ক্যাটাগরি

এবার দুর্নীতি মামলায় সু চিকে ৫ বছরের জেল

মামলার কার্যক্রম সম্পর্কে ‘ওয়াকিবহাল একটি
সূত্রের’ বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ইয়াংগনের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফিও মিন থেইনের
কাছ থেকে ৬ লাখ ডলার এবং ১১ দশমিক ৪ কেজি সোনা ঘুষ নেওয়ার মামলায় বুধবার এ রায় এসেছে।

ফিও মিন থেইনকে একসময় সু চির উত্তরসূরী হিসেবে
বিবেচনা করা হত। গত বছরের অক্টোবরে দেওয়া সাক্ষ্যে তিনি সু চিকে ঘুষ দেওয়ার কথা ‘স্বীকার’
করেছিলেন। তবে ওই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন সু চি।

শান্তিতে নোবেলজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী সু
চির বিরুদ্ধে যে ১১টি অভিযোগ এনেছে দেশটির সামরিক জান্তা, তার মধ্যে প্রথম দুর্নীতি
মামলায় তার সাজার রায় এল।

এর আগে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে
উসকানি দেওয়া এবং করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ ভঙ্গের অভিযোগে এক মামলায় গত ডিসেম্বরে সু
চিকে চার বছরের কারাদণ্ড হয়। পরে তা কমিয়ে দুই বছর করা হয়।

আর অবৈধভাবে ওয়াকিটকি আমদানি এবং ব্যবহারের
আরেক মামলায় জানুয়ারিতে তাকে চার বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।

সবগুলো মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হলে ১০০
বছরের বেশি কারাদণ্ড হতে পারে ৭৬ বছর বয়সী এই নেত্রীর।বিচার শেষ হতেই লাগতে পারে কয়েক
বছর।

বিচার ও সাজা পাড়ি দিয়ে মিয়ানমারে স্বৈরশাসনের
বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সবচেয়ে পরিচিত মুখটির রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা দিন দিন ক্ষীণ হয়ে
আসছে।

মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোয় সামরিক জান্তার
বিশেষ আদালতে সু চির রুদ্ধদ্বার বিচার হচ্ছে। গণমাধ্যমকে এই বিচার প্রক্রিয়ার খবর জানানো
হচ্ছে না এবং সু চির আইনজীবীদেরও সংবাদ মাধ্যম এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ
করতে দেওয়া হচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সু চির এ বিচারকে
‘প্রহসন’ অ্যাখ্যা দিয়েছে। অন্যদিকে সামরিক জান্তা বলছে, ‘স্বাধীন আদালতে যথাযথ প্রক্রিয়াতেই’
এনএলডি নেত্রীর বিচার হচ্ছে।

গতবছর ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে
সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।
সেদিনই সু চি ও তার দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

সু চিকে তখন থেকেই বন্দি করে রাখা হয়েছে।
মামলার বিচার চলার সময় তাকে কয়েদীর পোশাক হিসেবে সাদা জামা এবং বাদামি লুঙ্গিতেও আদালতে
হাজির করতে দেখা গেছে।

সামরিক শাসনের বিরোধিতা করায় সু চি ২০১০
সালের আগ পর্যন্ত বহু বছর গৃহবন্দি ছিলেন। ওই বছর মুক্তি পাওয়ার পর ২০১৫ সালের নির্বাচনে
তার নেতৃত্বাধীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি বড় ধরনের জয় পায়।

২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে তার দল ফের
জয় পায়। এর কয়েক সপ্তাহ পর নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল
করে।

নির্বাচন কমিশন সামরিক বাহিনীর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান
করেছিল। পরে স্বাধীন পর্যবেক্ষকরাও জানান, সেনাবাহিনীর ওই অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।

ওই অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারজুড়ে অশান্তি
চলছে, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায়। সেই বিক্ষোভ দমাতে সামরিক বাহিনীর
দমন-পীড়নের মাত্রা আরেক দফা বাড়ে। গ্রেপ্তার করা হয় রাজনৈতিক কর্মী, অধিকারকর্মী, সাংবাদিক,
শিক্ষক, চিকিৎসকসহ গণতন্ত্রপন্থি ১০ হাজারের বেশি মানুষকে।

পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন
ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের হিসাবে অভ্যুত্থানের পর থেকে দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত
হয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে।