ক্যাটাগরি

কারখানা ছুটির পর সাভার, গাজীপুরে যাত্রীর ঢল, সড়কে দুর্ভোগ

শনিবার দুপুর পর্যন্ত গাজীপুরে ঢাকা-ময়মমনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়ে। বেলা ২টা পর্যন্ত মহাসড়কে থেমে থেমে জট থাকলেও সন্ধ্যার পর দীর্ঘ হতে শুরু করে।

একই চিত্র দেখা গেছে ঢাকার সাভারে ও আশুলিয়ায়। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নবীনগর পর্যন্ত, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে নবীনগর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার যানজটে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে ঘরমুখো মানুষদের।

বাস না পেয়ে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়ায় মিনিবাসে, মাইক্রোবাসে, ট্রাকে, মোটরসাইকেলে, পিকআপে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রওনা হয়েছেন গন্তব্যের উদ্দেশে।

গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক জাকির হোসেন। ঈদে স্ত্রী হালিমা বেগম আর মেয়ে জুলেখাকে নিয়ে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মুকুন্দপুরে গ্রামের বাড়িতে যাবেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, ভোর ৫টা থেকে কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড়ে বাসের অপেক্ষায় থাকলেও সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কোনো বাসে উঠতে পারেননি তারা।

দু-একটি বাস পেলেও তিনজনের জন্য তিন হাজার টাকা ভাড়া চাওয়া হয় বলে অভিযোগ জাকিরের। নিরুপায় হয়ে বসে থেকে পরে একটি পিকআপে ৫০০ টাকায় বগুড়া পর্যন্ত যাওয়ার জন্য রওনা দেন তারা।

গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ভাড়া ১০০ থেকে ১৫০ টাকা হলেও দ্বিগুণেরও বেশি নেওয়ার অভিযোগ করেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার কামরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “যার যেমন খুশি তেমন ভাড়া নিচ্ছে। কাউকে কিছু বলারও সুযোগ নেই।”

তাদের মতই হাজার হাজার ঘরমুখো মানুষকে চন্দ্রা ত্রিমোড়ে যানবাহনের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় রাত ৯টার দিকে। বাসগুলো ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ তাদের।

চন্দ্রা এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন কোনাবাড়ী হাইওয়ে থানার ওসি ফিরোজ হোসেন।

তিনি বলেন, শনিবার অধিকাংশ কারখানা ছুটি হলে দুপুরে চন্দ্রা এলাকায় মানুষের ঢল নামে। গাড়িগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলতে না পারায় দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। চন্দ্রা মোড়ে হাজার হাজার মানুষ বাসে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছে। এ কারণেও যান চলাচল কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এর আগে শুক্রবার নবীনগর সড়কে প্রায় ১০ কিলোমিটার আর চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের দিকে পাঁচ কিলোমিটার জট তৈরি হলেও শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ চাপ কমে যায়।

ফিরোজ বলেন, “শনিবার দুপুর পর্যন্ত চাপ কিছুটা স্বাভাবিক হলেও সন্ধ্যার পর আবার বেড়েছে।

অধিকসংখ্যক যাত্রী একসঙ্গে রওনা হওয়ায় গাড়ির অভাব পড়ে বলে জানান গাজীপুর সিটি পুলিশের উপ-কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

তিনি বলেন, “শনিবার দুপুরে অধিকাংশ পোশাক কারখানা ছুটি হলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে। এতে গাড়ির সংকট দেখা দেয়। গাড়ির তুলনায় যাত্রী বেশি হওয়ায় অনেকেই ট্রাক ও পিকআপে করে রওনা হন।

“তিন দিন আগে এসব গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও গাড়ির অভাবের কারণে আটকানো হচ্ছে না। আটকালে জট লাগতে পারে।”

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সড়কে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলেও একই পরিস্থিতি। বেশির ভাগ কারখানা একযোগে বন্ধ হওয়ায় বাসের অভাব পড়ে। ঘরমুখী মানুষ পিকআপে, ট্রাকে ও মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরতে শুরু করে। এতে বিভিন্ন জায়গায় দেখা দেয় যানজট।

সাভার বাসস্ট্যান্ডের সার্ভিস লেইনে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণেও জট দেখা গেছে।

তিনি বলেন, অন্যান্য বারের তুলনায় এবার যানজট নেই বললেই চলে। নিবিঘেœ মানুষ বাড়ি ফিরতে পারছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বাইপাইল এলাকায় অপেক্ষা করছিলেন পোশাক শ্রমিক জুলেখা বেগম। তিনি নাটোরে বাড়ি যাওয়ার জন্য পরিবার নিয়ে রওনা হয়েছেন।

জুলেখা বলেন, “যানজটের কারণে এখন বিরক্ত হচ্ছি। আবার মানুষের ঢল বেশি হওয়ায় সুযোগ নিচ্ছে বাস মালিকরা। তারা ইচ্ছামত ভাড়া বাড়াচ্ছে।”

ভাড়া বেশি হওয়ায় বাড়ি ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে জানান ডিইপিজেডের পোশাককর্মী ফরিদা পারভীন।

ফরিদার বলেন, “আমার মত অনেক যাত্রীই বিপাকে পড়েছেন। অনেকে নিরুপায় হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে, পিকআপে, মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছেন।”

পুলিশ যানজট নিরসনে সচেষ্ট থকলেও ভাড়া বেশি নেওয়ার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না।

সাভার হাইওয়ে থানার পরিদর্শক আতিকুর রহমান বলেন, যানজট নিরসনে তাদের ২৫টি দলে দেড় শতাধিক পুলিশ সদস্য কাজ করছেন।

“ইফতারির পরে গাড়ির চাপ কিছুটা বেড়েছে। তবে গুরুতর যানজট মহাসড়কে নেই। আমরা ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কে রয়েছি। আর ভাড়া বেশি নেওয়ার ব্যাপারে কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন।“