ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন বা অরকা নামের সংগঠনটি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসব শিশুদের নিয়ে এসেছে তাদের গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের হোমসে।
২০১৪ সালের ২২ ডিসেম্বর হোসেনপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনীর কর্মকর্তা এস আই এম জাহান ইয়ারের প্রচেষ্টায় স্থাপিত হয় এই ‘অরকা হোমস‘। শিশুদের লেখাপড়া ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
অরকা হোমস কর্তৃপক্ষ জানায়, সেসময় প্রায় এক কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনতলা দুটি এবং প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে চারতলা একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। এখানে ৩২ জন ছেলে ও ২৪ জন মেয়ে রয়েছে।
এসব শিশু-কিশোর লেখাপড়া করছে অরকা হোমস ক্যাম্পাসে অবস্থিত হোসেনপুর মুসলিম একাডেমিতে। একাডেমিতে রয়েছে প্লে থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থা। এই একাডেমিতে রয়েছেন প্রায় ৪০০ জন ছাত্রছাত্রী ও ২০ শিক্ষক।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এই শিল্প দুর্ঘটনার দিনটি ছিল ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আট তলা রানা প্লাজা ধসে নিহত হন এক হাজার ১৩৫ জন; প্রাণে বেঁচে গেলেও পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় আরও হাজারখানেক গার্মেন্ট শ্রমিককে।
গাইবান্ধা শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের হোসেনপুর গ্রামে শনিবার গিয়ে দেখা যায়, প্রকৃতিঘেরা পরিবেশে অরকা হোমস কার্যালয়। ভিতরে আবাসিক ভবন, স্কুল, মসজিদ ও খেলার মাঠ। ভিতরে পরিপাটি কক্ষ। উন্নত পয়:নিস্কাশন ব্যবস্থা। বিছানা আসবাবপত্র উন্নত।
শিশুরা কেউ পড়াশোনা করছে, কেউ খেলাধুলা করছে। সবার মধ্যে আনন্দ।
তারা জানায়, ঈদে সবাই বাড়ি যায়। তারা যেতে পারবে না, এতে তাদের দুঃখ নেই। এখানেই তারা আনন্দে ঈদ উদযাপন করবে।
অরকা হোমসে বেড়ে উঠা রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার খেয়াডাঙ্গা গ্রামের সাগরিকা মিম জানায়, ভবন ধসে সে মা জাহানারাকে হারিয়েছে। বাবা দুখু মিয়া দ্বিতীয় বিয়ে করার পর খাওয়া-থাকার খুব সমস্যা হচ্ছিল। তিন বছর ধরে সে এখানে ভাল আছে। এখন দশম শ্রেণিতে পড়ছে। লেখাপড়া শিখে সে প্রকৌশলী হবে।
একই জেলার পীরগাছা উপজেলার অভিরাম গ্রামের আল-আমিন জানায়, ভবন ধসে তার মা ফাতেমা মারা যান। এর আগেই বাবা মারা যান। তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় সে এখানে এসেছে। এখন সে দশম শ্রেণির ছাত্র।
আল-আমিন বলে, এখানকার পরিবেশ খুবই চমৎকার।
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মারমা গ্রামের স্বপন ইসলাম এখানে আছে সাত বছর ধরে। এখন সে দশম শ্রেণিতে পড়ছে।
সে বলে, “ভবন ধসে মাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ি। অরকা হোমস থাকা-খাওয়া ও লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছে। ভাল আছি।”
অরকা হোমস এর তদারকির দায়িত্বে থাকা মিল্লাত মণ্ডল বলেন, শিশুরা যেন বাবা-মার মতো স্নেহ পায়, সেজন্য খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে।
তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত আরেকজন নুরজাহান বেগম বলেন, মেয়েদের পৃথক ভবনে রেখে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হয়ে থাকে।
অরকা হোমস পরিচালক জাহেদুল ইসলাম বলেন, সাতজন কর্মকর্তা-কর্মচারী শিশু-কিশোরদের তদারকি করছেন। এখানে বসবাসকারী শিশুদের লেখাপড়া শেষে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, দুইজন চিকিৎসক সপ্তাহে দুইদিন এখানে এসে শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এসবের পাশাপাশি শীতবস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ প্রভৃতি সামাজিক কাজও করে থাকে অরকা।
অরকা হোমস এর মূল উদ্যোক্তা জাহান ইয়ার বলেন, মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই এই কর্মসুচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এর পরিধি আরও বাড়বে।