ক্যাটাগরি

ইছামতির তীরে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে ফের অভিযান

জেলা
প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার সকালে শহরের শালগাড়ীয়া
গোলাপবাগ এলাকায় উচ্ছেদ কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ সময় নদী দখল
করে তোলা কয়েকটি বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়।

পাউবো পাবনার
উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহীন রেজা বলেন, পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে
দখল ও দূষণে মৃতপ্রায় ঐতিহ্যবাহী ইছামতি নদী অবৈধ দখলমুক্ত ও পুনঃখনন করে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে
আনার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

এই কর্মকর্তা আরও
বলেন, “আইনি বাধার কারণে তা বারংবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। হাইকোর্ট নদীতে স্থাপনা গড়া ৪৩ ব্যক্তির রিট
আবেদন খারিজ করে দেওয়ায় আমরা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি।

নিম্ন আদালতে
আরও পাঁচটি মামলা রয়েছে। এ মামলাগুলোও নিষ্পত্তির পথে। আমরা দ্রুতই ইছামতি নদীকে
অবৈধ দখলমুক্ত করার কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।”

জেলা
প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল হাসান জানান, হাইকোর্টের রিট খারিজের পর
জেলা পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে নদী উদ্ধারে পুনরায় অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

“সিএস
ম্যাপ অনুযায়ী নদী পুনরুদ্ধার করা হবে।”

এদিকে অভিযান
চলাকালে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন। তাদের বক্তব্য, অবৈধ দখল হিসেবে চিহ্নিত
হওয়ার আগে দীর্ঘদিন ধরে তারা তাদের জমির কর ও খাজনা দিয়েছেন। এখন উচ্ছেদ অভিযানে
‘ক্ষতিপূরণ’ দাবি করেন তারা।

পাবনা
রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান স্বপন জানান, শহরের মাঝখান দিয়ে
প্রবাহিত ইছামতি নদীকে বলা হতো ‘পাবনার প্রাণ’।

ইছামতি তীরের ৪৩ দখলদারের স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ
 

“কবিগুরু
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহ থেকে বহুবার পানসি ভাসিয়ে ইছামতিতে ঘুরেছেন। ইছামতিকে
কেন্দ্র করেই প্রসারিত হয়েছে জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য। স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত নদীটির
প্রাণ ছিল। এরপর দিনে দিনে নদীর দুই পাড় দখল হতে শুরু করে। উৎসমুখ আটকে বন্ধ হয়ে
যায় পানিপ্রবাহ। এখন নদীটি মরা খালে পরিণত হয়েছে।”

ময়লা-আবর্জনায়
মশার উপদ্রব বাড়ছে, বাতাস দূষিত হচ্ছে উল্লেখ করে রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি বলেন,
“চিহ্নিত কয়েকজন অবৈধ দখলদার অহেতুক আইনি জটিলতা তৈরি করে নদী উদ্ধার কাজে
বাধা দিচ্ছিলেন। তাদের স্থাপনাও উচ্ছেদ হওয়ায় নদী উদ্ধারে গতি আসবে।”

শহরের শালগাড়ীয়ায় গোলাপবাগ এলাকায় নদীর তীরে উচ্ছেদ অভিযানে বাড়ি ভাঙা হচ্ছে

শহরের শালগাড়ীয়ায় গোলাপবাগ এলাকায় নদীর তীরে উচ্ছেদ অভিযানে বাড়ি ভাঙা হচ্ছে

পাবনা সদরে ইছামতির চারটি মৌজায় থাকা অবৈধ স্থাপনা
উচ্ছেদে জেলা প্রশাসক নোটিস দিলে ৪৩ ব্যক্তি ২০২০ সালে তা চ্যালেঞ্জ করে হাই
কোর্টে রিট করেন। সেই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি
আদালত নদী কমিশনকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়ে উচ্ছেদ কার্যক্রমে
স্থিতাবস্থা দেয়।

সেই আদেশের পর নদী কমিশনের প্রতিনিধিরা সরেজমিনে ঘুরে এসে
আদালতে প্রতিবেদন দেন। সেখানে বলা হয়, সিএস রেকর্ড অনুযায়ী ৪৩ রিট আবেদনকারীর দখলে
থাকা জায়গা ইছামতীর।

পরে আদালত রিট খারিজ করে দিলে ৪৩ রিট আবেদনকারী নদী কমিশনের
প্রতিবেদন চ্যালেঞ্জ করে আরেকটি রিট করেন। ওই রিটও খারিজ করে দেয় হাই কোর্ট।

এরপর ২০২০
সালেই ২০০৯ সালে ঢাকার চার নদী (বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু) নিয়ে
সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায় সংশোধন চেয়ে আবেদন করেন তারা। ওই রিট আবেদন খারিজ করে
পাবনায় ইছামতি নদী তীরের ৪৩ ব্যক্তির অবৈধ দখলে থাকা জমির স্থাপনা উচ্ছেদের
নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। ফলে ইছামতি পাড়ের ৪৩ ব্যক্তির অবৈধ স্থাপনা ও দখল উচ্ছেদে
আইনি বাধা কেটে যায়।