সড়ক দুর্ঘটনায় শনিবার রাতে ওপাড়ে পাড়ি জমান ৪৬ বছর বয়সী সাইমন্ডস। দুইবারের বিশ্বকাপজয়ী এই ক্রিকেটারের মৃত্যুতে শোকাহত পুরো ক্রিকেট বিশ্ব।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুতে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি সাইমন্ডস। তাই তখন দলে-আসা যাওয়ার মধ্যে থাকতে হয়েছিল তাকে। সুযোগ যেগুলো এসেছিল, কাজে লাগাতে পারেননি ঠিকভাবে।
১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রাখা সাইমন্ডস নিজের প্রথম ৫৪ ওয়ানডেতে ফিফটি করতে পেরেছিলেন স্রেফ দুটি। তখন তার ব্যাটিং গড় ছিল কেবল ২৩.৮১।
কিন্তু তার ওপর আস্থা হারাননি পন্টিং। ফর্মহীনতায় থাকা সতীর্থকে দলে রাখতে তাকে লড়তে হয় নির্বাচকদের সঙ্গে। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের দলে সাইমন্ডসকে রাখা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সেটা বাড়তি মাত্রা পেয়েছিল আসরের প্রথম ম্যাচেই তাকে একাদশে রাখার পর।
সেই সময়ের অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক পন্টিংয়ের জেদেই মূলত পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে পারেন সাইমন্ডস। দলপতির আস্থার প্রতিদানও দেন তিনি। ৮৬ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ভীষণ বিপদে পড়া দলকে টানেন একাই। ছয়ে নেমে ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আখতার, আব্দুল রাজ্জাকদের বিপক্ষে খেলেন ১২৫ বলে ১৪৩ রানের অসাধারণ ইনিংস। যেটা ছিল তার ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি।
এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি সাইমন্ডসকে। অস্ট্রেলিয়ার অপরাজিত থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার ওই আসর শেষ করার পথে বড় অবদান রাখা সাইমন্ডস সেমি-ফাইনালে আবারও দলের ত্রাতা ছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটিতে খেলেছিলেন ৯১ রানের অপরাজিত ইনিংস। ২০০৭ বিশ্বকাপজয়ী পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া দলেও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি।
দুর্দান্ত এক ক্রিকেটার হলেও মাঠের ভেতরে-বাইরে বিতর্ক সাইমন্ডসের নিত্যসঙ্গী ছিল। মাতাল হয়ে মাঠে আসা, টিম মিটিং বাদ দিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া; এসব কারণে পড়েছিলেন নিষেধাজ্ঞার মুখে। একের পর এক বিতর্কে না জড়ালে তার ক্যারিয়ার আরও দীর্ঘ হতো নিশ্চিতভাবেই।
সুশৃঙ্খল না হলেও পন্টিংয়ে নজরে মানুষ হিসেবে সাইমন্ডসের জুড়ি ছিল না। পন্টিংয়ের টুইটে ফুটে উঠেছে পুরনো সতীর্থ ও বন্ধুর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা।
“রয় হাত মেলানো মানেই তার কথা দেওয়া। সে এমন একজনই ছিল, আর এই কারণেই আমি সবসময় তাকে আমার দলে চাইতাম। অসাধারণ একজন খেলোয়াড় ছিল সে, মানুষ হিসেবে ছিল আরও ভালো। বিশ্বাস করতে পারছি না সে চলে গেছে। এই কঠিন সময় তার পরিবারের জন্য সমবেদনা।”
সাইমন্ডসের দৃঢ়চেতা মানসিকতা ও সবটুকু দিয়ে জেতার চেষ্টা করা বেশ ভালো লাগত তার সতীর্থ ও বন্ধু অ্যাডাম গিলক্রিস্টের। এসইএন-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় সাবেক এই কিপার-ব্যাটসম্যান ফুটিয়ে তুলতে চাইলেন সাইমন্ডসের ক্রিকেট নিয়ে ভাবনা।
“সে প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা এক মানুষ ছিল, যা সবাইকে খুশি করত। খেলাটির প্রতি সাইমোর আবেগ ছিল খাঁটি। তার কাছে বিষয়টি ছিল খুব সহজ; খেলছ মানেই তুমি এটা উপভোগ করছ, কঠোর পরিশ্রম করো, তারপর যা হয় হবে- জয়, পরাজয় কিংবা ড্র।”
পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০০৩ বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচে সাইমন্ডসের ওই ইনিংসটি এখনও স্মৃতিতে তরতাজা গিলক্রিস্টের।
“আমরা খুব বিপদে পড়েছিলাম। ৮০ বা এমন কিছু রানে আমরা ৪ উইকেট হারানোর পর রয় উইকেটে যায় এবং দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে আমাদের উদ্ধার করে। সেটা ছিল বিশ্বকাপে আমাদের অপরাজেয় পথচলার শুরু। রয়ের ওই ইনিংসটি ছাড়া ওই ম্যাচে (আমাদের) কী হতো কে জানত, সে সুর বেঁধে দিয়েছিল।”
প্রায় ১১ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১৯৮ ওয়ানডে খেলে সাইমন্ডসের রান ৫ হাজার ৮৮। সেঞ্চুরি ৬টি, ফিফটি ৩০টি। ব্যাটিং গড় ৩৯.৭৫। তবে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের কারণে যে তিনি ‘স্পেশাল’ ছিলেন, তা খানিকটা ফুটে ওঠে তার স্ট্রাইক রেটে, ৯২.৪৪। বল হাতে উইকেট ছিল ১৩৩টি।
টেস্ট খেলেছেন ২৬টি। ২ সেঞ্চুরি ও ১০ ফিফটিতে ১ হাজার ৪৬২ রান করেছেন ৪০.৬১ গড়ে। উইকেট নিয়েছেন ২৪টি। টি-টোয়েন্টির তখনও কেবল শুরুর সময়। ম্যাচ খেলতে পেরেছেন ১৪টি। ৪৮.১৪ গড় ও ১৬৯.১৪ স্ট্রাইক রেটে রান তার ৩৩৭, উইকেট ৮টি।