‘চোরের সঙ্গে সংসার করতে না চাওয়ায়’ তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য দিয়ে র্যাব জানিয়েছে।
র্যাব ১১-এর সিপিসি-২ কুমিল্লার কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সোমবার রাতে রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত ইকবাল হোসেন (৩৮) কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার অলিপুর গ্রামের বাসিন্দা। অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। এ ঘটনায় সোমবার ইকবালের বাবা-মা ও ভাইকেও গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এর আগে রোববার কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার কালিরবাজার ইউনিয়নের মস্তফাপুর গ্রামের লালমাই পাহাড় সংলগ্ন একটি বিল থেকে ইকবালের স্ত্রী ফারজানা আক্তারের (২৮) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মেয়ের জন্য শপিং করার কথা বলে ডেকে নিয়ে ইকবাল তাকে ইট দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।
র্যাব কর্মকর্তা সাকিব বলেন, রোববার ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধারের পরই নিহতের বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন কোতোয়ালি থানায় ইকবালকে প্রধান আসামি করে সাতজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও দুই থেকে তিনজনকে আসামি করা হয়। এই মামলায় ইকবালের বাবা-মা ও ভাইকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
কুমিল্লায় গৃহবধূর মাথা থ্যাঁতলানো মরদেহ, স্বামী পলাতক
“ইকবাল অটোরিকশাচালক হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি অটোরিকশাসহ গাড়ির ব্যাটারি ও গাড়িচুরির কাজে জড়িত। তাছাড়া ইকবাল একজন পেশাদার জুয়াড়ি। মূলত জুয়ার টাকার জন্য তিনি বিভিন্ন অপকর্ম করতেন।”
এসব নিয়ে ফারজানার সঙ্গে প্রায়ই কথাকাটাকাটি হত জানিয়ে সাকিব বলেন, গত বছর ২৩ সেপ্টেম্বর একটি চুরির মামলায় ইকবালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। খবরটি ফেব্রুয়ারির দিকে ইকবালের কানে গেলে সে তার স্ত্রীর কাছে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে জামিন করাতে বলে। তার কয়েকদিন পর ১১ মার্চ ইকবালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ইকবাল জেলে থাকায় ফারজানা তার এক শিশুসন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাসায় না থেকে ইকবালের দেওয়া পাঁচ হাজার টাকায় ট্রাক ভাড়া করে মালামল নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান।
সাকিব বলেন, ফারজানা জেলখানায় গিয়ে বাসা ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে জানালে ইকবাল রেগে দিয়ে দ্রুত তাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করতে বলেন। জামিনে বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও জামিন না করানোয় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
“পরে অটোরিকশা মালিকের সহায়তায় এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে জামিন পান ইকবাল। তারপর তিনি শ্বশুরবাড়ি গেলে ’চোরের সঙ্গে’ সংসার করবেন না বলে জানান ফারজানা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইকবাল তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।”
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে র্যাবের ভাষ্য।
ইকবালকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সাকিব আরও বলেন, “ফারজানা যদি বাবার বাড়ি থাকেন তাহলে তাকে হত্যা করা যাবে না বলে ইকবাল ফারজানার কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান এবং তাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখান।
“শনিবার রাতে তাদের একমাত্র মেয়ের জন্য ঈদের শপিং করার কথা বলে স্ত্রীকে নিয়ে বের হন ইকবাল। পরে মস্তফাপুরে নির্জন স্থানে নিয়ে মাথায় ইট দিয়ে পিটিয়ে তাকে হত্যা করে ঢাকায় পালিয়ে যান ইকবাল।”