রাজধানীর বাজারে সরিষার তিন ধরনের তেল পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে মেশিনে ভাঙানো তেলের পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানির তেল যেমন আছে, সেই সঙ্গে মেলে ঘানি ভাঙানো তেলও।
আবার স্থানীয়ভাবে মেশিনে তেল ভাঙানোর যেমন স্থায়ী কেন্দ্র আছে; তেমনি ভ্রাম্যমাণ মেশিনও আছে, যেগুলো অলিগলিতে গিয়ে ক্রেতার সামনে সরিষা ভেঙে তেল বানিয়ে বিক্রি করে।
স্থানীয়ভাবে মেশিনে ভাঙানো তেল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়। আর ঘানি ভাঙানো তেল মিলছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায়।
বছর খানেক আগেও সরিষার তেলের (মেশিনে ভাঙা) দাম ছিল প্রতি কেজি ১৮০ টাকা। সেই তেল বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৮০ টাকায়।
সেগুনবাগিচার উন্মুক্ত অস্থায়ী বাজারসহ ফকিরাপুল, মালিবাগ বাজার, শান্তিনগর বাজার ঘুরে সরিষার তেল ২৮০ টাকায় বেচতে দেখা গেল। পাঁচ কেজির দাম এক হাজার ৪০০ টাকা।
সেগুনবাগিচায় তেল কিনতে এসে সাবিহা খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোজার আগে থেকে সয়াবিন তেলের সংকট ভীষণভাবে দেখা দিলে আমরা সরিষা তেল কিনতে শুরু করি। সরিষার তেলের দাম গত ছয় মাস আগে ছিল ১৮০-২০০ টাকা। রোজার আগে এই দাম বেড়ে ২২০-২৮০ টাকায় গড়ায়। গত এক সপ্তাহ যাবত এই তেল খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়।”
সয়াবিন তেল সংকটের পর থেকে এর বিরূপ প্রভাব অন্য তেলেও পড়ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তেল ব্যবহারে কৃপণতা দেখিয়েও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হতে পারছি না। বাচ্চারা একটু ভাজা-ভাজি খেতে চায়; কিন্তু কীভাবে করব, খুঁজে পাই না।”
চট্টগ্রামের কর্নেল হাটে বিনিময় স্টোর নামের একটি দোকানে সয়াবিন তেলের দাম বেশি রাখায় বুধবার ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
শুক্রবার সকালে সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির কাছে রাস্তার ধারে মেশিনে সরিষা ভেঙে তেল বেচছিলেন সোলায়মান।
তিনি বলছিলেন, “গত ৩/৪ মাস আগেও সরিষা তেল ছিল একটা সৌখিন পণ্য। বিশেষ করে আচার, ভর্তার জন্য সরিষার তেল কিনতেন ক্রেতারা। সয়াবিনের সংকটে এখন কেউ কেউ সরিষার তেলের দিকে ঝুঁকছেন।
“চাহিদার এরকম অবস্থায় কোম্পানি ও সরিষা তেলের পাইকারি বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সেজন্য সরিষার বাজারও উপরমুখী।”
সরিষা তেলের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কী করব, এখন সরিষার দাম সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা মণ। আগে মণ ছিল ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা।
“সরিষা তেলের চাহিদা বাড়ছে শহরে, সেজন্য পাইকারি পর্যায়ে সরিষার দামও বাড়ছে। বেশি টাকায় এনে সরিষা থেকে তেল করে আবার বিক্রি করা- খুব একটা লাভ আমাদের হয় না।”
শান্তিনগর বাজারে কথা হলো মুদি দোকানি আবদুল লতিফের সঙ্গে। তার কথায়, “বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট থাকলেও এখনও সরিষার তেলের দাম বাড়ানো হয়নি। রোজার আগে একবার বেড়েছিল।
“বর্তমানে এক লিটার বিভিন্ন কোম্পানির সরিষার তেলের দাম ৩৪০-৩৫০ টাকা। অন্যদিকে খোলা সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।”
শান্তিনগরে তেল কিনতে আসা শফিক আহমেদ বলেন, “এখনও বাজারে সয়াবিন তেল সেইভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। সেজন্য সরিষা তেল নিতে হচ্ছে। সেখানেও দেখি সয়াবিনের উত্তাপ।
“যারা ব্যবসা করেন, তারা তো আর ধর্মের কথা শোনে না। ক্রেতাদের দুর্ভোগের কথা জানতে চায় না। ওরা লাভের কথা শোনে। সুযোগ পেলে লাভের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়- এটাই এখন নিয়ম। কেউ দেখবার নেই। আমরা আছি বিপাকে।”
পাশে থাকা তার সহধর্মিনী সুলতানা আহমেদ যোগ করেন, “সয়াবিন তেল ও সরিষার তেলের দাম এখন প্রায় কাছাকাছি। সয়াবিনের তেলের তুলনায় সরিষার তেল স্বাস্থ্য সম্মত। স্বাদও আলাদা। ভাবছি এখন থেকে এই তেলই রান্নার কাজে বেশি ব্যবহার করব।”
আরও পড়ুন
জেলায় জেলায় ভোজ্য তেলের মজুদ, এক দিনে জব্দ ৩ লাখ লিটার
সয়াবিনের বাজারে সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি ব্যবসায়ীদের
ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করা ভুল ছিল: বাণিজ্যমন্ত্রী