ক্যাটাগরি

তাদের নেতৃত্ব কোথায়, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

শনিবার বিকালে গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় তিনি এ প্রশ্ন তুলে ধরেন।

এসময় দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ডিত হওয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

তিনি বলেন, “দুইটাই সাজাপ্রাপ্ত। একটা তো ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, দুর্নীতি, এর পরে ২১শে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা এই বিভিন্ন অপকর্মের জন্য সাজাপ্রাপ্ত। এতিমের অর্থ আত্নস্বাৎ করে আরেকজন সাজাপ্রাপ্ত।”

তাদের সঙ্গে ‘জোট হচ্ছে’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এই নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপি, আর বিএনপির সাথে আবার গাঁটছড়া বাঁধছে দেখলাম ডান, বাম, অতি বাম, অমুক, সমুক, মানে বুদ্ধিজীবী, জ্ঞানী, গুণী অনেকেই সংযুক্ত হচ্ছেন।

“তো এই জ্ঞানী, গুণী দিয়ে আমি বলেছি তারা করুক। ভালো কথা। একটা অলটারনেটিভ থাকা উচিত। ভালোভাবে যদি সংগঠিত হতে পারে, আমাদের কোনো আপত্তি নাই। তারা হোক।”

সভায় শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ সবসময় মানুষের জন্য কাজ করে। এটা প্রমাণিত সত্য। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার নেতৃত্বে এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।

“আবারও আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরই দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন হয়েছে। আজকে জাতির পিতা একটা যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ গড়ে যেখানে স্বল্পোন্নত দেশ রেখে গিয়েছিলেন আমরা সেখানে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।”

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এর আগে যারা ক্ষমতায় ছিল। জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া। তারা ক্ষমতাকে… জনগণের কাছে তো ছিল না।

“ক্ষমতা ছিল ক্যান্টনমেন্টে বন্দি এবং সেখান থেকেই তারা মার্শাল ল যেটাকে বলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, সেভাবেই মিলিটারি ডিক্টেটরশিপই চালিয়েছে, যেটা আইযুব খান করে গিয়েছিল। অর্থাৎ যেন পাকিস্তানেরই একটা মডেল এখানে তৈরি করতে চাচ্ছে।”

যাদেরকে যুদ্ধ করে পরাজিত করা হয়েছে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা হবে না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা এনেছি, আমাদের নিজস্ব স্বকীয়তা আছে, নিজস্ব স্বত্ত্বা আছে, নিজস্ব সংস্কৃতি আছে, কাজেই আমরা সেভাবে আমাদের দেশকে গড়ে তুলব।”

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “সেখানে যারা হয়তো ক্ষমতায় যেতে চান কিন্তু জনগণের কাছে ভোট চাইতে পারেন না, ভোট চাইতে তো সামর্থ্য নাই, সংগঠন করার সামর্থ্য নাই বা যাদের কোনো কিছু নাই কিন্তু আকাঙ্ক্ষা আছে, তারাই চাইবে এদেশের স্থিতিশীলতা ধ্বংস করতে। তারাই চাইবে এদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে।

“কারণ ওই সামরিক জান্তার পকেট থেকে ক্ষমতায় বসে যে সমস্ত দল গঠন হয় তারা আর যাই হোক গণতন্ত্র দিতেও পারে না, গণতন্ত্র চর্চাও করতে পারে না, গণতন্ত্র বোঝেও না। কারণ তারা তো মানুষ খুন করতে পারে।”  

সভায় ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যার পর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “সেনা প্রধান থাকায় অবস্থায় সে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়। আবার একাধারে সেনাপ্রধান যেটা আর্মি রুলস অ্যাক্টে কখনো নেই যে একজন সেনাপ্রধান বা সেনাবাহিনীতে যে কর্মরত বা চাকরিজীবী নির্বাচন করতে পারে।

“সে সেটাও লঙ্ঘন করে। লঙ্ঘন করে এবং সংবিধান লঙ্ঘন করে নির্বাচনের প্রহসন এদেশে শুরু করে। ভোট কারচুপির কালচারটাই শুরু করে।”

সরকার প্রধান বলেন, “কাজেই এভাবেই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কিন্তু সব সময় ছিনিমিনি খেলা হয়েছে।”

ভোটের দিক থেকে আওয়ামী লীগ কখনও পিছিয়ে ছিল না জানিয়ে বারবার নানা ধরনের চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে পেছনে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এসময় দলের ভেতরে কারো কারো প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

“এইক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমি যদি সেই ৭৫ এর পর থেকে আমি পরবর্তী পর্যায়ে দেখি তাহলে দেখব যে, সেখানে শক্ররা কখনো ক্ষতি করতে পারে না যদি ঘরের শত্রু বিভীষণ না পায়।

“এটা হল বাস্তবতা। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে এটা সব সময় দেখা গেছে। সেটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয়। অত্যন্ত দুঃখজনক। এর মাঝেও কিন্তু আমরা এগিয়ে গিয়েছি।”

নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে ইলেকশনে যতটুকু উন্নতি হয়েছে সেটা কিন্ত আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। আওয়ামী লীগই করেছে। এটা আমাদেরেই দাবি ছিল।

“স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা এবং এখন ইভিএম অর্থাৎ মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবে। সাথে সাথে ভোটের রেজাল্ট পাবে। যাতে মানুষ ভোট দিতে পারবে। আমরা সেটাই চাই।”

তিনি বলেন, “মানুষ যদি আমাদের ভোট না দেয় দেবে না। আমরা আসব না ক্ষমতায়। কিন্তু ভোট দেবে বারবার, আমাদেরকে কিন্তু চক্রান্ত করেই ভোটের থেকে, ক্ষমতার থেকে দূরে সরিয়েছে।”

বারবার আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ায় দেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ কখনো পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি বা কোনো মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে তৈরি করা সংগঠনও না।

“এই সংগঠন মাটি ও মানুষের সংগঠন। কাজেই এই সংগঠন মাটি ও মানুষের জন্যই কাজ করে এবং সেটা আজকে প্রমাণিত।”

 


আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্র সময়োপযোগী করতে বললেন প্রধানমন্ত্রী
 

সরকার উৎখাতের চেষ্টা করছে কেউ কেউ: প্রধানমন্ত্রী  

আওয়ামী লীগের সভার শুরুতে শেখ হাসিনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা  

বৈঠকে বসছে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি: আড়াই বছর পর ‘থাকছেন সবাই’