ক্যাটাগরি

নয়নের চশমা

অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকান। চোখ দেখলেই পিলে চমকে যায়। ভুল করে ক্লাস ফোরে একদিন চশমা রেখে
গেলেন। সেদিন রাগে খুব গরম হয়েছিলেন। সবাইকে পিটিয়েছেন। সেই উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে উঠে গেলেন। চশমা আর নিলেন না।

নয়ন দেখল টেবিলের ওপর স্যারের চশমা। দৌড়ে গিয়ে চশমাটা নাকের ডগায় তুলে দিল। বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলল, আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?

বন্ধুরা হো হো করে হাসল। রাফিন বলল, তোকে অঙ্ক স্যারের মতো দেখাচ্ছে। শুধু শরীরটা মোটা। স্যারের মতো লিকলিকে হলেই হতো। তাহলে একদম মানিয়ে যেত।

নয়ন মুখ বাঁকিয়ে বলল, তাহলে তো ভালোই। এখন থেকে আমি অঙ্ক স্যার। সবাই মান্য করে চলবি। মনে রাখিস, স্কুলের অঙ্ক স্যার হওয়া চারটিখানি
কথা নয়। অঙ্ক স্যার মানে সবার বড় স্যার। নয়নের এই অভিনয় দেখে বন্ধুদের হাসি
আর থামতে চায় না।

অরিন বলল, চশমা পরলে তোকে ভালোই লাগে। তোর গুল্লু গুল্লু চেহারা তো। সুন্দর দেখায়।

কথা শুনে নয়নের মনে আনন্দ বেড়ে গেল। চশমা চোখে ঘুরে ঘুরে সবার দিকে তাকাচ্ছে। এমন সময় সুমন বলে উঠল, এবার বাংলা স্যার হয়ে যাবি নয়ন। ওই যে অঙ্ক স্যার আসছেন।

পড়িমরি করে চশমাটা টেবিলের ওপর রেখে
সিটে বসল নয়ন। অঙ্ক স্যার ক্লাসে ঢুকলেন। সবাই দাঁড়াল। স্যার বললেন, তোমরা বসো। ভুল করে চশমাটা রেখে গেছিলাম। 

চশমা নিয়ে চলে গেলেন স্যার। তবে সেদিন থেকে নয়নের মনে নতুন স্বপ্ন
ধরা দিল। চশমা পরবে সে। অরিন বলছে তাকে নাকি ভালোই দেখায়। একটা চশমা কিনতে হবে। কীভাবে কিনবে? চশমা নাকি অঙ্ক স্যারের মতো হলে পরতে হয়। তবু মন থেকে সরছে না চশমা। আসলেই তাকে সুন্দর দেখায়? অরিন মিথ্যা বলে না। ও যখন বলেছে ঠিকই সুন্দর দেখায়। সুন্দর দেখালে কী হবে! অঙ্ক স্যারের
মতো বুড়া হতে হবে। কবে সে অঙ্ক স্যারের মতো হবে! সেই ভাবনা পেয়ে বসেছে। 

কয়েকদিন পরে চশমা পরে স্কুলে এলো আবির। আবিরের চোখে চশমা দেখে চমকে উঠল নয়ন। ক্লাসের সবাই আবিরকে ঘিরে ধরল। জানতে চাইল, তুই চশমা পরছিস ক্যান?

আবির ভাব নিয়ে বলল, ডাক্তার পরতে বলছেন।

সবাই আবিরের চশমা হাতে নিয়ে দেখছে। কেউ কেউ চোখেও দিচ্ছে। নয়ন পাশে দাঁড়িয়ে আছে। নয়নের মনে কৌতূহল। এত কম বয়সেও চশমা পরা যায়? এতদিন ভাবনা ছিল অঙ্ক স্যারের মতো হলে
চশমা পরে। তারা চোখে কম দেখে। এখন দেখল পুচকে আবিরও চশমা পরেছে। ডাক্তার নাকি বলেছে। এবার বুঝতে পারল যাদের বয়স কম তারাও
চশমা পরতে পারে। তবুও আবিরের মুখে শুনতে হবে। কেন ওকে চশমা পরতে বলেছে ডাক্তার। হয়তো আবির চোখে কম দেখে। সে তো চোখে কম দেখে না। কেন চশমা পরবে?

এরপর নয়ন আবিরের কাছে জানতে চাইল, ডাক্তার তোকে চশমা পরতে বললেন কেন? তুই চোখে কম দেখিস?

আবির মাথা নাড়িয়ে বলল, নারে বোকা। শুধু চোখে কম দেখলেই চশমা পরে না। আরও অনেক কারণে চশমা পরা যায়। একথা শুনে নয়ন বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকাল। ভাবল পুচকে আবির কী বলে! চোখে কম না
দেখলেও চশমা পরা যায়! আর কিসের জন্য চশমা পরা যায়? পেটে ব্যাথা হলে তো চশমা পরবে না কেউ। নয়নের কাছে আবির এখন ডাক্তার। মস্তবড় চোখের ডাক্তার। নয়ন আবারও জানতে চায়, আর কী হলে চশমা পরা যায়? বলতো। আমি তো ভাবছি অঙ্ক স্যারের মতো হলে চশমা পরা যায়।

আবির বলল, মাথা ব্যথা হলেও চশমা পরা যায়।

এ কথা নয়নের বিশ্বাস হচ্ছে না। মাথাব্যথা হলে কেউ চশমা পরে নাকি। তবুও বুদ্ধি একটা পেয়েছে। বাবাকে বলবে তার মাথাব্যথা। চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। পড়তে পারে না। তখন চশমা কিনে দেবে বাবা। বুদ্ধিটা দারুণ।

স্কুল থেকে বাড়ি ফিরল নয়ন।  গেল বাবার কাছে। বলল, আমার চশমা লাগবে বাবা।

বাবা চমকে উঠলেন। তারপর এক গাল হেসে বললেন, কেন চশমা লাগবে? তুই বুড়া হয়ে গেছিস? চোখে দেখিস না? 

না বাবা, আমার মাথাব্যথা করে। বেশি সময় পড়লে চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। তখন সব অন্ধকার দেখি।

বাবা একটা ধমক দিলেন। কোথায় পেয়েছিস এসব কথা?

অভিমান করে বাবার সামনে থেকে সরে গেল
নয়ন। ঘরের পেছনে পুকুরপাড়ে বকুল গাছের নিচে গিয়ে বসল। বিষণ্ন মন। বকুল গাছের ওপর একটা কাক বসে আছে। মনের সুখে কা কা করছে। নয়ন কাকটার দিকে তাকাল। এখন তার ভাবনা কাক নিয়ে। কাক কখনও চশমা পরে না। ওরাও বুড়ো হয়। তারপরও চশমা পরে না। মানুষের চশমা পরতে হয় কেন? মানুষের চোখের পাওয়ার কমে কেন? এমন সময় মালতি বুবু এলো পুকুর ঘাটে। জল নেবে। দেখল নয়ন মন খারাপ করে বসে আছে। জিজ্ঞেস করল, কিরে, এখানে বসে আছিস কেন? কী হয়েছে? মুখ গম্ভীর কেন?

নয়ন কথা বলছে না। বুবু আবারও জানতে চাইল, তোর মন খারাপ কেন?

ভারি গলায় নয়ন বলল, আমি না চোখে ঝাপসা দেখি বুবু।

এ কথা শুনে মালতি বুবু হেসে উঠলেন,
কী বলছিস এসব!

মুখ বাঁকিয়ে নয়ন বলল, তুমি যে হাসছ! বিশ্বাস হচ্ছে না?

বুবু বিস্ময়ের সুরে বলল, সত্যি! চোখে ঝাপসা দেখিস?

মাথা নেড়ে নয়ন বলল, হ্যাঁ, বুবু। ঘোলা হয়ে যায়। মাথাব্যথা করে।

মালতী বুবু মুচকি হেসে বলল, গাছ তলায় বসে থাকলে চোখ ভাল হবে না। কাকার কাছে বল। ডাক্তার দেখাবে।

গম্ভীর মুখে নয়ন বলল, বাবাকে বলেছিলাম। আমার কথা বিশ্বাস করতে চায় না বাবা। বলে, তুই বুড়ো হয়ে গেছিস? চোখে ঝাপসা দেখিস কেন? চোখে ঝাপসা দেখতে বুড়ো হতে হয়? আমাদের ক্লাসের আবিরও চোখে কম দেখে। ডাক্তার চশমা দিয়েছে।

মালতী বুবু নয়নের হাত ধরে ঘরে নিয়ে
এলো। চল, কাকাকে আমি বলব। তোকে ডাক্তার দেখাবে।

নয়নকে নিয়ে কাকার সামনে গেল মালতি। বলল, নয়নকে ডাক্তার দেখাতে হবে কাকা।

কেন, নয়নের হয়েছেটা কী?

ও নাকি চোখে ঝাপসা দেখে। বেশিক্ষণ পড়তে পারে না। মাথাব্যথা হয়।

বাবা এবার গুরুত্ব দিলেন। মালতিও বলছে। ডাক্তার দেখাতে হবে। না হয় আরও সমস্যা হবে। নয়নকে কাছে ডাকলেন। বললেন, কাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।    

নয়ন মহাখুশি। এবার সেও চশমা পরতে পারবে। পরদিন নয়নকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন
বাবা। নয়ন আজ চশমা পরবে। সে কথা ভাবছে। কিন্তু ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন, সমস্যা একটু আছে। তবে চশমা লাগবে না। ওষুধ খেলে ভাল হয়ে যাবে।

এ কথা শুনে নয়নের মন খারাপ হলো। কী বলছে ডাক্তার, চশমা লাগবে না! ডাক্তারকে
বলল, চশমা দেবেন না? আমার বন্ধুর এমন হয়েছে। ডাক্তার চশমা দিয়েছেন।   

ডাক্তার হেসে বললেন, ওষুধ খাও। ভাল না হলে চশমা দেবো।

ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরল নয়ন। কিন্তু ওষুধ সে খাচ্ছে না। প্রতিদিন ওষুধ নিয়ে ঘরের কোণে ময়লার
কুয়ায় ফেলে দিচ্ছে। তার ভাবনা এমনিই চোখে সমস্যা নেই। ঝাপসা তো দেখে না। ওষুধ খেলে অঙ্ক স্যারের মতো হলেও চশমা
পরতে পারবে না। তার দরকার চশমা। পুচকে আবির চশমা দিয়ে ভাব দেখায়। বন্ধুরা এখন ওর দলে। ওর পাশে বসে।

কয়েক দিনের মাথায় ওষুধ শেষ। এবার ডাক্তার কোথায় যাবে। চশমা দিতেই হবে। নয়ন বাবাকে বলল, বাবা ওষুধ শেষ।

বাবা বললেন, এখন তো চোখে ঝাপসা দেখিস না।

নয়ন বিস্ময়ের সুরে বলল, কী বলো বাবা! কোনো কাজেই লাগেনি ওষুধ। আগের থেকে এখন বেশি ঝাপসা দেখি।   

তাই! বাবা বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন। তাহলে ছেলেটার চোখে বেশ সমস্যা হয়েছে। আবার ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তারকে বললেন, ওষুধ তো খেল। কাজ হলো না। এবার দেখেন চশমা দিয়ে। কী হয়। বাবা চশমা দিতে বলেছে একথা শুনে নয়ন
মহাখুশি। আজ সে চশমা পরবে। কী মজা।

বাড়িতে ফিরে চশমা দিয়ে আয়নার সামনে
দাঁড়াল নয়ন। অরিন সত্যি বলছিল। চশমায় তাকে সুন্দর দেখায়। অনেক সময় দেখল। তবে সমস্যা একটা হচ্ছে। মাথা ঘুরছে। তবুও চশমা খুলছে না। বাবা বকবে।

পরদিন চশমা পরে স্কুলে এসেছে নয়ন। সবাই দেখছে নয়নের চশমা। কী ব্যাপার চশমা পরেছিস? প্রশ্ন বন্ধুদের। তবে চশমা নিয়ে নয়নের তেমন উৎসাহ নেই। এখন বিতৃষ্ণা লাগছে। কেন যে তখন চশমা ভূত মাথায় ঢুকেছিল। এখন মাথা ঘোরে। চোখ ঘোলা হয়ে যায়। শুধু মাথা ঘুরছে না। অঙ্কও ঘুরছে। ভুল করে রেজাল্ট আগে লিখেছে। অঙ্ক পরে করছে।

অঙ্ক স্যার বললেন, নয়ন চশমা দিয়ে সব উল্টো দেখছিস? অঙ্ক দেখি উল্টো করেছিস।

মৃদু হেসে নয়ন বলল, স্যার তাই মনে হচ্ছে। এখন সব উল্টো দেখি। জমিন দেখি আসমানে। আসমান দেখি সাগরে।

এ কথা শুনে স্যার হেসে উঠলেন। চশমা খুলে রাখল নয়ন। মনে হচ্ছে চশমা ছাড়াই ভাল দেখে।

নয়নের চশমা এখন আর চোখে নেই। পড়ে আছে আলমারির ওপর? বাবার সামনেও আজকাল যায় না সে। চশমা না দেখলে বাবা বকবে। বাবা একদিন আলমারির ওপর চশমা দেখে বললেন, এই চশমা কার?

মা বললেন নয়নের। বাবা ডাকলেন নয়নকে।  মাথা নিচু করে বাবার সামনে দাঁড়াল। বাবা বললেন, চশমা ফেলে রাখছিস কেন? চোখ ঝাপসা হয় না?

নিচু মুখে নয়ন বলল, চশমা ছাড়াই ভালো দেখি বাবা। চশমা দিলে ঘোলা দেখি।    

বাবা হাসলেন। বললেন, চশমার শখ এত তাড়াতাড়ি মিটে গেল। 

 

কিডজ পাতায়
বড়দের সঙ্গে
শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের
লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার
অভিজ্ঞতা, আঁকা
ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো
বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ
স্কুল-কলেজের
সাংস্কৃতিক খবর
যতো ইচ্ছে
পাঠাও। ঠিকানা
kidz@bdnews24.com
সঙ্গে নিজের
নাম-ঠিকানা
ও ছবি
দিতে ভুলো
না!