ক্যাটাগরি

টুইটারের জন্য মাস্কের ৪৬.৫ বিলিয়নের উৎস কী?

বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা প্রস্তাবে উল্লিখিত প্রায় চার হাজার ছয়শ ৫০ কোটি ডলারের দুই তৃতীয়াংশই তার নিজস্ব সম্পদ থেকে আসবে বলে উল্লেখ রয়েছে। বাকিটা টুইটারের সম্পদের বিপরীতে ব্যাংক ঋণ থেকে আসার কথা প্রতিবেদনে বলেছে রয়টার্স।

প্রচলিত অধিগ্রহন ফর্মুলার সঙ্গে একেবারেই মিল নেই মাস্কের এই রূপরেখার, বরং উল্টো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন বিনিয়োগের বেশিরভাগ অর্থ আসে কোম্পানির সম্পদের বিপরীতে ব্যাংকের ঋণ থেকে।

‎মাস্কের প্রস্তাবে যে ব্যাংকগুলো সমর্থন দিচ্ছে, তারা টুইটারের বিপরীতে এর চেয়ে বেশি ঋণ দিতে রাজী হয়নি। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্ররা রয়টার্সকে বলছেন, ব্যাংকের যুক্তি হচ্ছে- স্যান ফ্রান্সিসকো-ভিত্তিক এই সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানটি এমন কোনো বড় আয়প্রবাহ তৈরি করতে পারেনি যার ফলে এর চেয়ে বেশি ঋণ দেওয়া যায়। এর চেয়ে বড় ঋণ দিতে গেলে আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর তোপের মুখে পড়ার ভয়ও কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন সূত্র।

এর প্রভাব গিয়ে পরবে মাস্কের আয়েও। কারণ, প্রতিষ্ঠানের সম্পদের বিপরীতে ব্যাংকের ঋণ সুরক্ষা লাভের পরিমাণ যথেষ্টই বাড়িয়ে তোলে।

এরইমধ্যে টেসলায় শেয়ারের বিপরীতে প্রায় এক হাজার দুইশ ২৫ কোটি ডলারের ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ নেওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন মাস্ক, যে অর্থ গিয়ে হবে তিন হাজার তিনশ ৫০ কোটি ডলারের ইক্যুইটির অংশে। এসইসিতে জমা দেওয়া নথি বলছে, টেসলার শেয়ার মূল্য শতকরা ৪০ ভাগ কমে গেলে ওই ঋণের অর্থ মাস্ককেই শোধ করতে হবে।

অবশ্য গেল সপ্তাহেই মাস্ক বলেছেন, এই বিনিয়োগের আর্থিক খুঁটিনাটি নিয়ে তিনি একেবারেই আগ্রহী নন। তার বিবেচনায়, এই অধিগ্রহন তিনি এগিয়ে নিতে চান, কারণ, ‘এই সভ্যতার ভবিষ্যত বিবেচনায় এটি অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ।’

“মাস্ক যেমনটা বলেছেন, তার সঙ্গে এটা মেলে” – বলছেন কলাম্বিয়া ল’ স্কুলের অধ্যাপক এরিক টালি। তিনি বলছেন, প্রস্তাবিত এই বিনিয়োগ কাঠামো মাস্কের সঙ্গে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর জন্য ইক্যুইটি পর্টনার হিসেবে যোগ দেওয়া কঠিন করে তুলবে। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই মূলত লাভ বাড়ানোর জন্য নির্ভর করেন সমস্যাগ্রস্থ কোম্পানির ওপর।

এ বিষয়ে মন্তব্য করার অনুরোধে মাস্ক কোনো সাড়া দেননি।

ফোর্বসের হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ‎মাস্কের সম্পদ ২৭ হাজার কোটি ডলার। তবে এর বেশিরভাই রয়েছে টেসলার শেয়ার আকারে। আর, টুইটারের   প্রস্তাবিত বিনিয়োগে এগিয়ে গেলে তার নাগালে থাকা তরল অর্থ প্রায় শুকিয়ে যাবে।‎

‎তিনি এরইমধ্যে টেসলায় শেয়ারের বিপরীতে চার হাজার চারশ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছেন। এখন টুইটার প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে গেলে এই ঋণের আকার গিয়ে দাঁড়াবে ১৫ হাজার কোটি ডলারে। আর সেটি ঘটলে এর পর তার জন্য ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে উঠবে। কারণ, টেসলা নির্বাহীরা তাদের শেয়ারের বিপরীতে শতকরা ২৫ ভাগের বেশি ঋণ নিতে পারেন না।‎

‎টুইটারের জন্য অর্থায়নের বিষয়টি তার জন্য ব্যয়বহুলও হবে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে জমা দেওয়া নথি বলছে, এই ঋণ পরিশোধ আর  সুদের জন্য ইলন মাস্ককে বার্ষিক প্রায় একশ কোটি ডলার ব্যয় করতে হতে পারে।‎

প্রস্তাবনায় উল্লিখিত যে দুই হাজার একশ কোটি ডলার নগদ দেওয়ার কথা মাস্ক বলেছেন, সেই অর্থ কত দ্রুত তিনি একত্র করতে পারবেন সেটিও প্রশ্ন হিসেবে ওজনদার। তাকে এজন্য স্পেসএক্স বা বোরিং কোম্পানির শেয়ার বেচতে হবে কি না সেটিও পরিষ্কার নয়।

আর, এ বিষয়েই মনোযোগ দিচ্ছে টুইটার বোর্ড। তারা ঠিক করছেন, আর্থিক বিনিয়োগের উৎস নিয়ে মাস্ককে আরও বিস্তারিত তথ্য দিতে বলবেন।

এ বিষয়ে একজন টুইটার মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।

অন্যদিকে জাপানি প্রযুক্তি-বিনিয়োগ জায়ান্ট সফটব্যাংক টুইটারে বিনিয়োগ প্রশ্নে হাত গুটিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে ঋণ ছাড়াই বড় বিনিয়োগের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে সফটব্যাংকের।

সফটব্যাংক প্রতিনিধিও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।