শনিবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের
সঙ্গে আলাপের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
আন্তঃনগর ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ট্রেনে বৃহস্পতিবার রাতে ঈশ্বরদী
থেকে ঢাকাগামী তিনজন যাত্রী বিনা টিকেটে এসি কেবিনে ভ্রমণ করছিলেন। এসময় তারা নিজেদের
রেলমন্ত্রীর আত্মীয় বলে পরিচয় দেয়।
পরে ওই তিন যাত্রীকে জরিমানা করেন
কর্তব্যরত টিটিই শফিকুল ইসলাম। এ ঘটনায় পরদিন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে বিষয়টি
নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, “বিনা টিকেটে ট্রেনে
ভ্রমণ করা যাত্রীরা আমার আত্মীয় নয়,
তাদের
সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। মন্ত্রীর (আমার) নাম ভাঙিয়ে কেউ হয়তো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা
করেছে। ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই”।
শনিবার সকালে ঘটনা শুনেছেন
জানিয়ে তিনি বলেন, “রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুনেছি ওই টিটিই বিনা
টিকিটের যাত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা
নেওয়া হয়েছে”।
ঈদের সরকারি ছুটির মধ্যে ওই
রাতের ঘটনার পরই যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে টিটিইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এর সঙ্গে নিজের কোনো সংযোগ
নেই জানিয়ে নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, “ঘটনার সঙ্গে মন্ত্রীর কোনো আত্মীয় জড়িত নন। রেল কর্মকর্তারা
ওই টিটিইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারেও আমি কিছু জানতাম না”
রেলমন্ত্রী হুঁশিয়ার করে বলেন, “আমরা রেলসেবা বাড়াতে
কাজ করছি। বিনা টিকেটের যাত্রী যদি মন্ত্রীর আত্মীয়ও হয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে
হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
“একইভাবে কোনো রেল কর্মকর্তাও
যদি যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে তাকেও শাস্তি পেতে হবে। যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ
আচরণ করার কারণেই টিটিইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে”।
এর
আগে পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভাগীয় রেল দপ্তর জানায়, ঘটনার রাতে কর্তব্যরত টিটিই শফিকুল ইসলাম
ওই যাত্রীদের টিকেট দেখতে চাইলে তারা নিজেদের রেলমন্ত্রীর আত্মীয় বলে পরিচয় দেন।
বিষয়টি
নিয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (এসিও) মো. নুরুল আলমের সঙ্গে
আলাপ করলে টিটিইকে তিনি সর্বনিম্ন ভাড়া নিয়ে টিকেট কাটার পরামর্শ দেন।
এসিওর
পরামর্শ অনুযায়ী টিটিই শফিকুল ইসলাম ওই তিন যাত্রীকে এসি টিকেটের পরিবর্তে মোট ১ হাজার
৫০ টাকা নিয়ে জরিমানাসহ সুলভ শ্রেণির নন এসি কোচে সাধারণ আসনের টিকেট করে দেন।
বরখাস্তের আদেশের বিষয়টি
ঈশ্বরদীর টিটিই হেডকোয়ার্টারের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র টিটিই ইন্সপেক্টর মো. বরকতুল্লাহ
আলামিন ফোনে শুক্রবার শফিকুল ইসলামকে জানান। সে সময় তিনি সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে
ডিউটিরত ছিলেন।
এ বিষয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের
বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন বলেন, “আমাদের কন্ট্রোল অফিস থেকে একটি অফিস অর্ডার আসলে টিটিইকে সাময়িক
বরখাস্ত করা হয়।”
এ ঘটনায় পাকশী বিভাগীয় রেলের
সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিও) সাজেদুল ইসলাম বাবুকে প্রধান করে এবং সহকারী নির্বাহী
প্রকৌশলী (এইএন) শিপন আলী ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সহকারী কমান্ডেন্ট (এসিআরএনবি)
আবু হেনা মোস্তফা কামালকে সদস্য রেখে গত শুক্রবার রাতে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত
কমিটি গঠন করা হয়েছে।”
রেলমন্ত্রীর সাময়িক পদত্যাগ দাবি টিআইবির
টিটিই বরখাস্তের ঘটনাকে ‘ন্যাক্কারজনক’ উল্লেখ করে নৈতিকবোধ থেকে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনকে সাময়িক
সময়ের জন্য পদত্যাগ করার আহবান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
(টিআইবি)।
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে
এই দাবি জানিয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “ঘটনাটি ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি নির্লজ্জ ও নিকৃষ্টতম উদাহরণ।”
এখানে মূলত দুইভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে
উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রথমত রেলমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়দের বিনা টিকেটে রেল
ভ্রমণ অর্থাৎ তারা ধরেই নিয়েছিলেন যে, রেলের প্রচলিত আইন তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়!
“দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট টিকেট পরিদর্শক তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করায়,
তাকে কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান না করেই তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইল ফোনে
সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।”
টিআইবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,
“পুরস্কৃত হওয়ার পরিবর্তে বরখাস্ত
হবার ঘটনায় দেশবাসীর কাছে এই বার্তাটিই পৌঁছেছে
যে, ক্ষমতার দাপট ও অনিয়মই হচ্ছে বাস্তবতা।
“তাছাড়া, এই নিকৃষ্টতম দৃষ্টান্ত এখনও গুটিকয়েক যারা নিষ্ঠা ও সততার সাথে
স্ব স্ব ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের জন্য একটি শক্তিশালী নেতিবাচক বার্তা হিসেবে
বিবেচিত হবে।”
নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে সংস্থাটির
বিবৃতিতে বলা হয়, “টিআইবি মনে
করে, যেহেতু রেলমন্ত্রীর আত্মীয়দের জড়িয়ে এ জাতীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং বিনা টিকেটে ভ্রমণকারীগণ রেলমন্ত্রীর পরিচয় ব্যবহার
করেছেন, তাই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে নৈতিক অবস্থান থেকে সাময়িক সময়ের
জন্য রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।”
পাশাপাশি ভয়ভীতি ও চাপের ঊর্ধ্বে থেকে সংশ্লিষ্টরা যাতে
বিনা টিকেটে ভ্রমণের দায়ে ‘অভিযুক্তদের’ ও দায়িত্ব
পালনকারী টিকেট পরিদর্শকের বরখাস্তের ঘটনায় নির্বিঘ্নে তদন্ত করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়
টিআইবি।