ক্যাটাগরি

শ্রীলঙ্কার ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল
ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শ্রীলঙ্কাকে ঋণ হিসেবে দেওয়া কারেন্সি
সোয়াপের মাধ্যমে ২০ কোটি ডলার পরিশোধের মেয়াদ বৃদ্ধি করার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া
হয়েছে।“

আগের শর্তেই এ ঋণের মেয়াদ আরও এক দফায় এক বছর বাড়ানো হয়েছে বলে জানান
তিনি।

এক বছর আগে নেওয়া ২০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধের মত অব্স্থায় নেই এখন
মারাত্মক আর্থিক সঙ্কটে বিপর্যস্ত বন্ধুপ্রতীম দেশ শ্রীলঙ্কা। এ কারণে আগের কয়েক
দফা মেয়াদ বাড়ানোর পর এবারও নতুন করে মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ
ব্যাংক।

শ্রীলঙ্কা সোয়াপের মাধ্যমে নেওয়া এ ঋণ পরিশোধে প্রথমে তিন মাস সময়
বাড়ানোর অনুরোধ করে। এরপর দেশটির আর্থিক অবস্থা ক্রমে আরও নাজুক হলে তাদের অনুরোধে
সাড়া দিয়ে আবারও সময় বাড়ানো হয়।

বৈদেশিক
মুদ্রার চাহিদা মেটাতে ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের শরণাপন্ন হয়। ২০ কোটি ডলার
ধার দিয়ে সে সময় বন্ধুপ্রতীম দেশটির পাশে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক দেশটিকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ
দেওয়ার অনুমোদন দিলেও পরে কয়েক কিস্তিতে ২০ কোটি ডলার দেয়।

‘কারেন্সি সোয়াপ’
ব্যবস্থায় নেওয়া ওই ঋণ পরিশোধের কথা ছিল তিন মাসের মধ্যে। লাইবর রেটের সঙ্গে ২
শতাংশ যোগ করে সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে শ্রীলঙ্কা তা দিতে পারেনি।

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্তের পাশাপাশি নতুন বেঙ্গল
কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটিতে উন্নীত করতে সময় বাড়ানোর আবেদন
অনুমোদন করেছে।

গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে একজন ছাড়া সব পরিচালক
উপস্থিত ছিলেন। পর্ষদ সদস্য ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়্যারম্যান আবু
হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না।

পরিচালনা পর্ষদের আলোচ্য সূচীতে থাকা বিষয়গুলোর সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে মুখপাত্র
জানান, বৈঠকে বেঙ্গল ব্যাংকের মূলধন বাড়ানো, সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেডকে দেওয়া
বাংলাদেশ ব্যাংকের আমানতের মেয়াদ বাড়ানোসহ আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে বেঙ্গল ব্যাংককে লাইসেন্স দেওয়ার সময়ের পরবর্তী দুই বছরের বদলে
বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর পরের দুই বছরের মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটিতে উন্নীত
করার শর্ত দিয়ে মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট
কর্মকর্তা।

চতুর্থ প্রজন্মের বেঙ্গল কমার্শিয়ালকে ব্যাংকের লেটার অব ইনটেন্ট
দেওয়া হয় ২০২০ সালে। তখন শর্ত দেওয়া হয় লাইসেন্স গ্রহণের দুই বছরের মধ্যে পরিশোধিত
মূলধন ৫০০ কোটিতে উন্নীত করতে হবে। অনুমোদনের সময়ে ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ছিল
৪০০ কোটি টাকা।

লাইসেন্স দেওয়ার প্রায় নয় মাস পর ২০২১ সালের ১৩ মার্চ বাণিজ্যিক
কার্যক্রম শুরু করে ব্যাংকটি। কোভিড ১৯ মহামারীতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে
দেরি হয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানায়।

তবে লাইসেন্সে শর্ত অনুযায়ী প্রায় দুই বছর পরও ব্যাংকটি পরিশোধিত
মূলধন ৫০০ কোটিতে উন্নীত করতে পারেনি। এ কারণে সময় বাড়ানোর আবেদন করে ব্যাংকটি বলে
জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।

এদিকে সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সোনালী ব্যাংক (ইউকে)
লিমিটেড, লন্ডনকে দেওয়া চার কোটি ৮০ লাখ লডারের আমানতের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। আগের
দেওয়া শর্ত অনুযায়ী মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া আমানত ফিরিয়ে নিলে ইউকে শাখা বন্ধ হয়ে যাবে;
এমন যুক্তি দিয়ে সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয় আমানতের মেয়াদ বাড়াতে।

এছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মীদের অবসরোত্তর ছুটি ও অবসরে থাকা
কর্মীদের মৃত্যু পরবর্তী দাফন ও সৎকারে অনুদান মঞ্জুর, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের
ক্যামেলস রেটিং ও ‘মেজর ইকোনোমিক ইন্ডিকেটর’ নিয়েও আলোচনা হয়।