মহেশখালীর পশ্চিমে গভীর বঙ্গোপসাগরে মাদারভেসেল থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল খালাসের জন্য ‘ইনস্টলেশন অব সিংগেল মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক এ প্রকল্পের কাজ অনেকটা এগিয়েছে।
এ মুরিং পয়েন্ট হচ্ছে মহেশখালীর মাতারবাড়ি থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে গভীর সাগরে। মাদার ভেসেল মুরিং পয়েন্ট আসার পর সেখান থেকে পাম্প করে পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রথমে তেল আনা হবে মহেশখালীর কালারামছড়ার স্টোরেজ ট্যাংকে। সেখান থেকে আবার পাম্প করে পাইপলাইনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে ইস্টার্ণ রিফাইনারিতে।
তবে কুতুবদিয়া ও মাতারবাড়ি চ্যানেলে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে তেল পরিবহনের পাইপলাইন আরও বেশি গভীর দিয়ে নিয়ে যাওয়াসহ বেশ কিছু কাজ বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পটির ব্যয় ও এক বছর সময় বাড়ানো প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলে নতুন করে প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবটি মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য একেএম ফজলুল হক।
রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) চায়না এক্সিম ব্যাংকের সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
তিন বছরে প্রায় ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন করা প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধন হলে এর মোট মেয়াদ বেড়ে হবে আট বছর এবং ব্যয় উন্নীত হবে ৭ হাজার ১২৪ কোটি ৬২ লাখ টাকায়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ছোট ট্যাংকারে করে উপকূল তেল পরিবহনের প্রয়োজন হবে না বলে আমদানিনির্ভর জ্বালানি তেল সংগ্রহের ব্যয় সাশ্রয় হবে। ইআরএলের বার্ষিক অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াজাতকরণ ক্ষমতাও সাড়ে চার টনে উন্নীত হবে।

বছরে সরকারের প্রায় ৮০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে বলে শুরুতে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছিল।
শুরুতে জ্বালানি খাতের আলোচিত এ প্রকল্প ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে ৪ হাজার ৯৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দিয়েছিল একনেক।
অর্থায়ন নিয়ে জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটির কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় দুই বার সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় ১ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। আর ৪ বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ করার মেয়াদ ছিল।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য এ কে এম ফজলুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ধরনের প্রকল্প বাংলাদেশে প্রথম। তাই এটি শুরু করার পর অনুভুত হয় যে কুতুবদিয়া এবং মাতারবাড়ি চ্যানেলের পাইপ আরও অনেক গভীরে যেতে হবে।
“প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাবে পাইপলাইনটা সমুদ্রের তলদেশের মাত্র দেড় মিটার গভীরে পোতার কথা ছিল। এই কাজটা করাও হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখা গেল ওই এলাকায় কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি যে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করছে সেগুলোর জন্য কয়লা নিয়ে বিশাল আকারের জাহাজ চলাচল করবে। এছাড়াও নেভিগেশন চ্যানেল দিয়ে আমাদের নেভির জাহাজ চলাচল করে। ফলে ওই চ্যানেলে মাত্র দেড় মিটার নিচে পাইপলাইন নিরাপদ নয়।“
প্রকল্পটির মাধ্যমে কুতুবদিয়া চ্যানেল থেকে সমুদ্রের নীচ দিয়ে সাড়ে তিনশ মিটার এবং মাতারবাড়ী চ্যানেল থেকে ৫০০ মিটারের পাইপলাইন আড়াআড়ি আসবে।
তিনি জানান, এরপর বাস্তবায়নকারী সংস্থা ইস্টার্ন রিফাইনারি একটি সমীক্ষা চালিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে এই চ্যানেলে গড়ে ৬ থেকে ৭ মিটার গভীরে ওই পাইপ স্থাপন করতে হবে। আবার কোনও কোনও জায়গায় নয় মিটার পর্যন্ত গভীরে যেতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
পরে এই সমীক্ষার কথা জানানো হলে সরকার প্রকল্পটি টেকসই করার স্বার্থে আবারও সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি প্রায় ৭৪ শতাংশ আর আর্থিক অগ্রগতি প্রায় ৬৯ শতাংশ হয়েছে।
একেনেকে সংশোধন অনুমোদন করা হলে অতিরিক্ত অর্থ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এবং সরকারের তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে। চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে আর ঋণ বাড়ানো হচ্ছে না, বলে জানান কমিশনেই এই সদস্য।