জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার এবং ভারতের আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস ঠিক থাকলে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুর্বল হয়ে ফের ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে ‘আসানি’।
এরপর এ ঘূর্ণিবায়ুর চক্র আরও দুর্বল হতে থাকবে এবং উপকূলে পৌঁছানোর আগেই হয়ত নিম্নচাপে পরিণত হবে।
ঝড় হয়ে আঘাত না হানলেও আসানি অন্ধ্র্র, ওড়িশা ও বাংলাদেশের দক্ষিণ দশ্চিম উপকূলে বৃষ্টি ঝরাবে বলে ভারতীয় আবহাওয়াবিদদের ধারণা।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, সোমবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে এবং গভীর সাগরে বিচরণ না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, রোববার মধ্যরাত থেকে পরের ৬ ঘণ্টায় আসানি উত্তর পশ্চিম দিকে এগিয়েছে মোটামুটি ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার গতিতে।
ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ এখনও দূরে, প্রস্তুতিও নিচ্ছে বাংলাদেশ
সাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’, ৬ অঞ্চলে বইছে তাপপ্রবাহ
বর্তমান গতিধারা ধরে রাখলে মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ এ ঝড় ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ ও ওড়িশা ঊপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে উত্তর উত্তরপূর্ব দিকে বাঁক নিতে পারে। তারপর ওড়িশা উপকূলের সমান্তরালে এগিয়ে যেতে পারে আরও উত্তরপূর্বে।
সেক্ষেত্রে ক্রমশ দুর্বল হয়ে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফের ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে আসানি। এই পূর্বাভাস ঠিক থাকলে এ ঝড় হয়ত উপকূলে আঘাত হানবে না, ক্রমশ দুর্বল হয়ে সাগরেই পরিণত হবে নিম্নচাপে।
জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার বলছে, নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর বৃষ্টি ঝরাতে ঝরাতে আসানি এগোতে থাকবে বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলের দিকে।
শুক্রবার দক্ষিণ আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর তা ঘনীভূত হয়ে শনিবার নিম্নচাপ এবং পরে গভীর নিম্নচাপের রূপ নেয়। এরপর দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে রোববার ভোরে পরিণত হয় ঘূর্ণিঝড়ে। তখন এটি ‘আসানি’ নাম পায়।
আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেওয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়।আসানি নামটি প্রস্তাব করেছিল শ্রীলঙ্কা। সিংহলা ভাষায় এর অর্থ ক্রোধ।
এ ঝড়ের উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা না থাকলেও প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়।
উপকূলগুলোতে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা প্রচার করা হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।
রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আসানির প্রভাবে বাংলাদেশে ঝড়বৃষ্টি হবে; কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস হবে না বলেই ধারণা দিয়েছে আবহাওয়াবিদ ও আন্তর্জাতিক আবহাওয়া অফিসগুলো।
রোববার সারাদিনে ঢাকায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। সারা দেশে এটাই ছিল সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।
সোমবার সকালেও ঢাকায় এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। তবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মাদারীপুর, রাঙ্গামাটি, কমিল্লা, মাইজদীকোর্ট, ফেনী, খুলনা ও যাশোর জেলসহ সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এখন। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকায় একে বলা হচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ।
রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে, ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস; ঢাকায় থার্মোমিটারের পারদ উঠেছিল ৩৫ ডিগ্রিতে।
আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, “বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কোথাও কোথাও তাপপ্রবাহ থাকলেও তা প্রশমিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেটে গেলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়বে।”
সোমবারও খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায়; ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকাসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।