দেশে নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী ঠেকাতে
জেলায় জেলায় ‘লকডাউন’ ঘোষণার মধ্যে সুনামগঞ্জ প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত আসল।
ধান কাটার মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত
থেকে হাজার হাজার মজুর এ সময় সুনামগঞ্জসহ হাওর অঞ্চলে এসে থাকে। এবার সেই সুযোগ না
থাকায় ধানকাটার দিনমজুর এলাকা থেকেই জোগাড় করতে হবে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ
বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে যান চলাচল বন্ধ, সাধারণ মানুষের জনসমাগম নিষিদ্ধ। জরুরি
প্রয়োজন ছাড়া ঘরবাড়ি থেকে বের হতে পারবে না।
“এমন অবস্থায় হাওরের বোরো ধান পাকাও শুরু
হয়েছে। ধান কাটতে হাওর এলাকায় প্রতি বছর জেলার বাইরের প্রচুর মজুর আনেন গৃহস্থরা (কৃষক)।
“এবার করোনাভাইরাসের পরিস্থিতির কারণে
অন্য জেলা থেকে ধান কাটার শ্রমিক না আনার আহ্বান জানানো হয়েছে।”
মৌসুমে সাধারণত ধান কাটার মজুরের অভাব
দেখা দিয়ে থাকে। এমন কোনো নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই গত বছর মে মাসে মাঠের ধান কাটার মজুর সঙ্কট
দেখা দেয়। সে সময় ওই সঙ্কটে শহুরে অনেককেই গ্রামে ধান কাটতে গিয়ে হাতে কাস্তে তুলে
নিতে দেখা যায়।
এবার এই বিধিনিষেধের ফলে সৃষ্ট সমস্যার চাইতে বড় সঙ্কট করোনাভাইরাসের
সংক্রমণ মোকাবেলাকেই দেখছে প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ জানান, দুর্গম
হাওরে ধানকাটার কৃষি শ্রমিকরা রাতে থাকার জন্য স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করতে
পারবেন।
“এছাড়া ধানকাটার মেশিন মেরামতের জন্য ওয়ার্কশপ
ও দোকান খোলা রাখা যাবে।”
হাওরে ধান কাটা দিন কয়েকের মধ্যে শুরু
হয়ে যাবে জানিয়ে জেলা কৃষক লীগের সদস্য সচিব বিন্দু তালুকদার বলেন, “বাইরের জেলা থেকে
শ্রমিক না আনার আহ্বানটি জেলা প্রশাসন দ্রুত গৃহস্তদের জানাতে হবে।
“প্রয়োজনে গ্রামের মসজিদের মাইকের মাধ্যমে
বিষয়টি গৃহস্তদের জানানো যেতে পারে।”
প্রতি বছর সুনামগঞ্জ জেলায় এ সময়ে ২০-২২
হাজার দিনমজুর দেশের অন্য জেলা থেকে সুনামগঞ্জ ধান কাটতে আসেন বলে জানান তিনি।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে- এবার সুনামগঞ্জের
১১টি উপজেলা ছোট-বড় ১৫৪টি হাওরে চলতি মৌসুমে দুই লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো
চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ মেট্রিক টন ধান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক
মোহম্মদ সফর উদ্দিন বলেন, “কৃষকরা যাতে নির্বিঘ্নে ধান ঘরে তুলতে পারেন সে ব্যবস্থা
করা হবে।
“কৃষি বিভাগের কাছে ৫০টি ধানকাটা ও মাড়াইয়ের
যন্ত্র আছে, সেগুলো কাজে লাগানো হবে।”