ক্যাটাগরি

উড়োজাহাজের টিকেট নিয়ে প্রতারিত বিমান কর্মকর্তাও

সম্প্রতি ওই বিমান কর্মকর্তা পরিচিতদের জন্য মাস্কট,
রিয়াদ এবং টরেন্টোর চারটি টিকেট কিনে দেওয়ার পর ফ্লাইটের আগে জানা যায় টিকেটের
টাকা ‘রিফান্ড’ করায় তা
বাতিল হয়ে গেছে।

পরে তার অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে
বুধবার মাহবুব উর রশিদ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা
পুলিশ-ডিবি।

বৃহস্পতিবার গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ
আকতার সংবাদ সম্মেলনে জানান, মাহবুবকে গ্রেপ্তারের পর জানা যায় ওমরা হজ করতে টিকেটের
টাকা দেওয়াসহ আরও অন্তত ২০ জন একইভাবে প্রতারিত হয়েছেন।

তিনি বলেন, “যাত্রীকে না জানিয়ে যে এজেন্সির মাধ্যমে টিকেট কেনা
হয়েছিল যাত্রার কয়েক ঘন্টা আগে সেই এজেন্সির মাধ্যমেই সামান্য জরিমানা দিয়ে টিকেটের
টাকা ‘রিফান্ড’ করে আত্মসাত
করে নিয়ে যায় মাহবুব।

“এজন্য
যাত্রীরা টিকেট ঠিক আছে জেনে নির্দিষ্ট সময় বিমান বন্দরে এসে জানতে পারে তার টিকেট
ইনভ্যালিড হয়ে গেছে। টিকেটিং এজেন্সি টাকা রিফান্ড করে নিয়ে গেছে।”

প্রতারণার এই কৌশল ব্যাখ্যা করে গোয়েন্দা কর্মকর্তা
বলেন, “বর্তমান
হজ মৌসুমে এভাবে টিকেটের টাকা আত্মসাত করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছিল মাহবুব এবং
তার কয়েকজন সহযোগী।”

প্রতারণার শিকার বাংলাদেশ বিমানের গ্রাউন্ড সার্ভিসের
কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মাহবুবের সঙ্গে তার
ফেইসবুকে পরিচয় হয়। সে কম দামে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকেট বিক্রি করে বলে জানায়।

সেসময় মাহবুব নিজেকে ভাটারা এলাকায় ‘এমকিউ ট্রেড অ্যান্ড
ট্রাভেল কনসালটেন্সি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক বলে তার কাছে পরিচয় দেয়।
সেই সূত্রে ওই অফিসেও যান তিনি।

সাইদুর বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানটি যে, তার নয় এটি আমি পরে বুঝতে পারি। এই
প্রতিষ্ঠানের পাশে একটি ছোট রুম ভাড়া নিয়ে সেখানে কম্পিউটার বসিয়ে এমনভাবে ছিল যে
প্রতিষ্ঠানটি তার মনে হওয়া স্বাভাবিক।

“পরে প্রতারিত
হওয়ার পর তার ওই অফিসে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল যে ট্রাভেলস অফিসটি তার নয়।”

বিমানে চাকরি করার সুবাদে পরিচিত কয়েকজন মাস্কট, রিয়াদ
এবং টরেন্টো যাওয়ার জন্য টিকেটের ব্যবস্থা করে দিতে বললে মাহবুবের সঙ্গে যোগাযোগ
করেন বলে জানান তিনি।

“আমি তার
সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন বিমানের টিকেট নেই। এসব টিকেট সংশ্লিষ্ট বিমান অফিসে
গিয়ে কনফার্মও করা হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জানা যায় সামান্য কিছু জরিমানা করে
টিকিটের টাকা ফেরত নেওয়া হয়েছে।”

মাহবুবকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য তুলে ধরে
সংবাদ সম্মলনে জানানো হয়, দীর্ঘদিন ধরে তিনি এ ধরণের প্রতারণা করে আসছেন ‘প্লানেট
ওভারসিজ’
নামে তার একটি প্রতিষ্ঠান ছিল।

এই প্রতিষ্ঠানর নামে ২০১৫ সাল কানাডায় লোক পাঠানোর নামে
সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রাখার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর এবং
ধানমন্ডি থানায় মানব পাচারের দুটি মামলা আছে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

“প্রতারণা করে
নিজেকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে রাখতে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায় অফিস পরিবর্তন করে
কাওরান বাজারে চলে আসে পরে সেখান থেকে এলিফ্যান্ট রোডে। এরপর সর্বশেষ ভাটারা
বসুন্ধরা এলাকায় অফিস স্থাপন করে।”

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আকতার জানান, জাহাঙ্গীর
এবং দুবাই প্রবাসী সাদ নামে তার দুই সহযোগী রয়েছে। তাদের মাধ্যমে সে এ ধরণের
প্রতারণা করে থাকে।

“দুবাইয়ে
অবস্থান করা বাংলাদেশি নাগরিক সাদের মাধ্যমে দুবাই থেকে এবং পাকিস্তানের করাচির
আল-গাফফার ট্রাভেলস, আনোয়ার সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের
মাধ্যমে টিকেট সংগ্রহ করে মাহবুবের হোয়াটসঅ্যাপে/মেইলে পাঠায়।

“কখনো কখনো
বুকিং কনফার্ম করে এবং যাত্রীদের টিকেটের আইটেনারি (যেখানে যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট
নম্বর, যাত্রা বিবরণী ইত্যাদি থাকে) প্রদান করে টাকা নিয়ে থাকে।” 

পরে যাত্রীরা টাকা পরিশোধ করলে মাহবুব বিকাশের মাধ্যমে
সাদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের আত্মীয়স্বজনের কাছে টাকা পৌঁছে দেয় বলে সংবাদ
সম্মেলনে জানানো হয়।

মাহবুব এবং সাদ বিভিন্ন সময় ওমান এয়ার
, এমিরেটস, গাল্ফ এয়ার ,সৌদি এ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স, সৌদিয়া, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ
প্রভৃতি এয়ারলাইন্সের দুবাই, বাহরাইন, মাসকাট,রিয়াদ, জেদ্দা, দোহা,লন্ডন, টরেন্টো,
চট্টগ্রাম-মাসকাট, ঢাকা-দুবাই-দাম্মাম এর টিকিট বিক্রি করেছে।

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়,তাদের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি
না সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে মাহবুবের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে।