ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে
মঙ্গলবার মিরপুরে আবাহনীকে ৪ উইকেটে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলে নিজেদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে
নিয়ে গেছে শেখ জামাল। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই তারা নিশ্চিত করেছে একদিনের ম্যাচের ক্রিকেটে
দেশের সেরা আসরে প্রথমবার ট্রফি জয়।
সাদা বলের ক্রিকেটে
দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুই টুর্নামেন্টেরই চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক এখন ইমরুল। এবারের বিপিএলে
তার নেতৃত্বই শিরোপা জিতেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
তার বিপিএল দলের
শিরোপা জয়ে বিস্ময়ের খুব বেশি কিছু ছিল না। বিদেশি ক্রিকেটার সংগ্রহে সবচেয়ে সমৃদ্ধ
ছিল তার দল। বিদেশি ক্রিকেটারদের পারফারম্যান্সও ছিল দারুণ। কিন্তু ঢাকা লিগে ফেবারিটদের
তালিকায় তারা ছিলেন না। লিগ শুরুর আগে তাদেরকে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখেছিলেন
হয়তো কম জনই। কিন্তু ভারতীয় স্পিনিং অলরাউন্ডার পারভেজ রাসুলের দারুণ ধারাবাহিকতার
সঙ্গে দেশের ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স মিলিয়ে তারাই তাক লাগিয়ে দিয়েছে চ্যাম্পিয়ন
হয়ে।
শের-ই-বাংলা জাতীয়
ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শিরোপা জয়ের উৎসবের ফাঁকে ইমরুল খোলাসা করলেন তার নেতৃত্বের ‘ম্যাজিক’
কোথায়।
“কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে
আমরা যখন যাই, তখন লক্ষ্য থাকে চ্যাম্পিয়ন হব। সেখানে প্রতি বছরই আমরা চ্যাম্পিয়ন
হই বা ফাইনালে খেলি। যখন শেখ জামালে যাই, তখন বলেছিলাম, আমি দেখতে চাই না দুয়েকটা নির্দিষ্ট
দলই প্রতি বছর চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে। আমি চাই, আমাদের দল চ্যাম্পিয়ন হোক।”
“আবাহনীতে বা অন্য
দলে যারা খেলে ঘুরে-ফিরে, এদের সঙ্গেই কিন্তু আমরা ক্রিকেট খেলি। ওরা যদি পারে, আমরা
কেন পারব না? আমার বার্তা এটাই ছিল যে, আমরা ভিন্ন কিছু করে দেখাতে চাই। প্রত্যেকেটা
খেলোয়াড় সেভাবে বিশ্বাস করেছিল বলেই হয়তো এটা সম্ভব হয়েছে।”
বিপিএলে সবশেষ আসরসহ
তিনটি শিরোপা জিতেছে কুমিল্লা। দুটিতেই অধিনায়ক ছিলেন ইমরুল। তার নেতৃত্বের দর্শন
খুবই সরল, পুরো দলকে গাঁথতে হবে এক সুতোয়।
“অধিনায়ক হিসেবে
দলের সঙ্গে কতটা সম্পৃক্ত, সেটা আসলে গুরুত্বপূর্ণ। অধিনায়ক হিসেবে আপনি যদি মনে করেন,
আপনি ভিন্ন পর্যায়ে আছেন বা ওদের থেকে দূরে থাকতে চান, সেক্ষেত্রে যেটা হয়, ‘টিম বন্ডিং’
তৈরি হয় না। আমার কাছে টিম বয় যা, দ্বাদশ ব্যক্তিও তা এবং একজন শীর্ষ খেলোয়াড়ও তা।
ওদের সঙ্গে সেভাবেই আমার চলা ফেরা। এটা ওরাও উপভোগ করে, আমিও উপভোগ করি। এজন্য হয়তো
সবাই মন থেকে চায়, দলটা চ্যাম্পিয়ন হোক।”
এখন আর বলার অপেক্ষা
রাখে না, দলকে একতাবদ্ধ করার কাজটি তিনি ভালোভাবে করতে পেরেছেন শেখ জামালে। তেমন কোনো
বড় নাম না থাকলেও দলটি টুর্নামেন্টে হয়ে উঠেছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য। ১৪ ম্যাচে হারের
স্বাদ পেয়েছে কেবল দুটিতে!
১০ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট
নিয়ে শীর্ষে থেকে সুপার লিগ শুরু শেখ জামাল। অতীতে অনেকবারই প্রাথমিক পর্বের সর্বোচ্চ
পয়েন্ট পাওয়া দল জিততে পারেনি শিরোপা। এবার এমন কিছু না হওয়ায় বড় অবদান আছে নুরুল
হাসান সোহানের। সুপার লিগে টানা চার ইনিংসে এই কিপার-ব্যাটসম্যান খেলেছেন ৭০ ছোঁয়া
ইনিংস। এর তিনটিতেই জিতেছে দল।
৭ ম্যাচে ১১৭ গড়ে
এক সেঞ্চুরি ও চার ফিফটিতে তার রান ৪৬৮। শিরোপা জয়ের পথে শেখ জামালের ‘ঘরের ছেলের’
এই পারফরম্যান্স ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন ইমরুল।
“আমি আশা করেছিলাম,
সোহান এমনই ব্যাটিং করবে। ও যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিল, আমরা ওর জায়গাটা খুব মিস করছিলাম।
ওর জায়গাটা হয়তো আরেক জন কাভার করছিল, কিন্তু সোহানের মতো করতে পারছিল না। সোহানের
মতো খেলোয়াড় এলে অবশ্যই দলের শক্তি বেড়ে যাবে।”
এছাড়াও ডেথ ওভারে
মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির বোলিং, বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল ইসলামের পারফরম্যান্স এবং
ভারতের পারভেজ রসুলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যও অধিনায়কের চোখে পাচ্ছে আলাদা গুরুত্ব।
“মৃত্যুঞ্চয় যেভাবে
ডেথ ওভারে বোলিং করেছে, কয়েকটা ম্যাচ জিতিয়েছে, আমি সেটা ওভাবে আশা করিনি সে ম্যাচগুলো
এভাবে বের করে দেবে। আমাদের বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল খুব ভালো বোলিং করেছে। পারভেজ
রসুল এত ভালো বোলিং করবে প্রত্যেক ম্যাচে, আমি সেটা আশা করিনি। ওর সঙ্গে আগেও খেলেছি,
এই বছর এত ভালো বোলিং করবে আমি আশা করিনি। ব্যাটিংটাও সে করে দিয়েছে। শিরোপা জিততে
আসলে এই ধরনের টিম পারফরম্যান্সের প্রয়োজন হয়।”
ব্যাট হাতে খারাপ
করেননি ইমরুল নিজেও। ১৪ ম্যাচে এক সেঞ্চুরি দুই ফিফটিতে ৩৮.৫৮ গড়ে অভিজ্ঞ এই বাঁহাতি
ব্যাটসম্যানের রান ৪৬৩। টুর্নামেন্টে নিজেকে নিয়ে নিয়ে আশা পূরণ হয়েছে তার?
“আমি ব্যক্তিগত
লক্ষ্য নিয়ে চিন্তা করি না। আমি যে দলে খেলি, সেই দলে আমার যেভাবে খেলার দরকার সেভাবে
খেলার চেষ্টা করি।”