রূপলের মুখে কেবল বোল ফুটছে। হামাগুড়ি দিতে দিতে উঠে দাঁড়ানো শিখেছে। হাতের কাছে কিছু পেলে সেটা ধরে দাঁড়াতে পারে রূপল। মাঝে মাঝে জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। জানালা থেকে একটু দূরেই একটা আমগাছের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেই আমগাছে আছে একটা কাকের বাসা।
কা-কা আর কি-কি সংসার পেতেছে ওখানে। কা-কা ও কি-কি মানে জানো তো! বাবা কাকটার নাম কা-কা আর মা কাকটার নাম কি-কি। ওরা অনেক যত্ন করে খড়কুটো বয়ে এনে এই বাসা বানিয়েছে।
কা-কা, কি-কির ঘর আলোকিত করে এসেছে দুটা তুলতুলে কাকের বাচ্চা। বাচ্চা দুইটা ডানা ঝাপটিয়ে, লাল মুখ হা করে ডাকতে থাকে। কা-কা ও কি-কি খাবার এনে মুখে তুলে দেয়। রোজ এসব মুগ্ধ হয়ে চেয়ে দেখে রূপল। দেখে আর হাত-পা নাড়িয়ে হাসে। তুলতুলে হাত বাড়িয়ে কা-কা বলে ডাকতে থাকে।
জানালার পাশ দিয়ে খাবার আনতে যাওয়ার সময় উপরের দিকে তাকায় কা-কা, মানে বাবা কাকটা। রূপল ডাকে কা কা-কা। কাকটা রূপলেরে দিকে তাকিয়ে ডাকতে থাকে কা কা কা কা। খল খল করে হেসে ওঠে রূপল।
আবার হাত বাড়িয়ে ডাকতে থাকে কি-কি কি-কি। মা কাকটাও ওর দিকে তাকিয়ে ডেকে ওঠে কা কা কা কা। কয়েকদিন ধরে এমনই চলতে থাকে। বেশ জমে উঠেছে রূপল ও কা-কা, কি-কির বন্ধুত্ব। রূপল জানালা দিয়ে পাউরুটি ছুড়ে ফেলে। ভাত ছড়িয়ে দেয়। কাক দম্পতি সেসব খাবার কুড়িয়ে নিয়ে গিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ায়।
রূপলের মা নাইস ভাবে হাতে খাবার দিলে মজা করে খাচ্ছে মেয়ে। কাকেদের সঙ্গে রূপলের খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়ার বিষয়টি হঠাৎ করে চোখে পড়ে তার।
মজার ব্যাপার বটে।
এখন রূপলের পাশে ছড়ানো থাকে অনেক বিস্কুট। সে নিজে কুটকুট করে খায় আর জানালা দিয়ে ফেলতে থাকে। একটা দুটা করে কাকের দল উৎসব করতে থাকে রূপলের জানালার সামনে।
রূপল ডাকে- আয় আয় কা কা। কাকগুলো নাচতে থাকে ছড়িয়ে দিয়ে পাখা। রূপলের জানালার কাছে এসে বসে কা-কা ও কি-কি। গল্প শুরু করে রূপলের সাথে। রূপল বলে, তোমরা অনেক ভালো।
কা-কা ও কি-কি রূপলকে বলে, তুমিও অনেক ভালো, লক্ষ্মী মেয়ে আর সুন্দরী। রূপল কাকদের কথা শুনে হাসে। কা-কা ও কি-কি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
কা-কা ও কি-কির মনে অনেক দুঃখ। রূপলকে সেসব দুঃখের গল্প শোনায় তারা।
কি-কি বলে, জানো রূপল আমরা গান গাইতে জানি না। অন্য পাখিরা কত মিষ্টি করে গায়। আমাদের চেয়ে কালো হয়েও কি মিষ্টি করে গান করে কোকিল। আর আমাদের গলা থেকে শুধু কর্কশ শব্দ বের হয়ে আসে।
জানো বন্ধু আমাদের কেউ পছন্দ করে না। আমাদের কষ্টে মরে যেতে ইচ্ছে করে। আমরা নাকি কুৎসিত, তাই সবাই দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়।
কারও বাড়ির কাছে গিয়ে আমরা যখন ডাকতে থাকি, তখন লোকে বলে আমরা অশুভ। আমাদের সন্তানরা বড় হচ্ছে। বড় হয়ে ওরা যখন পৃথিবীকে চিনবে, ডানা মেলে আকাশে উড়বে, তখন নিজেদের সম্পর্কে এসব জেনে ওরা ভীষণ কষ্ট পাবে।
কাকদের জন্য যদি আলাদা একটা দেশ থাকতো খুব ভালো হতো তাই না! মিলেমিশে আমরা কাকেরা বসবাস করতাম সেই দেশে। দেখছো তো আমরা মানুষের মতো একা থাকতে পছন্দ করি না। কোথাও খাবারের সন্ধান পেলে সব বন্ধুদের ডেকে নিয়ে খাই। আমরা দলবেঁধে বসবাস করতে পছন্দ করি।
আমরা মানুষের সঙ্গে বাস করি, কিন্তু মানুষরা আমাদের ঘৃণা করে। সবার ঘৃণা নিয়ে এই সমাজে থাকতে ইচ্ছে করে না আমাদের।
কাকদের গল্প শুনে কষ্ট হয় রূপলের। ও অনেকক্ষণ মন খারাপ করে ভাবে কী বলবে ওর কাক বন্ধুদের। অনেক ভেবে তারপর বলে, কে বলেছে তোমাদের কেউ ভালোবাসে না! আমি তো তোমাদের ভালোবাসি। তোমাদের বন্ধু হয়ে গেছি। আমার মতো অনেকেই আছে যারা তোমাদের ভালোবাসে।
তোমাদের অনেক বড় মন। লোকে এত নোংরা কথা শোনায় তবুও তোমরা শহর সুন্দর রাখো। শহরের ময়লা আবর্জনা খেয়ে শহরটাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখছো। রোজ সকালে আমাদের ঘুম ভাঙিয়ে দিচ্ছো।
আর গান গাইতে পারো না এই কথা বলছ! সবাইকে কেন গান জানতে হবে? তোমরা কত সুন্দর করে গল্প বলতে পারো। আমি মুগ্ধ হয়ে গল্প শুনি তোমাদের।
জানো তো সব ভাষাই শ্রেষ্ঠ। কেউ ডাকবে কা কা সুরে। কেউ কুহু কুহু সুরে, কেউ মুহু মুহু, কেউ পিউ পিউ।
নিজেকে কখনও ছোট করে দেখবে না বন্ধু। মনে রেখো তুমি যেটা পারো সেটা অনেকেই পারে না। তুমি যেটা জানো সেটা অনেকেই জানে না।
বন্ধু মনে রেখো, তোমার তুলনা শুধু তুমিই। দুষ্টু লোকের কথা শুনে মন খারাপ করবে না।
মন দিয়ে রূপলের কথা শুনছে কা-কা ও কি-কি। ওদের মন ভালো হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
এদিকে আমগাছের ডালে লাল লাল ঠোঁট মেলে কাঁদছে কাকের বাচ্চাগুলো। কা-কা বলে, আমরা যাই বন্ধু, ওদের ক্ষুধা পেয়েছে। খাওয়াতে হবে।
কি-কি বলে, সত্যিই তুমি অনেক ভালো আর অনেক বুদ্ধিমান। তোমার সঙ্গে দেখা না হলে, বন্ধুত্ব না হলে অনেক কিছুই জানা হতো না আমাদের। এখন থেকে আর নিজেদের ছোট মনে হচ্ছে না। আমরা একটুও ছোট ভাববো না নিজেদের।
আমরা বিশ্বাস করতে পারছি পরিবেশ সুন্দর রাখার জন্য আমাদের জন্ম। আমরা শ্রমিক পাখি। আমরা এসেছি সবকিছু সুন্দর রাখতে। সব সুন্দরের জয় হোক। তোমার মতো সুন্দর করে ভাবতে শিখুক সবাই। রূপল মাহমুদ, জিন্দাবাদ।
কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |