ক্যাটাগরি

সরকারের পরিণতি শ্রীলঙ্কার চেয়েও খারাপ হবে: ফখরুল

মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি থেকে এই সরকারের শিক্ষা নিয়ে লাভ হবে না। কারণ শিক্ষা নিতে
জানে না তারা। তাহলে এই ১০ বছরে শিক্ষা নিতে পারত।

“কোনো শিক্ষা নেয়নি। এদের (শ্রীলঙ্কা) চেয়েও খারাপ অবস্থা হবে। শ্রীলঙ্কাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে না সব। দেখেন এরা
বঙ্গোপসাগরে ঝাঁপিয়ে পড়বে।”

এই সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না জানিয়ে
তিনি বলেন, “আমরা খুব স্পষ্টভাবে বলেছি যে, বর্তমান অবৈধ হাসিনা সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে
যাবে না। এর মধ্যে এতটুকু ফাঁক-ফোকর কিচ্ছু নাই।”

অঙ্গসংগঠনগুলোর সঙ্গে যৌথসভার পর নির্বাচন নিয়ে দলের এই
অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকে ‘যেতে হবে’
বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

“ক্ষমতা
হস্তান্তর করতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ
নির্বাচন কমিশন গঠন করার পরে তবেই শুধুমাত্র নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার সুযোগ তৈরি
হবে, পরিবেশ তৈরি হবে।”

ইভিএম নিয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ইভিএম তো ইলেকশন কমিশনই জবাব দিয়ে দিয়েছে। আমার তো বলার আর
কিছু আছে বলে মনে হয় না।”

আগামী বছরের শেষভাগে
হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। গত শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের
সভায় দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইঙ্গিত দেন, আগামী
নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হোক- সেটাই তিনি চান।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার সকালে প্রধান নির্বাচন
কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, এখন পর্যন্ত একশর মত আসনে
ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতা ইসির আছে। তবে ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার সামর্থ্য এখনও
নেই।

এ প্রসঙ্গ তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “এখানে
দেখেন প্রমাণিত হচ্ছে যে, এই সরকার যে,
পুরোপুরিভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থাকে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে
নিয়ন্ত্রণ করে তার প্রমাণ হচ্ছে এটা – প্রধানমন্ত্রী কিভাবে করে তিন‘শ আসনে নির্বাচন হবে। যেটা দায়িত্বটা হচ্ছে সম্পূর্ণ
নির্বাচন কমিশনের।

“এই থেকে প্রমাণিত হয় যে, সরকার সচেতনভাবে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এদেশের নির্বাচন
ব্যবস্থা অর্থাৎ গণতন্ত্রকে ধবংস করছে।”

বিএনপির আন্দোলনের হুমকি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে
দলের মহাসচিব বলেন, “আপনারা
তো দেখছেন- আন্দোলন কিন্তু
একটা আন্দোলন না। আপনারা কী বোঝেন জানি না।

“আমরা যারা
আন্দোলন করি তারা বুঝি যে, আন্দোলন মানে জনগনকে নিয়ে নাড়াচাড়া করা, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আসা। আমাদের প্রত্যেকটি প্রোগ্রাম
আন্দোলনের প্রোগ্রাম।”

এসময় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আগামী ১২ ও ১৪ মে ঘোষিত কর্মসূচিসহ
অন্যান্য কর্মসূচিকেও আন্দোলন বলে দাবি করেন তিনি।

“এই যে শাহাদাত
বার্ষিকী পালন করব এটাও আন্দোলনের প্রোগ্রাম। সবটাই সবখানে আসতেছে। আপনারা এতো
অস্থির হবেন না। আপনারা যেটা দেখতে চান সেটা খুব শিগগিরই দেখতে পারবেন।”

সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে কর্মসূচি আসবে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি
বলেন, “নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতির প্রতিবাদে আমরা
দেড় মাস আন্দোলন করেছি সারা দেশে। এই দফাতে আমরা করেছি।

“আমাদের দফা তো
একটা না, দফা অনেকগুলো। আমরা রাজনৈতিক দল, আমাদের রাজনীতির মূল্য লক্ষ্য হচ্ছে দে্শের রাজনীতিকে ঠিক
করা। এটা ঠিক হলে তেলের দামও ঠিক হয়ে যাবে, সরকার পরিবর্তন হলে তেলের দামও ঠিক পর্যায় আসবে।”

‘খালেদার নেতৃত্বের ৩৮ বছর, দীর্ঘায়ু কামনা’

১৯৮৪ সালের এই দিনে বিএনপি চেয়ারম্যানের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পেয়েছিলেন
খালেদা জিয়া। এর আগে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “এই ১০ মে আমাদের কাছে অত্যন্তু গুরুত্বপূর্ণ। এই দীর্ঘ ৩৮ বছর তিনি এই দলের নেতৃত্ব
দিচ্ছেন।”

এর মধ্যে তিনবার দলকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়ে
এসেছেন এবং দুইবার বিরোধী দলের
ভূমিকা পালন করার কথা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

“সারাটা জীবন
ধরেই তিনি গণতন্ত্রের জন্য, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেওয়ার জন্য গণতন্ত্রের পক্ষে সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন। এখনো তিনি গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার জন্য বিগত
কয়েক বছর ধরে কারা অন্তরীণ
আছেন।

“এখন তিনি
গৃহবন্দি হয়ে আছেন। তারপরও তিনি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে চলেছেন। আমরা আজকে এই
সভায় তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, অভিনন্দন জানাচ্ছি, দীর্ঘায়ু কামনা করছি।”

একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে দেশে গণতান্ত্রিক
পরিবেশ সৃষ্টি করার দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনে সোমবার অনুষ্ঠিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয়
স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।

এর আগে মহাসচিবের সভাপতিত্বে যৌথ সভায় বিএনপির রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল,খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, এবিএম মোশাররফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।