ক্যাটাগরি

বিদায়ের সুর বাজছে সঙ্গীত বাণিজ্য পাল্টে দেওয়া আইপডের

২০০১ সালে প্রথম আইপড উন্মুক্ত করেছিল অ্যাপল। একসঙ্গে এক হাজার গান জমা রাখতে পারতো ডিভাইসটি। দুই দশকের ব্যবধানে দৃশ্যপট অনেকটাই পাল্টেছে, নিজস্ব স্ট্রিমিং সেবা দাঁড় করিয়েছে অ্যাপল, নয় কোটি গান আছে তাতে।

প্রথম সংস্করণের আইপড কেবল গান শোনার অভ্যাস পাল্টে দেয়নি। এক দশক অ্যাপল থেকে বাধ্যতামূলক নির্বাসনে কাটিয়ে ফেরার পর প্রথম দিকের বৈপ্লবিক পণ্য ছিল আইপড। প্রায় ডুবতে বসা অ্যাপলের এই পকেটে বহনযোগ্য মিউজিক প্লোয়ারটিই পাল্টে দেয় স্টিভ জবসের ভবিষ্যত, মোড় ঘুড়িয়ে দেয় অ্যাপলের।

স্টিভ জবসের ভাষায়, “এটা যে কেবল আমাদের গান শোনার ধরন পাল্টে দিয়েছে, তা নয়। এটা গোটা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিকেই পাল্টে দিয়েছে।”

আইপডের নকশাকারী দলটিই পরে আইফোনের নকশা করেছিল, যা জনপ্রিয়তায় আইপডকেও ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে, অ্যাপল শেষবার আইপড আপডেট করেছে ২০১৯ সালে।

দুই দশকের ইতিহাসে ‘ন্যানো’ ও ‘শাফল’সহ আইপডের বেশ কয়েকটি সংষ্করণ বাজারজাত করেছে অ্যাপল। এর মধ্যে উৎপাদন বন্ধ হওয়া সর্বশেষ মডেলটি ছিল আইপড টাচ, ২০০৭ সালে বাজারে এসেছিল ডিভাইসটি।

‘মজুদ থাকা’ পর্যন্ত ডিভাইসটির বিক্রি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে অ্যাপল।

আইপডের সিরিজগুলোর ক্রমবিকাশ। ছবি: অ্যাপল এক্সপ্লেইনডের ইউটিউব চ্যানেল।

আইপডের সিরিজগুলোর ক্রমবিকাশ। ছবি: অ্যাপল এক্সপ্লেইনডের ইউটিউব চ্যানেল।

এই গ্যাজেটটি ‘নতুন গান খুঁজে পাওয়া, শোনা এবং অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করার প্রক্রিয়া পুনসংজ্ঞায়িত করেছিল,’ বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাপলের বৈশ্বিক বাজারজাতকরণ ভাইস-প্রেসিডেন্ট গ্রেগ জসউইক।

আইপডের প্রথম সংস্করণটি জনসমক্ষে উন্মুক্ত করেছিলেন সাবেক অ্যাপল প্রধান স্টিভ জবস। ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো ডিভাইসটি দেখিয়েই সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। আগেই থেকেই বাজারে জোর গুজব রটেছিল, নতুন মিউজিক প্লেয়ার দেখাবে অ্যাপল। নতুন ডিভাইসটি যে নতুন ম্যাক কম্পিউটার নয়, তার উল্লেখ ছিল আয়োজনের দাওয়াতপত্রেই।

“গান সবার জীবনেরই অংশ। গান সবসময়ই আমাদের সঙ্গে ছিল, সবসময়ই থাকবে,” এক ঘণ্টার উপস্থাপনায় এভাবেই নতুন মিউজিক প্লেয়ারের গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন স্টিভ জবস।

পরের দুই দশকে জন মেয়ার, ইউ২ এবং ওপরাহ উইনফ্রের মতো সেলিব্রেটিদের সমর্থনও পেয়েছে আইপড। বিল্ট-ইন আইপড সিস্টেম আছে, নিজস্ব গাড়ির জন্য এমন এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম বানিয়েছিল বিএমডব্লিউ। তারপর অন্যান্য গাড়ি নির্মাতারাও বিএমডব্লিউয়ের দেখানো পথ অনুসরণ করা শুুরু করে। 

তবে, বাজার বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, আইফোন একটি আইপডের জায়গা নেবে, এমনটা প্রত্যাশিতই ছিল।

“অ্যাপল যখন আইফোন নির্মাণ করেছিল, তারা তখন থেকেই জানতো যে আইপড অধ্যায়ের উপসংহারের শুরুটা সেখান থেকেই।”– মন্তব্য করেছেন বাজার বিশ্লষক সিসিএস ইনসাইটের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বেন উড।

অন্যদিকে, আরেক বাজার বিশ্লেষক ক্রিয়েটিভ স্ট্র্যাটেজিজের কর্মী ক্যারোলিনা মিলানেসির মতে, আইপডের বিক্রি কমার সঙ্গে আইফোনের বিক্রি বাড়ার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।

স্টিভ জবসের হাত ধরে এসেছিল যুগ পাল্টে দেওয়া আইপড। ছবি: অ্যাপল

স্টিভ জবসের হাত ধরে এসেছিল যুগ পাল্টে দেওয়া আইপড। ছবি: অ্যাপল

“অ্যাপল যে নিজস্ব পণ্যের বাজার খেয়ে ফেলা নিয়ে শঙ্কিত নয়, তার সেরা উদাহরণ হচ্ছে আইপড অধ্যায়ের অবসান,” বলেন তিনি।

বাজারের প্রথম মিউজিক প্লেয়ার ছিল না আইপড। আইফোনও বাজারের প্রথম স্মার্টফোন ছিল না। কিন্তু বিবিসি বলছে, অ্যাপলের নজরকাড়া নকশার কারণেই উভয় ডিভাইস ব্যবহারকারীদের কাছে আলাদা জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, যার কাধে ভর করে সিডি ও ক্যাসেটপ্লেয়ারের যুগ ছেড়ে ডিজিটাল মিউজিকের দিকে ঝুঁকেছিলেন শ্রোতারা।

আর এই নকশা বিষয়টিকেই আরও স্পষ্ট করেছিলেন জবস। “একটি ভালো ডিজাইন মানে এই নয় যে কোনো জিনিস দেখতে কেমন। এর মানে হচ্ছে, কোনো জিনিস কীভাবে কাজ করে।”

২০০১ সালে আইপড যখন প্রথম বাজারে আসে, তখন টিকে থাকার লড়াইয়ে বেহাল অবস্থায় ছিল বৈশ্বিক সঙ্গীত শিল্প। বেআইনি ফাইল শেয়ারিংয়ের সুবাদে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল রেকর্ড লেবেলগুলোর জন্য।

এমন পরিস্থিতিতে অ্যাপল আইপডের উন্মোচনের পর আইটিউনস সেবা চালু করে রেকর্ড লেবেলগুলোকে টিকে থাকার পথ করে দিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছে বিবিসি।

আইপডের ওপর ভর করেই প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতা হিসেবে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের অবস্থানে ফিরেছিল অ্যাপল। তার আগ পর্যন্ত দীর্ঘ দিন বাজার নিজের দখলে রেখেছিল উইন্ডোজ নির্মাতা মাইক্রোসফটসহ বিভিন্ন উৎপাদক।

প্রথম আইপড দেখানোর সময়েই জবস বলেছিলেন, “আইপডের কারণে গান শোনার বিষয়টি আর কখনোই আগের মতো হবে না।” নানা দিক বিবেচনায় নিয়ে বলতে হবে, ঠিক কথাই বলেছিলেন জবস।