রতারণার কৌশল হিসেবে বিদেশিদের পাঠানো উপহার-ডলার বা পাউন্ড ছাড়িয়ে নিতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা আদায় করতেন।”
চক্রের সদস্যরা ইউরোপ-আমেরিকার সেনা কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করার কৌশল অবলম্বন করতেন বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার।
হাফিজ আক্তার বলেন, “একপর্যায়ে বাংলাদেশে গিফট পাঠিয়েছে অথবা টার্গেট ব্যক্তিকে ব্যবসায়িক অংশীদার করার কথা বলে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ হাতিয়ে নিত।”
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং এ চক্রের বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানায় গোয়োন্দা পুলিশ।