সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনায় সড়ক পরিবহন ও
সেতুমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি এ কথা বলেন।
মোশাররফ বলেন, “বিএনপির প্রধানমন্ত্রী কে হবেন- ওবায়দুল কাদের বলেছেন। তিনি দেখতে পারছেন না। বাংলাদেশের
প্রত্যেকটা মানুষ পরিষ্কার জানে যে, বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় আসবে ইনশাল্লাহ।
“ক্ষমতায় আসলে
আমাদের তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আছেন, তিনিই দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। ওবায়দুল কাদের আমাদের
প্রধানমন্ত্রী কে- তা দেখতে পান
না। আমরা আজকে পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করলাম
আমাদের প্রধানমন্ত্রী কে? আমাদের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।”
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে তিনি বলেন, “জার্মানির ডয়চে ভেলেতে এক সাক্ষাৎকার দিয়ে বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) বলেছেন, তিনি আর প্রধানমন্ত্রী হতে চান না।
“তিনি ব্যাখ্যা
দিয়ে বলেছেন, তিনি চার বার
প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন- ‘আমি আর প্রধানমন্ত্রী হতে চাই না’। আমি ওবায়দুল কাদেরকে বলতে চাই, শেখ হাসিনা বলেছেন- আর তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে চান না।
“ওবায়দুল কাদের
বা আওয়ামী লীগ আপনারা যদি এবারে না পারেন,
আর ১০ বছর পর ক্ষমতায় আসেন; কে আপনাদের প্রধানমন্ত্রী হবেন? বলেন। সব ধরনের কু-বুদ্ধি আপনারা ব্যবহার করে ফেলেছেন, আর কোনো কু-বুদ্ধি কাজে দেবেন না এই দেশে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য এসময় আগামী নির্বাচন নিয়ে
দলের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।
“আমরা বলেছি, শেখ হাসিনার অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। আমরা শুধু এখন নই, সারা বাংলাদেশের মানুষ বলেছে- যাবে না, বিভিন্ন
রাজনৈতিক দল বলছে- যাবে না।
“এটা পরিষ্কার। আমরা কি বসে থাকব? অবশ্যই না। আমরা বলছি,
এই সরকারকে হটাব। যদি তাদের বোধোদয় না হয়, তাহলে তাদেরকে হটাব। হটানোর জন্য রাজপথই একমাত্র বিকল্প- এটা আমরা ঘোষণা করেছি।”
সরকারের উদ্দেশে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আপনারা শ্রীলঙ্কার দিকে তাকান। এখন আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন এবং
সংসদ বাতিল করেন। একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের রাস্তা পরিষ্কার করে দেন।
“তাহলে হয়ত জনগণ
আপনাদের উপরে দয়াও করতে পারে। …কিন্তু আমাদের এই পরামর্শ ওনারা শুনবেন না। কারণ চোরে শোনে
না ধর্মের কাহিনী। এই শ্রীলঙ্কা দেখার পরেও
কিন্তু তাদের বোধোদয় হবে না।”
সরকার পরিবর্তন নিয়ে ‘রাস্তায় ফয়সালা’ হলে এবং দেশে শ্রীলঙ্কার মতো কোনো অবস্থা সৃষ্টি হলে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে
বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“যদি এখন আপনারা ক্ষমতা ছেড়ে না দেন, এদেশের মানুষের কাছে ক্ষমা না চান, সংসদ বাতিল না করেন;
তাহলে তো জনগণকে রাস্তায় নেমে করতে হবে। আমাদের অতীতে রেকর্ড
আছে, আমরা
মুক্তিযুদ্ধে এদেশ স্বাধীন করেছি। এদেশের জনগণ পারে- অতীতে প্রমাণ করেছে, ইনশাল্লাহ আগামীতেও পারবে।”
‘পি কে হালদারের
পেছনে সরকারের হাত আছে’
বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার হালদার
ওরফে পি কে হালদারের অর্থ পাচারের পেছনে ‘সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হাত’ রয়েছে
বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন খন্দকার মোশাররফ
হোসেন।
তিনি বলেন, “ছয় হাজার কোটি টাকা সে আত্মাসাৎ করে ফেলল বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে। আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের
অর্থনৈতিক বিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা আছে, আমাদের আইন আছে, অডিট আছে। এতো টাকা কিভাবে সে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে
আত্মাসাৎ করল?
“… সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যদি সহযোগিতা না থাকে তাহলে এক
ব্যক্তির পক্ষে কয়েকজন আত্মীয়স্বজন নিয়ে ৬ হাজার
কোটি আত্মসাৎ এবং বিদেশে পাচার করা সম্ভব নয়। এর পেছনে করা রয়েছে, কারা সহযোগিতা করেছে?”
এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার
আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আজকে দাবি করছি, এই পি কে হালদার নয় শুধু, পিকে হালদারের যারা সহযোগী ছিল, যারা তাদের প্রভু,
যাদের হয়ে পি কে হালদার কাজ করছে, সকল কিছু পরিষ্কার করে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
অর্থ
পাচারকারীদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়ে খন্দকার
মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমাদের প্রশ্ন- পি কে হালদার কি একজন? একজন পি কে হালদারকে আমাদের সামনে দেখানো হচ্ছে, যাতে করে আমরা বলি- এই সরকার অনাচারকারী-পাচারকারীদের ধরছে।
এই যে সুইস ব্যাংকে এতো লক্ষ-কোটি টাকা… বাংলাদেশ থেকে প্রকাশ করছে যে, কারা কারা, ওমুক ওমুক প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি সংস্থাও প্রকাশ করছে যে, এরা এসব টাকা
পাচার করেছে। কানাডায় বেগমপাড়ায়, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম সবকিছু সরকারের জানা আছে। কিন্তু
প্রকাশ পাচ্ছে না।”
গণতন্ত্র ফোরামের উদ্যোগে ‘চলমান সংকট নিরসনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের গুরুত্ব’ শীর্ষক এ আলোচনাসভা হয়।
সংগঠনের সভাপতি ভিপি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বিলকিস ইসলাম, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন।