তবে শুক্রবার দুপুরের এসময়টায় শুরু হওয়া হঠাৎ বৃষ্টিতে ঘটে ছন্দপতন। ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় বিপাকে পড়েন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী এবং দোকান মালিক ও কর্মীদের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে চলা সংঘাতের পর সমঝোতায় এসে দোকানপাট খোলার দ্বিতীয় দিনে ক্রেতা সমাগমে সকালের ভাগেই স্বাভাবিক কেনাবেচায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে নিউ মার্কেট এলাকার বিপণী বিতানগুলো।
এদিন সকাল থেকেই ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়তে থাকায় ঈদের বাজারে বেচাকেনা আশানুরূপ হচ্ছিল বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
দুপুরে নিউ মার্কেট, চন্দ্রিমা মার্কেট, চাঁদনী চক, নূরজাহান মার্কেট, গ্লোব শপিং সেন্টারে ক্রেতাদের বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু দুপুর সাড়ে ৩টা থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় লোকজন বিভিন্ন মার্কেটের ভেতর আটকা পড়ে যান।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দোকান মালিক ও কর্মচারীদের সংঘর্ষের পর বৃহস্পতিবার নিউ মার্কেটের আশেপাশের বিপণিবিতানও খুলেছে। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
প্রায় দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে ওই এলাকার ফুটপাতের দোকানগুলোও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন বিক্রেতারা।
ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নিউ মার্কেটে কাপড়-চোপড়সহ বেশ কিছু দোকানপাটে মালামাল খোলা আকাশের নিচেই রেখে বেচাকেনা করছিলেন দোকানিরা। এছাড়া অধিকাংশ দোকানের মালামালের পসরা বাইরেও সাজিয়ে রেখে চলে কেনাবেচা।
হালকা বৃষ্টি হলে পলিথিনের সামিয়ানা টানিয়ে বেচাকেনা চললেও ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বাইরের কিছু কিছু দোকানপাট সেই সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়। আবার কোনো কোনো দোকানি পলিথিনের সামিয়ানা দিয়ে বেচাকেনা অব্যাহত রেখেছেন। বৃষ্টির মধ্যেই কাক ভেজা হয়ে বহু ক্রেতাকে ঘুরে ঘুরে পছন্দের জিনিস খুঁজতে দেখা যায়।
নিউ মার্কেটের তৈরি পোশাক বিক্রেতা শরিয়তপুরের মো. সুমন বলেন, “মারামারির কারণে দুদিন দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে। কিছু দুষ্টু লোকের জন্য আমরা ব্যবসা করতে পারিনি। কাল (বৃহস্পতিবার) থেকে দোকান খুলছি। আজ সকালের দিকে কাস্টমার বেশ ভালোই ছিল, বেচাকেনাও হচ্ছিল; কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কাস্টমারও চলে গেছে, দোকান বন্ধ করে বৃষ্টি থেকে মালামাল রক্ষার চেষ্টা করতেছি।”
এ মার্কেটের নারীদের পণ্যের দোকান পপুলার এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্বাস আলী বলেন, “আমাদের কপালই খারাপ। দুই দিন বন্ধের প্রভাব কাটিয়ে ওঠার আগেই আবার শুরু হল বৃষ্টি। বৃষ্টি দেখলে তো কাস্টমার ঘর থেকে বের হতে চাইবে না।”
সংঘাতের পর বৃহস্পতিবার থেকে নিউ মার্কেটসহ আশপাশের এলাকা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে বলে জানান তিনি। তবে খোলার পর প্রথম দিন কী হয় না হয় এ ভয়ে ক্রেতা দর্শনার্থী ছিল কম।
আব্বাস বলেন, “শুক্রবার সকাল থেকেই মার্কেট ভরা কাস্টমার, কিন্তু বৃষ্টির কারণে তারা যে যেখানে ছিলেন সেই জায়গাতেই আটকা পড়েছেন। বৃষ্টি যদি থামে তাহলে হয়তো আবার বেচাকেনা শুরু হবে।”
বৃষ্টিতে ভিজে এক দোকান থেকে আরেক দোকানে যাচ্ছিলেন সূত্রাপুর থেকে আসা রফিকুল আলম ও তার স্ত্রী।
তিনি বলছিলেন, “না আজকে আর হবে না, ভিজেই গেলাম। আরেক দিন আসবো।”
দুদিন আগেও এ এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষের বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থেকে আসা আনোয়ারা, বিলকিস, মোমেনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, খবরে দেখেছেন বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে। তাই তারা এসেছেন, মার্কেটে এসেও দেখেছেন সব স্বাভাবিক আছে।
নিউ মার্কেটে সংঘাত: দুই হত্যা মামলা যাচ্ছে ডিবিতে
নিউ মার্কেটে সংঘাত: যে দুই দোকান থেকে সূত্রপাত, তার মালিক মকবুল প্রধান আসামি
ঈদের বেচাবিক্রির মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের কারণে নিউ মার্কেটসহ আশপাশের বিপণী বিতানগুলো সোমবার রাতে আগেভাগেই বন্ধ হয়ে যায়। থেমে থেমে চলা দুদিনের সংঘাত থামে বুধবার শেষ রাতের সমঝোতা বৈঠকের পর। এরপর বৃহস্পতিবার থেকে এ এলাকার দোকানপাটগুলো খুলতে শুরু করে।
প্রথমদিন ক্রেতা সমাগম কিছুটা কম হলেও শুক্রবার সকাল থেকে মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে।
সোমবার সন্ধ্যায় নিউ মার্কেটে পাশাপাশি স্থাপিত ‘ক্যাপিটাল’ ও ‘ওয়েলকাম’ নামে দুই রেস্তোরাঁর ইফতারির টেবিল সাজানো নিয়ে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হলেও পরে এক পক্ষের ফোনে ঢাকা কলেজের কয়েজন ছাত্র এসে তাতে যোগ দেয়। এরপর তা মার্কেটের মালিক-কর্মী ও ছাত্রদের সংঘাতে রূপ নেয়।
মঙ্গলবার সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে নাহিদ হাসান নামে একজন ডেলিভারিম্যান সেদিন রাকে মারা যান। এরপর মোরসালিন নামে আহত এক দোকানকর্মীর মৃত্যু হয় বৃহস্পতিবার।
এসব ঘটনায় নিউ মার্কেট থানায় দায়ের করা চারটি মামলার মধ্যে দুটি করেছে পুলিশ। একটি করেছেন সংঘর্ষে প্রাণ হারানো নাহিদ হাসানের চাচা মো. সাঈদ।
দোকান কর্মচারী মোরসালিন নিহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে আরেকটি হত্যা মামলা হয়েছে।
এদিকে শুক্রবারও ‘ক্যাপিটাল’ ও ‘ওয়েলকাম’ রেস্তোরাঁ দুটি বন্ধ থাকতে দেখা যায়। তবে এ মার্কেটের অন্যান্য ফাস্টফুডের দোকান খোলা রয়েছে।