শুক্রবার দিনভর প্রতিবেশী দেশটির কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এর পৃথক দল এসব অভিযান চালায় বলে জানিয়েছে ডয়চে ভেলে ও পিটিআই।
এসব অভিযান চলছে পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা, প্রীতিশ কুমার হালদার, প্রাণেশ কুমার হালদার এবং তাদের সহযোগীদের নামে থাকা বাড়ি ও সম্পত্তিতে।
এদের সবাইকে বাংলাদেশি নাগরিক উল্লেখ করে তাদের নামে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে সম্পত্তি রয়েছে বলে খোঁজ পেয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ইডি।
এদের মধ্যে সুকুমার মৃধা আগে থেকেই বাংলাদেশে গ্রেপ্তার রয়েছেন; যিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা সামনের আসার পর থেকেই পলাতক পি কে হালদারের ব্যক্তিগত আইনজীবী এবং তার অর্থ দেখভাল করতেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগণার পোলেরহাটের এই বাড়িতেও অভিযান চলেছে
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য প্রিন্ট পিটিআইর বরাত দিয়ে লিখেছে, ইডি নিশ্চিত হয়েছে এসব বাংলাদেশি ভুয়া পরিচয় দিয়ে ভারতে কোম্পানিও খুলেছে এবং কলকাতার অভিজাত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সম্পত্তি কিনেছে।
এদিকে অভিযানকালে সুকুমারের একটি বাড়ি থেকে প্রচুর অর্থ পেয়েছেন ইডির কর্মকর্তারা বলে অসমর্থিত সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে ডয়চে ভেলে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কনটেন্ট পার্টনার ডয়চে ভেলে ওই প্রতিবেদনে লিখেছে, “তবে এই টাকা কোথা থেকে এসেছে সেই বিষয়ে তারা (ইডি) এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি৷ ইডি সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত শেষে জব্দকৃত অর্থের উৎস সম্পর্কে তারা নিশ্চিত হতে পারবেন৷ এর সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থ পাচার মামলার আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) জড়িত কিনা তা-ও তদন্ত রিপোর্ট এলে জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷”
এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুকুমার বাংলাদেশে বসবাস করলেও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় তার অনেক মাছের ভেড়ি আছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে ইডি।
এদিকে ভারতীয় তদন্ত সংস্থা ইডি এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে উদ্ধৃত করে পিটিআই জানিয়েছে, ভুয়া তথ্য-পরিচয় এবং ‘রেশন কার্ডে’র মত জাতীয় কার্ড ব্যবহার করে পি কে হালদার ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়েছে শিবশংকর হালদার নামে। ভারতীয় পরিচয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হন।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজারো কোটি টাকা আত্মসাতের মাধ্যমে পি কে হালদার যেসব দেশে টাকা পাচার করেছে তার মধ্যে ভারতও রয়েছে। তার সহযোগীদের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে।
গ্রেপ্তারের দিন দুদকে সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধা
অভিযানে চোখ রাখছে দুদক
পশ্চিমবঙ্গে সুকুরমার মৃধার অবৈধ সম্পদের খোঁজে দেশটির সরকারি তদন্ত সংস্থার অভিযানের খবর আসার পর এ বিষয়ে নজর রাখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কমিশনের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টির ওপর আমরা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছি, আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি।
“এই অভিযানে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ যদি পাওয়া যায় এবং ভারত সরকার তা নিশ্চিত করে, তাহলে সেসব অর্থ বাংলাদেশের আদালতের মাধ্যমে জব্দ হবে এবং তা বাংলাদেশে ফিরে আনার আইনি সুযোগ আছে।”
তবে দুদকের কোনো অভিযোগ বা আবেদনের প্রেক্ষিতে ইডি এ অভিযান করছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়ে আমি আপডেট না, তাই বলতে পারছি না।”
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদরে বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ পর্যন্ত ৩৪টি মামলা করেছে দুদক।
এগুলোর মধ্যে একটির অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছে দুদক। আরও তিনটি অভিযোগপত্র কমিশনের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।
আসামিদের মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ১১ জন আসামি আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। ৬৪ জনের বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আদালতে।
এ পর্যন্ত আলোচিত এ অর্থ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে পি কে হালদারের ৮৩ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। প্রায় এক হাজার কোটি টাকার মূল্যের জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে।
বাংলাদেশেও সুকুমারের বিপুল সম্পদ
পশ্চিমবঙ্গে ইডির অভিযানে নাম আসা সুকুমার মৃধা হলেন পি কে হালদারের ব্যক্তিগত আইনজীবী; যাকে তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধাসহ ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করে দুদক।
কমিশনের সেই সময়ের দুদক সচিব মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, “পি কে হালদার বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পর তার অবৈধ সম্পদ দেখাশোনা করতেন সুমুকার ও অনিন্দতা মৃধা। পিকে হালদারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানও করেন সুকুমার।
“পি কে হালদার ভুয়া ঋণ দেখিয়ে অবৈধভাবে অর্জিত প্রায় ১০০ কোটি টাকা তার মা লিলাবতী হালদারের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে রাখেন। পরে লিলাবতী হালদারের ব্যাংক হিসাব থেকে সুকুমার মৃধা, অবন্তিকা বড়াল ও অনিন্দিতা মৃধার মাধ্যমে আবার পি কে হালদারের কাছে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করা হয়। এভাবে তারা মানিলন্ডারিং করেছেন বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা তথ্য পেয়েছেন।”
এছাড়া সুকুমার মৃধার প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পদ এবং তার মেয়ে অনিন্দিতার প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে জানিয়ে তখন দুদক সচিব বলেছিলেন, এসব আসলে পি কে হালদারের অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ।”
আরও পড়ুন:
পি কে হালদারের ‘সহযোগী’ বাবা-মেয়ে গ্রেপ্তার
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের এড়িয়ে গেলেন এস কে সুর ও শাহ আলম