সুমনার আশপাশে কয়েকটা পুতুল রাখা। ও পুতুল নিয়ে খেলছে না। ওর ঘুমও আসছে না। বাবা-মার কথা খুব করে মনে পড়ছে। এর মধ্যে হঠাৎ কে যেন এসে বলল, ‘সুমনা মন খারাপ! তোমার মনের সব কথা জানি। তাই তোমার মন ভালো করার জন্য এসেছি।’
সুমনা ভয়ে পেয়ে গেল। কে আবার আমার মন ভালো করার জন্য এলো। আগে তো তাকে কখনো দেখিনি। আর মন খারাপের কথা জানলো কী করে। একটু পর সুমনা ভয়ে ভয়ে বলল, ‘আপনাকে তো চিনতে পারলাম না। আপনি কে?’
হা হা শব্দ করে বলল, ‘আমি ফুল, মেঘ,
নদী, পাখি ও পরিসহ সবকিছু।’
সুমনা ধীরে ধীরে বলল, ‘আচ্ছা, আপনাকে
তো দেখতে মানুষের মতো মনে হচ্ছে। কিন্তু আপনি আবার এসব কীভাবে হবেন?’
‘তুমি বিশ্বাস করো। আমি সত্যি বলছি, যখন যা ইচ্ছা হয়, আমি তখন তাই হতে পারি। প্রমাণ দেখতে চাও?’
সুমনা সাহস করে বলল, ‘আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। আপনি মিথ্যা কথা বলছেন মনে হয়। আমি কিন্তু মিথ্যা কথা বলা পছন্দ করি
না। খবরদার আমার সাথে মিথ্যা কথা বলবেন না। তবে হ্যাঁ, আপনি ফুল, মেঘ, নদী,
পাখি পরিসহ সব যে হতে পারেন তার প্রমাণ দেখতে চাই।’
সুমনার কথা শুনে বুঝতে পারল সাহস আছে
মেয়েটার। তাই বললেন, ‘ঠিক আছে সুমনা। তোমার কথা শুনে ভালো লাগল আমার। এবার বলো প্রথমে আমাকে কী রূপে দেখতে
চাও। আমাকে বলে তুমি চোখ বন্ধ করো।’
তার কথা বিশ্বাস করে সুমনা ভয়ে ভয়ে
চোখ বন্ধ করল। চোখ বন্ধ করে ভাবে কী না কি বিপদ হয়। তবুও সে তার কথা প্রমাণ করার জন্য সাহস নিয়ে বলল, ‘প্রথমে ফুল দেখতে চাই।’
‘ঠিক আছে। অপেক্ষা করো।’
সুমনা অপেক্ষা করতে লাগল। কিছু সময় পর তিনি বললেন, ‘সুমনা বন্ধ চোখ খুলো এবার। আমার দিকে তাকাও।’
সুমনা চোখে মেলে দেখে সত্যি সত্যি শাপলা
ফুল। সুমনা শাপলা ফুল দেখে অবাক। ফুলের দিকে তাকিয়ে রইল। ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। শাপলা ফুল বলল, ‘কোনো ভয় নেই। আমি তোমাদের জাতীয় ফুল।’
সুমনার ভয় একটু কাটল। তবু সে ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে। শাপলা ফুল বুঝতে পারল সে ভয় পাচ্ছে। ভয় দূর করার জন্য শাপলা ফুল বলল, ‘সুমনা তুমি কি সত্যি ভয় পাচ্ছ?’
সুমনা বলল, ‘ফুল দেখে কেউ ভয় করে না। ফুল সবাই ভালোবাসে। আমি ভয় পাচ্ছি না। মুগ্ধ হয়ে দেখছি।’
‘তাই! আমাকে দেখার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। এবার তোমার ইচ্ছার কথা বলো সুমনা।’
‘আচ্ছা। আমার একটা ইচ্ছা আছে। সেটা কি পূরণ করে দেবেন?’
‘কী ইচ্ছা বলো?’
সুমনা বুদ্ধি বের করে বলল, ‘শাপলা ফুলের বিল দেখার খুব ইচ্ছা। বিলে নিয়ে যাবেন। শাপলা ফুলের বিলে নৌকায় ঘুরতে চাই।’
ফুল বলল, ‘অবশ্যই নিয়ে যাব। এক্ষুনি চলো।’
সুমনা খুশি হয়ে বলল, ‘এক্ষুনি! তবে যেতে
পারি। বাবা-মা বাসায় আসার আগেই
কিন্তু আমাকে রেখে যেতে হবে।’
‘হ্যাঁ। এক্ষুনি। তোমার বাবা মা বাসা আসার আগেই রেখে
যাব। তুমি চলো।’
শাপলা ফুল সুমনাকে উড়ে নিয়ে গেল বিলে। গিয়ে নৌকায় ঘুরতে লাগল। ঘোরাঘুরি শেষে বলল, ‘সুমনা, এবার আরও
একটা ইচ্ছার কথা বলো।’
সুমনা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমি প্রতিদিন মেঘ দেখি। মেঘ ঘুরে বেড়ায়। আমারও মেঘের সাথে ঘুরতে ইচ্ছা করে। তুমি নিয়ে যাবে মেঘের কাছে।’
‘অবশ্যই মেঘের কাছে নিয়ে
যাব। তুমি চোখ বন্ধ করো।’
সুমনা চোখ বন্ধ করল। শাপলা ফুল এবার মেঘ হয়ে গেল। সুমনাকে নিয়ে মেঘ আকাশে গেল। সুমনা আর মেঘ মনের আনন্দে আকাশে ভেসে
বেড়াচ্ছে। এমন সময় একটা পাহাড়-সমান মেঘ এসে বলল,
‘সুমনা মেঘ দেখতে এসেছো?’
সুমনা ভয়ে কিছু বলে না। চুপচাপ আছে। সে মনে মনে ভাবছে- এই পাহাড় সমান মেঘ
যদি তাদের চাপা দেয় তাহলে তো শেষ হয়ে যাবে।
মেঘ বলল, ‘হ্যাঁ, সুমনা মেঘ
দেখতে এসেছে। তোমাদের মতো বড় বড় মেঘেদের কাছ থেকে দেখার
ইচ্ছা তার। সেজন্য তাকে নিয়ে এসেছি।’
বড় মেঘ বলল, ‘ভালো করেছ। সুমনা কথা বলছ না কেন। ভয় করছে তোমার। ভয়ের কিছু নেই। এখানে তোমাকে কেউ ক্ষতি করবে না। তাই ভয়ের কিছু নেই। আমরা সবাই মায়াভরা জল।’
এবার সুমনা বলল, ‘তোমাকে এত মোটা দেখে আমি ভয় পাচ্ছি। তুমি এত পাহাড় সমান মোটা কেন?’
বড় মেঘ বলল, ‘আমার শরীর যে জলকণায় ভরা। তাই আমাকে এমন দেখাচ্ছে।’
সুমনা বলল, ‘ও আচ্ছা। তোমরা কত্ত মজা করো। দেশে দেশে ঘুরে বেড়াও, তাই না।’
‘হ্যাঁ, অনেক মজা। তবে তা কিছুদিনের জন্য। তারপরই আমরা সবাই ফুরিয়ে যাই। হারিয়ে যাই।’
হারিয়ে যাওয়ার কথা শুনে অবাক হয়ে বলল, ‘হারিয়ে যাও কেন?’
‘বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ি
মাটিতে। বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়া ভারি মজা!’
‘ও তাই! আমিও বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ব।’
‘না না তুমি পারবে না। কারণ তোমার আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য
আছে। আমরা মায়াভরা জল। আর তুমি রক্তে মাংসে গড়া ছোট্ট মানুষ।’
‘ও আচ্ছা। আমি বড় হলে পারব না?’
‘বড় হলে বলব। এখন চলো মেঘেদের দেশে তোমাকে নিয়ে ঘুরে
বেড়াই।’
ওরা ঘুরতে লাগল মেঘেদের দেশে।
মেঘের দেশে ঘোরার পর সুমনা বলল, ‘নদীতে পালতোলা নৌকায় ঘুরার খুব ইচ্ছা।’
সুমনার কথা শোনার পর মেঘ বলল, ‘তাহলে এবার আমি নদী হয়ে যাই।’
‘তুমি এখন নদী হবে! নৌকা পাবো তো।’
‘হ্যাঁ। পাবে। কোনো চিন্তা করো না। চোখ বন্ধ করো।’
সুমনা চোখ বন্ধ করল। একটু পর দেখে বিশাল এক নদী। নদীতে অনেক নৌকা। কোন নৌকা ফেলে কোনটাতে উঠবে সে! আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। তারপর দেখে একটা পালতোলা নৌকা দোল খাচ্ছে। সুমনা বুঝতে পারল ওই নৌকা তাকে ডাকছে। সাহস করে ওই নৌকাতে উঠে বসল। নৌকা ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে
লাগল।
হঠাৎ একটা বোয়াল মাছ লাফ দিয়ে উঠল নৌকায়। মাছ দেখে সুমনা অবাক হলো। কী করবে মাছটা? এমন সময় মাছটা বলল, ‘সুমনা তুমি পালতোলা নৌকায় এসেছ। ভালো করেছে। তুমি একা। তাই আমি তোমাকে সঙ্গ দিতে এসেছি। ভয়ের কোনো কারণ নেই।’
সুমনা ভাবছে-নিশ্চয় ওনি এবার বোয়াল মাছ হয়েছে। তাই সে আর ভয় পেল না। বোয়াল মাছ নড়াচড়া করছে। সুমনা দেখছে। নৌকা চলছে। এমন সময় সুমনা মাছটার মাথায় হাত বুলানোর
জন্য এগিয়ে গেল। তখনই মাছটা আবার নদীতে ঝাঁপ দিল। সুমনা মাছ চলে যাওয়ার কারণে চোখ বন্ধ করে শোকে মাথায় হাত দিল। পালতোলা নৌকা পাড়ে এসে ভিড়ল।
নদী বলল, ‘সুমনা কেমন মজা হলো।’
‘খুব ভালো। তবে মাছটা ধরতে পারল কি যে মজা হতো।’
‘এ মাছ ধরা বিপদ। এবার বলো। কোথায় যেতে চাও?’
পাখির কথা মনে করে সুমনা বলল, ‘আকাশে যখন পাখি উড়া দেখি তখন আমার খুব
ইচ্ছা হয় পাখির মতো উড়তে। উড়ে উড়ে বিখ্যাত বিভিন্ন জায়গা যেতে।’
‘বাহ। ভালো কথা বলেছ। তুমি চোখ বন্ধ করো। আমি পাখি হচ্ছি।’
সুমনা চোখ বন্ধ করল। নদী হয়ে গেল টিয়াপাখি। টিয়া পাখি সুমনাকে নিয়ে উড়তে লাগল। উড়তে উড়তে টিয়া পাখি বলল, ‘তুমি কি একটা মজা দেখবে?’
মজার কথা শুনে সুমনা খুশি হয়ে বলল, ‘কী মজা দেখাবে! আমি দেখব।’
‘তাহলে তুমি চুপচাপ বসে
থাকবে। আমি কী করি তা শুধু দেখবে। কোনো রকম শব্দ করবে না।’
‘ঠিক আছে। আমি কোনো রকম কথা বলব না।’
টিয়া পাখি উড়তে উড়তে এক বাসায় বসল। একটু পর টিয়াপাখি মানুষের কণ্ঠ নকল
করে আগুন…আগুন… বলে চিৎকার করতে লাগল, আগুনের কথা শুনে আতঙ্কিত প্রতিবেশীরা দ্রুত ফায়ার সার্ভিসে খবর
দিলো। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও ছুটলেন ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে। কিন্তু যে বাড়ি থেকে আগুন আগুন বলে
চিৎকার করেছে সেখানে পৌঁছানোর পর যেন সবার চোখ কপালে উঠে গেল। কোথায় আগুন! ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাড়ির ভেতর কোথাও
আগুন ধরেছে কিনা জানতে অনুসন্ধান চালালো। পরে দেখে টিয়া পাখি অগ্নিকাণ্ডের সতর্ক-সংকেতের
শব্দ নকল করছে।
টিয়া পাখির কাণ্ড দেখে উপস্থিত সবাই
অবাক। বাসার সবাইকে বাই বাই দিয়ে টিয়া পাখি সুমনাকে নিয়ে উড়ে গেল। সুমনা মুচকি মুচকি হাসতে লাগল।
ওরা উড়ছে। সুমনা বলল, ‘তুমি তো অনেক দুষ্ট। তোমার খেলায় অনেক মজা পেয়েছি।’
টিয়া পাখি বলল, ‘আমি তোমাকে প্রথমেই বলেছি। আমার যখন যা হওয়ার ইচ্ছা হয় আমি তখন
তাই হয়ে যাই। এখন প্রমাণ পেলে তো!’
সুমনা মাথা নেড়ে বলল, ‘হ্যাঁ, প্রমাণ
পেয়েছি।’
টিয়া পাখি বলল, ‘এবার বলো। তোমার আর কী ইচ্ছা আছে।’
সুমনা বলল, ‘আমার পরির সাথে ঘোরার খুব ইচ্ছা। তুমি কি এবার পরি হতে পারবে?’
‘তোমাকে তো বলেছি। আমি সব হতে পারি।’
‘আচ্ছা। তাহলে এবার তুমি পরি হও।’
‘ঠিক আছে। তুমি চোখ বন্ধ করো।’
সুমনা এবার চোখ বন্ধ করল। একটু পর চোখ মেলে দেখে তার সামনে একটা
পরি এসে হাজির। সুমনা খুশিতে আত্মহারা। সত্যি তো তার সামনে পরি। পরিকে কী বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না
সে। পরি নিজেই বলল, ‘কি অবাক হলে? পরিকে
দেখে ভয় পেলে? ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এবার বলো পরির সাথে কী কী দেখতে চাও।’
সুমনা বলল, ‘আমি পৃথিবীর বিখ্যাত রেলস্টেশনগুলো দেখতে
চাই।’
সুমনার কথা শুনে পরি অবাক হলো। কারণ এমন ইচ্ছার কথা শোনার জন্য সে
প্রস্তুত ছিল না। পরির ধারণা ছিল সে যেতে চাইবে পরিদের রাজ্যে। কিন্তু না, সে দেখবে রেলস্টেশন। তাই পরি প্রথমে সুমনাকে নিয়ে গেল পৃথিবীর
দীর্ঘতম রেলজংশন ভারতের খড়গপুর স্টেশনে। সুমনা দেখে অবাক হলো। তারপর একে একে বিভিন্ন রেলস্টেশনে ঘুরতে
লাগল ওরা। বিভিন্ন জায়গা ঘোরাঘুরির পর সুমনা বলল, ‘আমাকে বাসায় রেখে এসো। বাবা মা হয়তো বাসায় এসেছেন।’
পরি বলল, ‘তোমার আর কিছু দেখার ইচ্ছা হয় না?’
সুমনা বলল, ‘না। আমার এখন খুব ঘুম পাচ্ছে। তুমি আমাকে রেখে এসো।’
পরি বলল, ‘তোমাকে যদি তোমার বাসায় না রেখে অন্য
বাসায় রেখে আসি, তুমি কী থাকবে?’
‘না না আমি বাবা-মা ছাড়া
অন্য কোন বাসায় যেতে চাই না। আমাকে বাসায় রেখে এসো তাড়াতাড়ি।’
পরি বলল, ‘তোমার চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমি তোমাকে রেখে আসব। আমি তো পরি। আমার আগে কেউ যেতে পারবে না।’
‘তাই! কিন্তু আমার যে বাবা মার জন্য খারাপ লাগছে।’
‘মন খারাপ করো না সুমনা। এবার বলো তুমি কী আমার সাথে যেতে চাও
নাকি অন্য কোন মাধ্যমে যেতে চাও।’
‘না আমি কোনো মাধ্যমে
আর যেতে চাই না। আমি তোমার সাথে যেতে চাই। আমাকে তাড়াতাড়ি রেখে এসো।’
‘ঠিক আছে। চলো।’
সুমনাকে নিয়ে পরি উড়তে লাগল। উড়েতে উড়তে বাসায় এলো সুমনা।
বাসায় আসামাত্র পরি বলল, ‘সুমনা তোমার কোনো বিপদ বা কোথাও যেতে
চাইলে আমাকে শুধু তুমি ‘ফুল, মেঘ, নদী,
পাখি ও পরি’ বলে তিনবার ডাকবে। আমি চলে আসবো।’
‘ঠিক আছে। মনে থাকবে।’
পরি চলে গেলে সুমনা বিছানায় শুয়ে পড়ল। এর মধ্যে বাবা-মা এসে ঢুকলেন বাসায়।
কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |