বিকেএসপিতে বৃহস্পতিবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শেষ দিনে
আবাহনীর জয় ৬৩ রানে। শেষটা আনন্দময় হলেও এবারের লিগ আশানুরূপ হলো না প্রতিযোগিতার
সফলতম দলটির। গত তিনবারের চ্যাম্পিয়নরা আসর শেষ করল চার নম্বরে থেকে।
আফিফ হোসেন ও জাকের আলির জুটিতে শুরুর বিপর্যয় সামাল দেওয়া
আবাহনী ৯ উইকেটে ২৭৫ রান করে সাইফের ঝড়ো ইনিংসে। আট নম্বরে নেমে তিনি করেন ৪১ বলে
৬২ রান। আফিফ খেলেন ৭৮ রানে ইনিংস, জাকেরের ব্যাট থেকে আসে ৪৮।
সাইফের দুর্দান্ত বোলিংয়ে শুরুতেই পথ হারিয়ে ফেলে রূপগঞ্জ
টাইগার্স। আরিফুল হকের ৯৫ রানের ইনিংসের পরও তারা থামে ২১২ রানে। দারুণ ব্যাটিংয়ের
পর বল হাতে ৩৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা সাইফ।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই মাহমুদুল হাসান জয়কে
হারায় আবাহনী। এরপর দলকে টেনে নেন আফিক ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ। দুই জনে গড়েন ৫৫
রানের জুটি।
বিপদ কাটিয়ে উঠতে না উঠতে তিন ওভারে তিন ব্যাটসম্যানকে
হারায় দলটি। ৮ চারে ২৬ বলে ৩৯ রান করা নাঈম শেখকে বোল্ড করে দেন মহিউদ্দিন তারেক।
নিজের পরের ওভারে এই পেসার ফেরান মোসাদ্দেক হোসেনকে। মাঝে আব্দুল গাফফার রনির বলে
কট বিহাইন্ড হয়ে যান তৌহিদ হৃদয়।
৬৪ রানে ৪ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন আফিফ ও জাকের।
তাদের ১১১ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় আবাহনী। আব্দুল গাফফারের অফ স্পিনে ইন সাইড
আউট শট খেলার চেষ্টায় আফিফ ক্যাচ দেন নাসুম আহমেদের হাতে। শেষ হয় তার ৩ ছক্কা ও ৭
চারের ইনিংস।
পরের ওভারে আব্দুল গাফফার ফিরিয়ে দেন ৪ চারে ৪৮ করা
জাকেরকে। শামীম হোসেনকে দ্রুত বিদায় করেন নাসুম।
এরপর শুরু সাইফের আগ্রাসী ব্যাটিং। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন
তানজিম হাসান। দুই জনে গড়েন ৬৬ বলে ৬৫ রানের জুটি। শেষ ওভারে ৩৯ বলে এবারের লিগে
নিজের প্রথম ফিফটি স্পর্শ করেন সাইফ। মাঠ ছাড়েন ৫ ছক্কা ও ২ চারে ৬২ করে।
রূপগঞ্জ টাইগার্সের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি করে উইকেট নেন
আব্দুল গাফফার ও মহিউদ্দিন।
রান তাড়ায় দ্বিতীয় ওভারে মোসাদ্দেককে দুই চার মারেন জাকির
হাসান। ওই ওভারেই পরে দারুণ এক ডেলিভারিতে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে দেন
আবাহনী অধিনায়ক।
সাইফের বলে ফ্লিক করে বাউন্ডারিতে তানজিমের এক হাতে নেওয়া
দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নেন আজমির। দ্রুত বিদায় নেন ফজলে মাহমুদও। পাকিস্তানের সাদ
নাসিমকে টিকতে দেননি সাইফ। অনেকটা সময় উইকেটে কাটানো ওপেনার ইমরানুজ্জামান মাঠ
ছাড়েন সাইফের বলে ব্যথা পেয়ে। পরে তাকে ফেরান সাইফই।
৭৭ চারে ৪ উইকেট হারানো দলকে টানেন আরিফুল। আগ্রাসী
ব্যাটিংয়ে দ্রুত রান তুলতে থাকেন তিনি। নাসুমকে নিয়ে জুটিতে তোলেন ৫৭ রান। পরে শাহ
পরানের সঙ্গে গড়েন ৪১ রানের জুটি।
একটা সময় সাইফের বোলিং ফিগার ছিল ৬-০-১৭-৩। কিন্তু
আরিফুলের ঝড়ে কিছুটা খরুচে হয় তার বোলিং। পেস বোলিং অলরাউন্ডারকে টানা চার বলে
তিনটি চার ও একটি ছক্কা মারেন আরিফুল।
যেভাবে এগোচ্ছিলেন তিনি, সেঞ্চুরিতে পা রাখা ছিল সময়ের
ব্যাপার। যুব বিশ্বকাপজয়ী পেসার তানজিমের বলে ৯৪ রান জীবন পেয়ে এক বল পরই বিদায় নেন
তিনি ৯৫ রানে। ফুলটস বল ঠিকমতো ব্যাটে-বলে করতে না পেরে ধরা পড়েন লং অফে। থামে তার
৬ ছক্কা ও ৮ চারের ইনিংস।
এরপর আর বেশিদূর যেতে পারেনি রূপগঞ্জ টাইগার্স। ৩ রানে
শেষ তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে গুটিয়ে যায় তারা ৪৬তম ওভারে।
আবাহনীর জয়ে বল হাতে অবদান রাখেন মোসাদ্দেকও। অফ স্পিনে
৩৭ রান নেন ৩ উইকেট।
১৫ ম্যাচে ৬ জয়ে পাঁচ নম্বরে থেকে লিগ শেষ করল রূপগঞ্জ
টাইগার্স। আবাহনীর ১৫ ম্যাচে জয় ৯টি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আবাহনী লিমিটেড: ৫০ ওভারে ২৭৫/৯ (নাঈম শেখ ৩৯, জয় ০, আফিফ ৭৮, হৃদয় ৪, মোসাদ্দেক ০,
জাকের ৪৮, শামীম ২, সাইফ
উদ্দিন ৬২*, তানজিম ২৬, তানভীর ২,
আরাফাত সানি ২*; নাসুম ১০-১-৩১-২, শফিকুল ৭-০-৬৩-১, আব্দুল গাফফার ১০-০-২৩-৩,
আজমির ১০-০-৫৬-০, মহিউদ্দিন ৭-০-৫৭-৩, আরিফুল ৩-০-২২-০, পরান ৩-০-২১-০)
রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৪৫.৫ ওভারে ২১২
(ইমরানুজ্জামান ৩৩,
জাকির ৯, আজমির ২, ফজলে
মাহমুদ ৪, নাসিম ১৭, আরিফুল ৯৫,
নাসুম ১৮, পরান ১৪, আব্দুল
গাফফার ৫*, মহিউদ্দিন ১, শফিকুল ০;
সাইফ উদ্দিন ৭.৫-০-৩৮-৪, মোসাদ্দেক ১০-০-৩৭-৩,
তানভীর ৯-২-২৮-১, আরাফাত সানি ১০-০-৩৩-১,
তানজিম ৭-০-৪৩-১, আফিফ ২-০-২৬-০)
ফল: আবাহনী লিমিটেড ৬৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন