রোববার দুপুরে রেলভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শফিকুলকে তড়িঘড়ি বরখাস্তের আদেশ দেওয়া বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশীর ডিসিও) নাসির উদ্দিনকে নোটিস দিয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
রেলমন্ত্রীর ‘আত্মীয় পরিচয়’ দিয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করায় তিন যাত্রীকে জরিমানা করেছিলেন টিটিই শফিকুল ইসলাম। আর রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর শাম্মী আক্তার মনি অভিযোগ করেন, তার আত্মীয়দের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ করেছেন টিটিই শফিকুল। ওই অভিযোগ পেয়ে পাকশীর ডিসিও বরখাস্ত করেন শফিকুলকে।
মন্ত্রী শনিবার আত্মীয়তার সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করলেও রোববার বলেন, টিকিট ছাড়া ভ্রমণ করা যাত্রীরা যে তার আত্মীয়, তা তিনি জানতেন না।
“ভুলভ্রান্তি হলে মানুষ তো সেভাবেই দেখবে। এখানে যদি দেখা যায় আমার স্ত্রী কোনো ভুল করে থাকে… ইয়ে করে থাকে… আমার কোনো নলেজে ছিল না।… মেসেজটা যেভাবে গেছে সেটা সঠিক হয়নি।”
ঘটনার সূত্রপাত ঈদের পরদিন ৪ মে রাতে। আন্তঃনগর ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ঈশ্বরদী থেকে ঢাকাগামী তিন যাত্রী বিনা টিকেটে এসি কেবিনে ভ্রমণ করছিলেন। এসময় তারা নিজেদের রেলমন্ত্রীর আত্মীয় বলে পরিচয় দেয়।
পরে ওই তিন যাত্রীকে জরিমানা করেন কর্তব্যরত টিটিই শফিকুল ইসলাম। পরদিন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
টিআইবি এবং যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শফিকুলকে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
এই প্রেক্ষাপটে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন শনিবার সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণ করা তিন যাত্রীর সঙ্গে তার ‘কোনো সম্পর্ক নেই’। তার ‘নাম ভাঙিয়ে’ কেউ হয়তো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে।
“রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুনেছি ওই টিটিই বিনা টিকিটের যাত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
তবে রোববারের সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী বলেন, টিটিই শফিকুল ইসলাম সেদিন তার দায়িত্বই সঠিকভাবে পালন করেছেন।
“টিটিইর কাজ হল রেলে শৃঙ্খলা আনা। তার কাজই তো রেলে যাত্রীদের সহযোগিতা করা, তাকে সাহায্য করা, সঠিক জায়গায় সেবা দেওয়া।”
টিটিই বরখাস্ত নিয়েও কিছু জানতাম না: রেলমন্ত্রী
বিনা টিকিটে ট্রেনে: তদন্ত কমিটিকে ব্যাখ্যা দেবেন বরখাস্ত টিটিই
এত অল্প সময়ের মধ্যে টিটিইকে বরখাস্ত করা হল কীভাবে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি… তার সাসপেনশন লেটার উইথড্র করা হচ্ছে। এবং যে ডিসিও এ ধরনের অর্ডার দিয়েছে, তাকে আমরা একটা শোকজ করছি, যে কীভাবে সেটা দিল।… টেলিফোনের অভিযোগের ভিত্তি করে সে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটার আমরা ব্যাখ্যা চেয়েছি।”
আরেক প্রশ্নের উত্তরে সুজন বলেন, ওই তিন যাত্রী যে তার স্ত্রীর আত্মীয়, সেটা তিনি শনিবার ওই সংবাদ সম্মেলনের সময়ও জানতেন না। স্ত্রীর অভিযোগের কারণেই টিটিই শফিকুলকে বরখাস্ত করা হয়েছিল কি না, তাও তার জানা নেই। তবে সেটাই যদি কারণ হয়ে থাকে, তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে।
তাহলে কোন ভুলের কারণে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “উইথড্রো করছি এজন্য যে আপনারা প্রশ্ন তুলেছেন যে একটা যাত্রী ঢাকা আসছে, সে একটা অভিযোগ দিল, অভিযোগটা এত অল্প সময়ের মধ্যে সে কীভাবে পেল, লিখিত অভিযোগটা।”
মন্ত্রীর স্ত্রী এ বিষয়ে পাকশীর ডিসিওকে ফোন করে থাকলে সেখানে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না- সেই প্রশ্নও করেন এক সাংবাদিক।
উত্তরে সুজন বলেন, তার স্ত্রী তো শুধু ‘অভিযোগই দিয়েছেন’।
এ ঘটনার সমালোচনা করে টিআইবি মন্ত্রীর পদত্যাগের যে দাবি তুলেছে, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সুজন বলেন, “টিআইবিটা হঠাৎ আসলো কোত্থেকে? টিআইবি কে?”