এ মামলায় যুক্তিতর্ক শেষে ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম রায়ের এ দিন ঠিক করে দেন।
দশ বছর আগে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা এ মামলায় গত ২৭ মার্চ উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়।
এটি ছাড়াও ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রজেক্টের অর্থ আত্মসাতের আরেকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২০২ জনের সাক্ষ্য শুনেছে আদালত। এছাড়া আসামিদের মধ্যে ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে জানান দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম।
এদের মধ্যে জামিনে আছেন সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদ। আর কোম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন ১০ বছর ধরে কারাগারে আছেন।
বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আইনজীবী সালাম জানান, এখন পর্যন্ত জানা গেছে বৃহস্পতিবার রায় হবে। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করেন তিনি।
তিনি বলেন, “২০২ জনের সাক্ষ্য নিয়ে আমরা বিশাল পাহাড় টেনে সরিয়েছি; বিশাল মহাভারত পাঠ করে ফেলেছি। এ মামলাকে রায়ের মুখে নিয়ে আসতে পারায় আমরা খুশি।“
যুক্তি তর্কের সময় আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, আসামিরা এ মামলায় খালাস পাবেন বলে তারা আশা করছেন। তবে আশানুরূপ রায় না এলে তারা উচ্চ আদালতে আপিলে যাবেন।
ডেসটিনির অর্থ আত্মসাতের এক মামলার রায় ১২ মে
দুদকের উপ পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডেসিটিনির কর্তাব্যক্তিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রজেক্টের অর্থ আত্মসাতে মামলা দুটি করেছিল।
তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৫ মে দুদক আদালতে উভয় মামলার অভিযোগপত্র দেয়। এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্লানটেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলার ১৯ জনকে আসামি করা হয়। হারুন-অর-রশিদ ও রফিকুল আমিন দুই মামলাতেই আসামি।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ প্রোজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।
আর ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রোজেক্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাত করা হয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেসটিনি গ্রুপের নামে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নামসর্বস্ব। আসামিরা প্রথমে প্রজেক্টের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতেন, তারপর বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তা স্থানান্তর করা হত।
দুদক ৩৪টি ব্যাংকে এ রকম ৭২২টি হিসাবের সন্ধান পায়, যেগুলো পরে জব্দ করা হয়। আত্মসাৎ করা চার হাজার ১১৯ কোটি টাকার মধ্যে ৯৬ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগও আনা হয় দুই মামলায়। এর মধ্যে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলাটি রায়ের পর্যায়ে এল।
আর ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলায় এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষে ১০ জনের মত সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।