বুধবার
এক সার্কুলারে ব্যাংক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় ‘স্বার্থের সংঘাত’ এড়ানোর পাশাপাশি ‘সুশাসন,
নিরপেক্ষতা ও পেশাগত মান’ নিশ্চিতে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ
নির্দেশনায় বর্তমানে ব্যাংকের পরিচালকদের এমন কেউ দুই দায়িত্বে থাকলে তাকে ৩০ জুনের
মধ্যে পদত্যাগ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছে।
একই
সঙ্গে কোনো ব্যাংকের পরিচালকদের পরে ওই ব্যাংকের কোনো পদে সরাসরি বা পরামর্শক হিসেবে
নিয়োগের বেলাতেও একই সার্কুলারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকাররা
বলছেন, নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের, নির্বাহী কমিটি, অডিট কমিটি
ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যানরা ওই ব্যাংকের অধীনে সহযোগী বা অর্থায়ন করা
কোনো কোম্পানির পরিচালনায় সম্পৃক্ত হতে পারবেন না। এমনকি ব্যাংকের পরিচালিত ফাউন্ডেশনের
পরিচালনায়ও সম্পৃক্ত হতে পারবেন না তারা।
বর্তমানে
ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের দিয়ে তিনটি কমিটি গঠনের অনুমোদন রয়েছে বাংলাদেশ
ব্যাংকের। এগুলো হলো- নির্বাহী কমিটি, অডিট কমিটি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি। এসব কমিটির
চেয়ারম্যানদের আবার ব্যাংকের অন্যসব সহযোগী কোম্পানি পরিচালনায় যুক্ত থাকতে দেখা যায়।
কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের এমন পদক্ষেপের বিষয়ে পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হালিম
চৌধুরী বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘ব্যাংকে একাধিক পদে নিযুক্ত করলে অনেক
সময়ই দেখা যায়; কর্তৃত্ববাদী আচরণ ফুটে উঠে। একাধিক জায়গা থেকে সুবিধা ভোগ করার প্রবণতা
তীব্র হয়, এতে সুশাসন ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী
বলে মনে করছি।’’
ব্যাংক
পরিচালনায় পরিচালকদের মধ্যে মাত্র কয়েকজনই মনোযোগি হন উল্লেখ করে ব্যাংকের চেয়ারম্যান
ও সহযোগী কোম্পানির পর্ষদে যুক্ত থাকার অভজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, এজন্য পর্ষদ সদস্য
নিয়োগে পেশাদার ও মেধাবীদের নির্বাচন করা প্রয়োজন।
বুধবারের
সার্কুলারে চেয়ারম্যানদের আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এবং সাবেক পরিচালকদের মধ্যে কেউ ব্যাংকের
কোনো পদে নিযুক্ত হলে তাদের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে পদশুন্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকে জানাতে
বলা হয়েছে।
ব্যাংক
কোম্পানির পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে
এতে বলা হয়, ‘‘পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান বা পর্ষদ সদস্যগণের সমন্বয়ে গঠিত পর্ষদের
সহায়ক কমিটি যথা – নির্বাহী কমিটি, অডিট কমিটি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান
হিসেবে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি উক্ত ব্যাংক-কোম্পানীর সাবসিডিয়ারি কোম্পানি বা ব্যাংক
কোম্পানির অর্থায়নে গঠিত ও পরিচালিত কোনো কোম্পানি/প্রতিষ্ঠান বা ফাউন্ডেশন এর পরিচালনা
পর্ষদ বা গভর্নিং বডি, যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, এর চেয়ারম্যান/পরিচালক/সদস্য হিসেবে
অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন না।“
সার্কুলারে
একবার ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার পর অন্য দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “কোনো ব্যক্তি
ব্যাংক-কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক বা মনোনীত/প্রতিনিধি পরিচালক বা স্বতন্ত্র পরিচালক
হিসেবে ন্যুনতম ১ বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করলে উক্ত মেয়াদপূর্তি বা অবসর বা অব্যাহতির
পর উক্ত ব্যক্তি কখনোই ঐ ব্যাংকের নিয়মিত বা চুক্তিভিত্তিক কোনো পদে নিয়োগ/নিযুক্ত
হতে পারবেন না।’’
সার্কুলারের
পরবর্তী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় বিষয়টি বিষয়বস্তু উপস্থাপন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংক
কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ২৩(১) (ক) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যাংকের পরিচালক
হলে একই সময়ে তিনি অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা বীমা কোম্পানির পরিচালক
থাকবেন না।
এর
আগে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পরবর্তীতে পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল বাংলাদেশ
ব্যাংক।
অপরদিকে
এর আগে ব্যাংকের পরিচালক, চুক্তিভিত্তিক উপদেষ্টা বা পরামর্শক নিয়োগের শর্তও নির্ধারণ
করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়া
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের নির্দেশনা অনুযায়ী, নিয়মিত বা চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তারা অবসর
বা অব্যাহতি বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কখনও একই ব্যাংকের পরিচালক হতে পারেন না।
অর্থাৎ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাই পরে কোনো সময়ই একই ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না।